Advertisement
০২ মে ২০২৪

ভোল পাল্টে ক্ষমা চাইছেন দোরে দোরে

ঘরোয়া ও কাছের মানুষ ভাবমূর্তি গড়তে এত দিন জিন্‌স আর ছাই রঙা টি-শার্ট ছিল ফেসবুকের কর্তার অফিসের পোশাক।

জুকেরবার্গ: যা ছিলেন। যা হয়েছেন। ফাইল চিত্র এবং এএফপি

জুকেরবার্গ: যা ছিলেন। যা হয়েছেন। ফাইল চিত্র এবং এএফপি

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫৫
Share: Save:

সব দোষ কবুল করে ফের ক্ষমা চাইলেন মার্ক জুকেরবার্গ। এ বার মার্কিন কংগ্রেসের কাছে চিঠি পাঠিয়ে। শুধু তা-ই নয়, সেখানে তাঁকে যাঁদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে, তাঁদের বেশ কয়েক জনের দোরে দোরে ঘুরে ক্ষমাভিক্ষা করলেন কাল দিনভর। তদন্ত কমিটির কাছে হাজির হওয়ার আগেই তদন্তকারীদের সঙ্গে এ ভাবে দেখা করাকে মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না অনেকে। প্রশ্ন উঠেছে তাঁর ‘অভিসন্ধি’ নিয়ে।

ঘরোয়া ও কাছের মানুষ ভাবমূর্তি গড়তে এত দিন জিন্‌স আর ছাই রঙা টি-শার্ট ছিল ফেসবুকের কর্তার অফিসের পোশাক। কাল কিন্তু সেই ‘কুল’ ও ‘ক্যাজুয়াল’ পোশাকে নয়, মার্ককে দেখা গেল গাঢ় স্যুট আর টাইয়ে। পোশাকের ভাষাই বলছে, বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্কট কাটাতে কতটা মরিয়া তিনি। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা-কাণ্ডে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেল থেকে (ভারতে শেষ রাতে) ক্যাপিটল হিলে শুরু হবে শুনানি। প্রথমে সেনেটের বাণিজ্য ও বিচারবিভাগীয় কমিটি, পর দিন মার্কিন কংগ্রেসের শক্তি ও বাণিজ্য কমিটিতে হাজির হতে হবে তাঁকে। এই দ্বিতীয় কমিটিই আজ মার্কের চিঠির বয়ান প্রকাশ করে দিয়েছে। মার্ক লিখেছেন, ‘সমাজের প্রতি আমাদের যে দায়বন্ধতা, তাকে খাটো করে দেখাটাই ভুল হয়েছে। সব দোষ আমার। আমি দুঃখিত।’

প্রশ্ন উঠেছে, তদন্তের আগেই সেনেট-কমিটির নেতাদের দরজায় দরজায় ঘুরে ক্ষমা চাওয়াটা কী নৈতিক কাজ? এটা কি তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা নয়? ফেসবুক বলছে, এটা নিছকই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’। জুকেরবার্গ নিজে কিছুই বলছেন না।

ফেসবুকের দাবি, তথ্য সুরক্ষায় ও ভোটের হাতিয়ার না হওয়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই তারা বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে। এবং করছে। রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন, নানাবিধ জনপ্রিয় পেজের উপরে নিয়ন্ত্রণ চাপানো হচ্ছে। এমনকি, ভোট-প্রভাব খতিয়ে দেখতে তারা নিজেরাই নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন বসাতে চায়। বরাবরের মতো এ বারেও জুকেরবার্গের আশ্বাস, ‘‘নিজেদের লাভের খাতা মোটা করার থেকেও নেটিজেনদের তথ্য নিরাপদ রাখাটাই আমাদের প্রাধান্য।’’

কিন্তু বাস্তব বলছে অন্য কথা। ফেসবুক থেকে তথ্য-চুরির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যার জন্য ২০০৬ থেকে ২০১১-র মধ্যে বছরে অন্তত এক বার করে ক্ষমা চেয়েছেন জুকেরবার্গ। বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসও বেশ কয়েক বার তলব করেছিল তাঁকে। নানা ভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এ বারের অ্যানালিটিকা-কাণ্ডে মুখ পোড়ার পরে যেতেই হচ্ছে তাঁকে। বেকায়দায় পড়ে ইতিমধ্যেই ফেসবুক কবুল করেছে প্রায় ৯ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে। দুই মার্কিন কমিটির কাছে জুকেরবার্গ সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারলে, ফেসবুকের উপরে কড়া নিয়মের খাঁড়া নেমে আসতে পারে। সেটা রুখতেই ফের সেই ক্ষমাভিক্ষার পথে সদাহাস্যমুখ তরুণটি। দু’এক সপ্তাহ বা মাস নয়, নিজেদের শোধরাতে এক ধাক্কায় সময় চেয়েছেন কয়েক বছর!

ক্ষমা চাইতে মার্ক কাল প্রথম গিয়েছিলেন বিল নেলসনের কাছে। উত্তরে ফ্লরিডার ডেমোক্র্যাট সদস্য বিল সেনেটের বাণিজ্য বিষয়ক কমিটির নেতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘চেষ্টায় ত্রুটি রাখছেন না জুকেরবার্গ। কিন্তু আমার সন্দেহ আছে। এ বারে অন্তত তাঁকে চেপে না-ধরলে নেটিজেনদের ব্যক্তিপরিসর বলে কিছুই থাকবে না।’’ সংবাদমাধ্যমের দাবি, জুকেরবার্গ কাল রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট মিলিয়ে অন্তত আরও চার জন সেনেটরের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা কেউ সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেননি।

কংগ্রেসকে লেখা চিঠিতে মার্ক লিখেছেন, ভোটে রুশ প্রভাবের কথা বুঝতে দেরি হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। অ্যানালিটিকা-কাণ্ড আর হবে না। ভুয়ো খবরের রমরমা, উস্কানিমূলক মন্তব্যে পরোক্ষে হিংসা ছড়ানো নিয়েও ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। কূটনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, কংগ্রেস এতে কিছুটা নরম হলেও হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mark Zuckerberg Facebook video
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE