Advertisement
E-Paper

এই ভোট কি ফিরিয়ে দেবে চেনা আমেরিকাকে

এই আমেরিকাকে আমরা চিনি না।

শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৪৯
স্বাধীনতা: নিউ ইয়র্কের রাস্তায় দেওয়ালচিত্র। এএফপি

স্বাধীনতা: নিউ ইয়র্কের রাস্তায় দেওয়ালচিত্র। এএফপি

এই আমেরিকাকে আমরা চিনি না।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে মনে হয় এটাই এখন অভিবাসীদের আপ্তবাক্য! চেনা আমেরিকায় গণতন্ত্রটা খানিক বাঁধা পথে চলে। যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা সব সময় হাউসে বা সেনেটে সংখ্যাগুরু হয় না। তাই সরকার সতত যা খুশি তাই করতে পারে না। ‘বহুস্বর’ বলে একটা বস্তু থাকে, জনগণের রক্ষাকবচ হিসেবে।

কিন্তু এ বার সেই চিরচেনা মার্কিন মুলুকে অচেনার পরশ লেগেছে। আর পাঁচটা ভোটের মতোই এ বাও প্রশ্ন উঠেছে, ‘কে জিতবে’? কিন্তু এ বার এই প্রশ্নটা আর ‘রাজনৈতিক’ নেই, হয়ে উঠেছে ‘সামাজিক’!

দু’বছর বাদে মার্কিন রাজনীতি বা প্রশাসন কোন পথে চলবে, তার একটা আনুমানিক বার্তা দেয় এই মধ্যবর্তী নির্বাচন। কিন্তু এ বার বিষয়টি তার থেকে অনেক বেশি গুরুতর। এ বারের ‘সেমিফাইনাল ইলেকশন’ বলে দেবে, মার্কিন সমাজ কোন পথে যাবে! এই ভোট এ বার ঠিক করে দেবে যে, আমেরিকার জাত্যভিমানটা আসলে কী— ঔদার্য্য না অহংকার? আমেরিকা দেশটা আসলে কাদের, স্বার্থপরদের নাকি পরার্থপরদের?

কেন বললাম আমেরিকাকে আজকাল বড় অচেনা ঠেকছে, সেটা একে একে বলি। আগের আমেরিকায় মানুষের মনে ‘রাজনৈতিক মেরুকরণ’-এর ঝোঁকটা তেমন প্রকট ছিল না। অনেকেই রাজনীতি ভুলে নিজেদের বিচারে ভদ্র-সভ্য-দক্ষ এক জনকে পছন্দের প্রার্থী হিসেবে বেছে নিতেন। কিন্তু হালের আমেরিকায় প্রকট হয়ে উঠছে সেই ‘আমরা-ওরা’! এতদিনের আমেরিকায় প্রার্থী থেকে কর্মী, সকলে ভোটের প্রচারে একটা রাজনৈতিক সৌজন্য বজায় রেখে চলতেন। এখন

আমেরিকায় প্রচারের নামে, নারীপুরুষ নির্বিশেষে, বেশির ভাগ প্রার্থী একে অপরের দিকে যে সব বাক্যবাণ তাক করছেন, সেগুলিকে ব্যক্তিগত খিস্তিখেউড় বলে চালানো যেতেই পারে। একদা আমেরিকা ছিল প্রকৃত অর্থে আন্তর্জাতিক, বিবিধের মাঝে মহান মিলন! আর এখনকার আমেরিকা

ভাবতে শুরু করেছে, ‘বাইরে থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে সবাই লুটেপুটে খাচ্ছে’! এ কোন আমেরিকা!

আমেরিকা যে এত দিন আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে, সেটা কিন্তু বিত্ত-বৈভবের জোরে নয়, সভ্যতার শক্তিতে। সেই আমেরিকাতেই কিনা তথাকথিত ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড সিম্পটম’-এর সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে! আর ওই ‘রোগগ্রস্ত’ নেতাদের কথা কারা মন দিয়ে শুনে প্রকাশ্যে বাহবা দিচ্ছেন? মার্কিনরাই! আর সেটা বুঝতে পেরে ওই নেতারা খুল্লমখুল্লা হিংসুটে কথাবার্তা বলেই চলেছেন। সব চেয়ে বিপজ্জনক ব্যাপার হল, ওই নেতা আর তাঁদের সমর্থকেরা যে এই নির্লজ্জ সাহসটা পাচ্ছেন, সেটা কার জন্য! একজন ‘অজ্ঞাতকুলশীল’ রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য! যিনি গলা উঁচিয়ে বলছেন, এ দেশে জন্মালেই মার্কিন নাগরিকত্ব দিতে হবে কেন! তিনি বলছেন, বাইরের লোক এসে আমেরিকার সব চাকরি কেড়ে নিচ্ছে! এবং তিনিই, আমেরিকার প্রথম ও একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি বললেন, আমেরিকা শুধুই মার্কিনদের জন্য। এটা কোন আমেরিকা? এটা আমাদের সেই চেনা আমেরিকা নয়।

সে কালের আমেরিকায় যে মূর্তিটা ছিল ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’, এখন সেটা একটা মস্করা মাত্র। এখনকার আমেরিকা হল ‘হোয়ার লিবার্টি ইজ় এ স্ট্যাচু’! আমেরিকার মতো একটা ঐতিহাসিক ভাবে এগিয়ে থাকা রাষ্ট্র এখন ধর্মের ভিত্তিতে পৃথিবীর সাতটা দেশের বিমানবন্দরকে ‘একঘরে’ করে দিতে চাইছে। রাষ্ট্রের নীরব প্ররোচনায় মার্কিনরা এখন বলছেন, আমরা গর্বের সাথে রক্ষণশীল (অর্থাৎ গর্বের সাথে মৌলবাদী!) রাষ্ট্রের চোরা ইন্ধনে মার্কিনরা এখন মানুষকে দেখার আগে মানুষের গায়ের রং দেখছেন। রাষ্ট্রের চেলাচামুণ্ডারা এখন মার্কিন বিমানবন্দরের দাঁড়িয়ে গুনছেন, কোন দেশ থেকে কোন ধর্মের ক’জন লোক আমেরিকাতে ঢুকছে!

এই আমেরিকাকে আমরা চিনি না। আমরা আমাদের চেনা আমেরিকাকে ফিরে পেতে চাই। এ বারের ভোট তাই রাজনৈতিক নয়, সামাজিক। এ বারের মধ্যবর্তী নির্বাচন ঠিক করে দেবে ভবিষ্যতে কে টিকে থাকবে— চেনা আমেরিকা না অচেনা আমেরিকা? আশা করি, এ বারের মধ্যবর্তী নির্বাচন হাতেকলমে দেখিয়ে দেবে যে, পশ্চিমের আকাশে সিঁদুরে মেঘ জমছে, সতর্ক হতে হবে। আশায় রয়েছি যে এ বারের মধ্যবর্তী নির্বাচন ওই সাদাবাড়িটাকে সমঝে দেবে, নগরে আগুন লাগলে কোনও ধর্মস্থানই রক্ষা পায় না, পুড়ে খাক হয়ে যায়! আর কে না জানে, জলের গতি যেমন সদা নিম্নদিকে ধায়, আগুনের স্বভাব তেমন সব কিছু পোড়ায়!

USA Midterm Midterm election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy