Advertisement
০২ মে ২০২৪

হাঙ্গেরি পৌঁছেই ফিরতি বাসে ক্রোয়েশিয়ায়

সীমান্ত থেকে সীমান্তে যাতায়াতই সার। বন্ধ প্রায় সব দরজাই। কেউ চাইছে না শরণার্থীদের। ক্রোয়েশিয়া ঠেলছে হাঙ্গেরির দিকে। ফিরতি পথ দেখাচ্ছে হাঙ্গেরিও। এরই মধ্যে ফের নৌকাডুবি। আবারও শিশুমৃত্যু।

পথে পথে। আশ্রয়ের খোঁজে শরণার্থী পরিবার। শনিবার সার্বিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে। ছবি: এএফপি।

পথে পথে। আশ্রয়ের খোঁজে শরণার্থী পরিবার। শনিবার সার্বিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
আথেন্স শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৪৪
Share: Save:

সীমান্ত থেকে সীমান্তে যাতায়াতই সার। বন্ধ প্রায় সব দরজাই। কেউ চাইছে না শরণার্থীদের। ক্রোয়েশিয়া ঠেলছে হাঙ্গেরির দিকে। ফিরতি পথ দেখাচ্ছে হাঙ্গেরিও। এরই মধ্যে ফের নৌকাডুবি। আবারও শিশুমৃত্যু। গত কালের মতো আজও গ্রিসের উপকূলকর্তী এলাকা থেকে এক সিরীয় শিশুকন্যার দেহ মিলেছে। বয়স, পাঁচের বেশি নয়। অনুমান, তুরস্ক থেকে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে যাওয়ার পথেই দুর্ঘটনার মুখে পড়ে শরণার্থীদের একটি দল। ডুবন্ত নৌকা থেকে ১১ জনকে উদ্ধার করা গেলেও, এখনও নিখোঁজ ১৩।

স্থানীয় সূত্রের খবর, যুদ্ধবিধ্বস্ত তুরস্ক থেকে গ্রিস কিংবা হাঙ্গেরির উদ্দেশে পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে এরই মধ্যে অন্তত ৭৫ জন শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা কেউ পাকিস্তান, আফগানিস্তান কিংবা সিরিয়া, লিবিয়ার নাগরিক। গত রবিবারও তুরস্ক থেকে গ্রিসের ফারমাকোনিসি দ্বীপে আসার পথে নৌকাডুবিতে প্রাণ যায় ৩৪ জনের। যার মধ্যে ১৫টি শিশু ছিল বলে দাবি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের।

ইউরোপ অবশ্য জোর গলায় বলতে চাইছে, তারা উদ্ধারকাজে এগিয়ে না এলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ত। ইতালির উপকূলরক্ষী বাহিনী যেমন আজই দাবি করেছে, আটটি পৃথক উদ্ধার অভিযানে লিবিয়ার উপকূল থেকে তারা সম্প্রতি ২,২০০ শরণার্থীকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু এ বার? কোথায় যাবেন তাঁরা? ফের একটা নৌকায় উঠতে সায় দিচ্ছে না মন। আবার নিজের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ফেরারও উপায় নেই। আশ্রয়ের আশায় উদ্বাস্তুরা তাই সব দিক থেকেই অথৈ জলে।

কারণ একটাই। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশই শরণার্থী সঙ্কট সামাল দেওয়ার চেয়ে পারস্পরিক চাপানউতোরেই বেশি ব্যস্ত বলে অভিযোগ। ‘উটকো ঝামেলা’ ঘাড়ে নিতে চাইছে না কোনও দেশই। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে অনেক আগেই হাত তুলে নিয়েছে গ্রিস। সীমান্তে আজ থেকেই কড়াকড়ি শুরু করেছে ফিনল্যান্ড। হাঙ্গেরি আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে। প্রায় রাতারাতি আরও উঁচু হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। সার্বিয়ার দিকে সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ। জরুরি অবস্থাও জারি করেছে সে দেশের প্রশাসন। দিন কয়েক বিক্ষোভ-অনশনও চালিয়েছিলেন শরণার্থীরা। কিন্তু তাতেও বরফ গলেনি। বরং ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয় সার্বিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তে। বাধ্য হয়েই হাঙ্গেরির মায়া কাটিয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেন উদ্বাস্তুরা।

প্রাথমিক সাড়া মেলে ক্রোয়েশিয়া আর ডেনমার্কের তরফে। আন্তর্জাতিক চাপে পড়েই হাজার খানেক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার কথা ঘোষণা করে ডেনমার্ক। প্রবেশের অনুমতি দেয় ক্রোয়েশিয়াও। তবে সিরীয় উদ্বাস্তুদের একাংশ দাবি করতে থাকেন, তাঁরা ক্রোয়েশিয়ার কাছে আশ্রয় চাইছেন না। বরং এই দেশ হয়ে তাঁরা আসলে জার্মানি, অস্ট্রিয়া অথবা ডেনমার্কে পৌঁছতে চাইছেন।

এ বার তাতেও বিপত্তি। বেঁকে বসেছে ক্রোয়েশিয়া। সূত্রের খবর, হাজার হাজার শরণার্থীকে এ বার তারা স্লোভেনিয়া আর হাঙ্গেরির দিকে ঠেলছে। আর হাঙ্গেরি ব্যস্ত তাদের অস্ট্রিয়ার রাস্তা দেখাতে। অভিযোগ, কোনও রকম রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই শরণার্থীদের বাস আর ট্রেনে বোঝাই করে হাঙ্গেরি পাঠাচ্ছে ক্রোয়েশিয়া।

কিন্তু কেন? ক্রোয়েশিয়ার দাবি, গত চার দিনে ২০ হাজারের বেশি শরণার্থী ঢুকেছে দেশে। তাই পরিস্থিতির সামাল দিতেই তাদের এই পদক্ষেপ বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী জোরান মিলানোভিচ বলেন, ‘‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। চাইছি হাঙ্গেরিও পাশে দাঁড়াক শরণার্থীদের।’’ তবে দু’দেশের মধ্যে এই সংক্রান্ত কোনও চুক্তি হয়নি বলে জানান তিনি। কিন্তু শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে হাঙ্গেরির উপর ক্রোয়েশিয়া ক্রমশই চাপ বাড়াচ্ছে বলে সূত্রের খবর।

হাঙ্গেরির অবস্থান অবশ্য তাতেও বদলায়নি। সিরীয় এক প্রৌঢ় যেমন বললেন, ‘‘এক বাস থেকে নামছি, আর অন্য বাসে উঠছি। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি— কিছুই মাথায় ঢুকছে না।’’ তাঁর অভিযোগ, সীমান্তে পৌঁছনো মাত্রই পুলিশ-সেনা দিয়ে তাদের ফিরতি বাসে ওঠাচ্ছে হাঙ্গেরি। আর ক্রোয়েশিয়াকে পাল্টা প্যাঁচে ফেলার ছক কষছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant crisis Hungary Croatia trade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE