Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

চ্যালেঞ্জ ও জাদুকাঠি নিয়ে মার্কিন দেশে মোদী

তিনি যেখানেই পা রাখুন, দুবাই হোক বা নিউ ইয়র্ক, নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই। এ বার আমেরিকাতেও তার ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু আবেগের এই পর্দা সরিয়ে বাস্তবতার যে জমি, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে, এখন তিন তিনটি বড়সড় চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই মার্কিন মুলুকে সফর শুরু করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

নিউ ইয়র্কে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকের আগে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিউ ইয়র্কে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকের আগে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:০০
Share: Save:

তিনি যেখানেই পা রাখুন, দুবাই হোক বা নিউ ইয়র্ক, নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই। এ বার আমেরিকাতেও তার ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু আবেগের এই পর্দা সরিয়ে বাস্তবতার যে জমি, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে, এখন তিন তিনটি বড়সড় চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই মার্কিন মুলুকে সফর শুরু করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

মোদীর বিমান নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের মাটি ছোঁয়ার পর থেকেই আজ প্রত্যাশিত ভাবে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রবাসী ভারতীয়রা। গুজরাতি সম্প্রদায়ের অনেকেই মোদীর সঙ্গে দেখা করেন। তবে সংরক্ষণের দাবি নিয়ে পটেল সম্প্রদায়ের জনাকয়েক বিক্ষোভকারী হোটেলের বাইরে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এলেও বিশেষ ছাপ রাখতে পারেনি। এই পর্ব মিটে যেতেই শুরু হয়েছে মোদীর আসল কাজকর্ম। আর সেখানে অবধারিত ভাবেই প্রবল চাপের মুখোমুখি হতে চলেছেন তিনি।

চ্যালেঞ্জ ১-সংস্কার

অনেক আশা নিয়ে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ঘরোয়া রাজনীতির চাপ আর রাজ্যসভায় সংখ্যার অঙ্কে কার্যত ল্যাজেগোবরে হওয়া মোদী সরকার আর্থিক সংস্কারের বিলগুলি নিয়ে এগোতে পারেনি। জিএসটি কিংবা জমি বিল— সবটাই এগিয়ে গিয়ে পিছিয়ে আসার গল্প। অনেকেই মনে করছেন, এ বার এই ধাক্কা নিয়েই মার্কিন দেশে বারবার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে মোদীকে। আজ আমেরিকায় বিভিন্ন শিল্পসংস্থার সিইওদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী। শিল্প সংস্থার কর্তাদের সামনে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-ভাবনাকে তুলে ধরেন। কিন্তু সেখানেও দেশের মাটিতে থমকে থাকা আর্থিক সংস্কার তাঁকে তাড়া করেছে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন আমেরিকার শিল্পপতিরা। মোদী তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন যে জটিলতার সৃষ্টি হলে তা কাটানোর চেষ্টা করবেন তিনি। বাণিজ্য সহায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে বিশ্বব্যাঙ্কের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে ভারতের জায়গা হয়েছে ১৪২ নম্বরে। শিল্পপতিরা আজ এ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তবে সংস্কারের জন্য মোদী সরকারের সদিচ্ছার প্রশংসা করেন তাঁরা। দেশের ৫০০টি রেলস্টেশনের ছবি বদলে দিতে মার্কিন বিনিয়োগে চেয়েছেন মোদী। জানিয়েছেন, আবাসন, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে মার্কিন বিনিয়োগের জমি প্রস্তুত রয়েছে। তবে সংস্কার নিয়ে এই বৈঠকে যেমন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে আলোচনাতেও একই ভাবে চাপে থাকবেন মোদী। বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ বিদেশি লগ্নির দরজা খোলা হলেও মার্কিন সংস্থাগুলিকে ভারতে নিয়ে আসতে বিশেষ কোনও কাজ হয়নি। ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির পরে এ দেশের মাটিতে এখনও এগোতে পারেনি মার্কিন সংস্থাগুলি। ২৮ তারিখ নিউ ইয়র্কে ওবামা-মোদী বৈঠকে এগুলি বড় বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

চ্যালেঞ্জ ২- তথ্যপ্রযুক্তি

সিলিকন ভ্যালিতে বড়সড় অভ্যর্থনা অপেক্ষা করে রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য। ২৬ সেপ্টেম্বর গুগলের ক্যাম্পাসে বৈঠক। ২৭শে ফেসবুকের সদর দফতরে মার্ক জুকেরবার্গের সঙ্গে মোদীর যৌথ প্রশ্নোত্তর পর্ব। মোদী আমেরিকায় পা রাখতেই ইউটিউবে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন খড়্গপুরের প্রাক্তনী সুন্দর পিচাই। সিলিকন ভ্যালিতে তার ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র স্বপ্ন ফিরি করতে চান মোদী। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ভারতের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত প্রশাসনিক, আর্থিক, শিক্ষা ও সামাজিক কর্মকান্ডকে ডিজিটাল মাধ্যমে জুড়তে চান প্রধানমন্ত্রী। এই সব কাজগুলিতে যাতে গতি আর স্বচ্ছতা আসে, সে জন্য ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’কে পাখির চোখ করেছেন মোদী। ভবিষ্যত ভারতের জন্য তাঁর এই ভাবনা সিলিকন ভ্যালিতেও প্রবল ভাবে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু ভারতের মতো দেশে আজও বিদ্যুতের সঙ্কট, ইন্টারনেটের গতিহীনতার মতো বিষয়গুলি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্নের মুখে ফেলতেই পারে।

চ্যালেঞ্জ ৩ —কূটনীতি

২৪-২৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা ও জাপান-জার্মানী-ব্রাজিলের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে জি-৪-এর বৈঠক। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য পদ পেতে আগ্রহী ভারত দীর্ঘদিন থেকেই এই দাবি নিয়ে বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায় করছে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলি আজও ভারতের পক্ষে সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়নি। তবে আশার কথা, নিরাপত্তা পরিষদের বহর বাড়ানো নিয়ে সম্প্রতি খসড়া প্রস্তাব সামনে এসেছে। এটা যদি আশার আলো হয়, তা হলেও অনেকেই মনে করছেন, ব্যাপারটা শিশুর পথচলার মতো। অর্থাৎ, দ্রুতগতিতে এই ধরণের সিদ্ধান্ত হওয়ার নয়।

হাতে রইল কী?

ভারতীয় কূটনীতিকেরা জানেন, মোদীর সামনে তিনটি চ্যালেঞ্জ যেমন রয়েছে, তেমনি হাতে রয়েছে তিনটি জাদুকাঠিও।

এক, ভারতের বিশাল বাজার।

দুই, মার্কিন দেশে চিনের জুজু।

তিন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকা যৌথ ভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা।

তিনটি চ্যালেঞ্জ ও তিনটি জাদুকাঠি নিয়ে শুরু হয়ে গেল নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফর।

মোদী-হাসিনা বৈঠক

নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছেন দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে বসলেন তাঁরা— নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা। দু’দেশের বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রেখে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ঘরোয়া ভাবে আলোচনা করেছেন। স্থলসীমা চুক্তি রূপায়ণে ইতিমধ্যেই দু’দেশের সীমান্ত নিয়ে ৪১ বছরের মনোমালিন্য অনেকটা ঘুচেছে। তিস্তার জলের বখরা নিয়েও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারবেন বলে দুই নেতা-নেত্রী আশা প্রকাশ করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

US Narendra Modi campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE