রবিবার দুপুরে সল্টলেকের অফিসে বসে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) এক ইনস্পেক্টর ফোনটা পেলেন। দিল্লি থেকে এক কর্তা ফোন করেছেন। তাঁর আফসোস, ‘এত দিন হয়ে গেল, কওসরকে আমরা এখনও ধরতে পারলাম না। বার বার আমাদের হাত ফস্কে একটুর জন্য বেরিয়ে যাচ্ছে। ওকে ধরতে পারলে শুক্রবার রাতে ঢাকার গুলশনে হয়তো এই কাণ্ড হত না।’ সেই সঙ্গে এসপি পদমর্যাদার ওই অফিসারের সতর্কবার্তা, ‘পশ্চিমবঙ্গে কিছু ঘটিয়ে ফেললে আমাদের কিন্তু মুখ পুড়বে।’
কওসর ওরফে বোমারু মিজান, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর এক চাঁই। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত কওসর এখনও ফেরার।
সল্টলেকের আইবি ব্লকের সেক্টর থ্রি-তে এনআইএ-র শাখা অফিসে জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া রবিবার সাধারণত কাজ হয় না। এ দিন অবশ্য বহু অফিসারই হাজির ছিলেন। কারণ, গুলশনের জঙ্গি হামলা।
কিন্তু এমন দিনে কওসরকে ধরতে না পারার আক্ষেপ কেন? এনআইএ-র একটি সূত্রের খবর, গুলশনে হামলার দায় স্বীকার করে আইএস বিবৃতি দিলেও জেএমবি-রই একাংশের সঙ্গে এই হানার প্রত্যক্ষ যোগ আছে। বাংলাদেশের একাধিক সূত্র থেকে এনআইএ জেনেছে, ওই হামলার অন্যতম মূল চক্রী হল এই কওসর, বাংলাদেশে যে জঙ্গি বোমারু মিজান নামে বেশি কুখ্যাত।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আসাদউজ্জামান খান এ দিন দাবি করেছেন, গুলশনে হামলাকারীরা জেএমবি-রই সদস্য।
খাগড়াগড় মামলার তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর পরই কওসরকে ধরার জন্য এনআইএ ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে ঢাকার ঘটনার পর যেনতেন প্রকারে কওসরের হদিস পেতে পুরস্কারমূল্য বাড়াতে চলেছে এনআইএ। ১০ থেকে বাড়িয়ে সেটা ১২ নাকি ১৫ লক্ষ, কতটা করা হবে, সেই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।
এ দিন দিল্লি থেকে এনআইএ-র এক শীর্ষকর্তা আনন্দবাজারকে ফোনে বললেন, ‘‘যা পরিস্থিতি দাঁড়াল, তাতে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় অন্য ফেরারদের চেয়ে কওসরের খোঁজ পাওয়াই বেশি জরুরি। ওর খোঁজে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাচ্ছি আমরা, সব রকম চেষ্টা করা হবে।’’ পুরস্কারের অঙ্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ যার অঙ্গ।
এনআইএ-র দাবি, কওসর ভারতে জেএমবি-র অপারেশনাল কমান্ডার। ২০০৫-এর শেষে সে ওই দায়িত্ব পেয়েছিল।
খাগড়াগড়ের তদন্ত শুরু হওয়া ইস্তক এখনও পর্যন্ত তিন বার মিজানকে ফস্কেছে এনআইএ। প্রথম বার বোলপুরে, ঘটনার আট মাসের মাথায়। একটি ধর্মস্থানে কওসর আছে বলে খবর পাওয়া যায়। গোয়েন্দারা যখন সেখানে পৌঁছন, তার চার দিন আগে কওসর বেরিয়ে গিয়েছে।
গত মার্চে এক দিন হাওড়ার সাঁকরাইলের নাজিরগঞ্জে ও তার দু’দিন পর মেটিয়াবুরুজে তাকে একটুর জন্য ধরতে পারেননি গোয়েন্দারা। মেটিয়াবুরুজে গোয়েন্দারা শোনেন, কওসর একটু আগেই বিচালিঘাট থেকে জলপথে হাওড়ার নাজিরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। কিন্তু কোন নৌকায় সে আছে, সেটা গোয়েন্দাদের বোঝার ভুলে ফের সে ফস্কে যায়। নাজিরগঞ্জের ফেরিঘাটে গোয়েন্দারা ওঁত পেতে থাকলেও লাভ হয়নি।
এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘কওসর জেএমবি-র চাঁইদের মধ্যে সব চেয়ে ধুরন্ধর। মোবাইল ব্যবহার করে না। সংগঠনের বিশ্বস্ত লোককেও গতিবিধি আগাম জানায় না। বেশি লোক ওকে সামনা-সামনি দেখেওনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy