Advertisement
০৪ জুন ২০২৪

এনএসজি কি শাপে বর হল? আত্মসমীক্ষা করব আমরা?

পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী (এনএসজি)-তে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে, সংশয় নেই, বড় ধাক্কা খেল ভারত। এবং অবধারিত ভাবে প্রশ্নটা তুলে দিল, অন্তত এই ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদীর সরকার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে অর্বাচীনতারই পরিচয় দিল না কি?

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৬:৩২
Share: Save:

পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী (এনএসজি)-তে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে, সংশয় নেই, বড় ধাক্কা খেল ভারত। এবং অবধারিত ভাবে প্রশ্নটা তুলে দিল, অন্তত এই ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদীর সরকার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে অর্বাচীনতারই পরিচয় দিল না কি?

বস্তুত, বিদেশনীতির প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে ভারসাম্যের বাঞ্ছনীয় কৌশলের পথ থেকে ক্রমে আরও সরে যেতে শুরু করছিল ভারত, এই সত্যটাকে উপলব্ধি করে এক বার যে আত্মসমীক্ষার পথে যাওয়া দরকার, এনএসজি এই রূঢ় বাস্তবের সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিল।

কী পেলাম আমরা? চিন তাদের এ যাবত্ কালের সুরের সঙ্গেই সঙ্গতি রেখে ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করল। কী ভেবেছিলেন মোদী? শেষ মুহূর্তে চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ জানাবেন তিনি, আর চিন তার কূটনৈতিক যাবতীয় বাধ্যবাধকতা দূরে সরিয়ে সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ফেলবে? ভুলেই যাবে ‘সব ঋতুর বন্ধু’ পাকিস্তানের কথাও?

কী পেলাম আমরা? ‘ব্রিক’ সদস্য ব্রাজিলের বিরোধিতা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক মিত্র নিউজিল্যান্ডের তীব্র আপত্তি এবং মাত্র দিন কয়েক আগেই কথা-দেওয়া সুইত্জারল্যান্ডের কথার খেলাপ। কী প্রমাণ হল? বিশ্বজনীন যে কূটনৈতিক জমি, সেখানে চিন তার শিকড় ক্রমশ আরও গভীরে নিয়ে যাচ্ছে এবং একই সঙ্গে প্রসারিত করে চলেছে সহস্র সহস্র মাইল। ঠান্ডা যুদ্ধ উত্তর পর্যায়ে মার্কিন আধিপত্যের যে অবিসংবাদী ছবিটা ছিল, সেখানে এ বার ছায়া এসে পড়ছে চিনের। এই ‘সুপার পাওয়ার’কে উপেক্ষা করার শক্তি কার?

এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই, গত দু’বছরে নরেন্দ্র মোদী নিজে এবং তাঁর সরকার বিদেশনীতির গম্ভীর পরিসরে প্রথাবহির্ভূত এক গতির সঞ্চার করেছেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত তার অস্তিত্বের সগৌরব ঘোষণাও অধিকতর মাত্রায় করতে প্রয়াসী হয়েছে, সন্দেহের অবকাশ নেই সেখানেও। এ বার, এই এনএসজি পর্বের পর সময় এসেছে আত্মসমীক্ষারও। পাল্টাচ্ছে পরিস্থিতিও। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও নতুন করে এই সমীক্ষার প্রয়োজনীয়তার সামনে দাঁড় করাবে আমাদের।

সেই সমীক্ষা হোক বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে, শক্তিধর চিনের আগ্রাসী মনোভাবকে বুঝে নিয়েই। পশ্চিমের দিকে বন্ধুতার হাত যতটা বাড়িয়েছি আমরা, ততটাই যে বাড়ানো দরকার উত্তর-পূর্বের প্রতিবেশীর দিকেও, এটা বোঝার সময় এসেছে।

তুমি কেমন, তা তোমার বন্ধুদের দেখলেই বোঝা যায়— এই প্রবাদটা, কাকতালীয় হতে পারে, চিন দেশেরই।

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ সরাসরি: ‘মাছ ধরতে শেখানো উচিত’, আক্রমণ দেবজিতের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE