Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফাঁসিতে ক্ষোভ, পাক দূতকে তলব ঢাকার

একাত্তরের গণহত্যার দুই নায়ক সাকা চৌধুরী ও আলি আহসান মহম্মদ মুজাহিদকে বাংলাদেশ সরকার শনিবার ফাঁসি দেওয়ায় ভয়ানক ক্ষুব্ধ পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক রবিবার বিবৃতি দিয়ে বলেছে, দুই নেতাকে ফাঁসি দেওয়ার ঘটনায় তারা খুবই উদ্বিগ্ন।

একাত্তরের গণহত্যার দুই নায়কের ফাঁসির পরে উল্লাস। রবিবার ঢাকায় এপি-র ছবি।

একাত্তরের গণহত্যার দুই নায়কের ফাঁসির পরে উল্লাস। রবিবার ঢাকায় এপি-র ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

একাত্তরের গণহত্যার দুই নায়ক সাকা চৌধুরী ও আলি আহসান মহম্মদ মুজাহিদকে বাংলাদেশ সরকার শনিবার ফাঁসি দেওয়ায় ভয়ানক ক্ষুব্ধ পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক রবিবার বিবৃতি দিয়ে বলেছে, দুই নেতাকে ফাঁসি দেওয়ার ঘটনায় তারা খুবই উদ্বিগ্ন। এ ঘটনা দু’দেশের সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্কের ক্ষতি করবে। শেখ হাসিনা সরকার আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত গড়ে একাত্তরের গণহত্যার আসামিদের বিচার শুরু করার পর থেকেই তার সমালোচনা করে আসছে পাকিস্তান। এ দিনের বিবৃতিতেও পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক এই বিচার পদ্ধতিকে ‘ভুলে ভরা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেছে।

বাংলাদেশ সরকার রবিবারই পাকিস্তানের হাই কমিশনার সুজা আলমকে ডেকে তাদের বিদেশ মন্ত্রকের ওই বিবৃতির লিখিত জবাবদিহি চেয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা আনন্দবাজারকে জানান— পাক হাই কমিশনারকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পাকিস্তানের এই মন্তব্য শিষ্টাচার-বিরোধী। বাংলাদেশের বিচার-ব্যবস্থা নিয়ে তাদের সমালোচনাও এক্তিয়ার বহির্ভূত। পাক দূতকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এক্তিয়ার ছাড়ালে ঢাকা তা সহ্য করবে না।

বিদেশ মন্ত্রকের ওই কর্তা বলেন, পাকিস্তানের দুই ঘনিষ্ট সহযোগীর এই ফাঁসিতে জাতি প্রায়শ্চিত্ত করেছে বলে মনে করছেন অধিকাংশ বাংলাদেশবাসী। এই দুই গণহত্যার আসামি যে ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালিয়েছে, আদালতে তা প্রমাণিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের কাছ থেকে আর কি প্রতিক্রিয়া আশা করা যায়! আগেও তারা বিচার পদ্ধতির সমালোচনা করেছে। বাংলাদেশ সরকার তখনও কড়া ভাবে বলেছিল, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ইসলামাবাদের মন্তব্য অনভিপ্রেত। পাক দূতের কাছে জবাবদিহিও চাওয়া হয়েছিল। এ বারও সরকার একই অবস্থান নিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের ওই কর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক আইনকানুন মেনেই এই আদালত কাজ করছে। আন্তর্জাতিক মহল তাকে মান্যতা দিয়েছে। পাকিস্তান কী বলল, তাতে বাংলাদেশের মানুষের কিছু আসে-যায় না।

ঢাকার সেন্ট্রাল জেলে শনিবার গভীর রাতে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী এবং জামাতে ইসলামির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদকে ফাঁসি দেওয়ার পর কড়া পাহারায় তাদের দেহ আলাদা আলাদা ভাবে চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার জানান, ওই দুই নেতার পরিবারের ইচ্ছেতেই তাঁদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। গ্রামে তাঁদের দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে, তার জন্য গোটা রাস্তায় র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তার পরে রবিবার ভোরেই চট্টগ্রামের রাউজানে সাকা চৌধুরী এবং ফরিদপুরে মুজাহিদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

শনিবার রাতে পাশাপাশি দুই মঞ্চে দু’জনকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর সে খবর ঘোষণা হওয়া মাত্র বাংলাদেশ জুড়ে যেন উত্সব শুরু হয়। গণজাগরণ মঞ্চের নেতা থেকে সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। বিভিন্ন শহরে মিছিল বার হয়। যশোরে মিষ্টি বিলি হয়েছে। চট্টগ্রামে বাজি ফাটিয়ে উল্লাস প্রকাশ করা হয়। সেমবার জামাতে ইসলামি হরতাল ডাকায় গোটা দেশেক সঙ্গে ঢাকার নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আধাসেনাও মোতায়েন করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE