ভাইয়ের হাতে খুন পাকিস্তানের মডেল

বরাবরই বিতর্কিত তিনি। কখনও ফেসবুকে নিজের খোলামেলা ছবি, নিজস্বী, ভিডিও ‘পোস্ট’ করেছেন। কখনও করে বসেছেন আলটপকা মন্তব্য। কখনও আবার নগ্ন হয়ে নাচতে না পারার জন্য কেঁদে ভাসিয়েছেন! শুক্রবার খুন হয়ে গেলেন পাকিস্তানের সেই ২৬ বছরের মডেল কান্দিল বালোচ। অভিযোগের তির মডেলের ভাই ওয়াসিমের দিকে।

শুক্রবার রাতে পঞ্জাব প্রদেশের মুলতানের বাড়িতে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বালোচকে। তার পর থেকেই অভিযুক্ত ওয়াসিম পলাতক। শনিবার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তের পর মনে হচ্ছে, পরিবারের সম্মানরক্ষার্থেই এই খুন। ’’

বালোচের আসল নাম ফৌজিয়া আজিম। মডেলিংয়ের জগতে নাম বদলে কান্দিয়া বালুচি হয়ে যান তিনি। কিন্তু দেশের মানুষের কাছে তিনি পাকিস্তানের কিম কার্দাশিয়ান নামে খ্যাত ছিলেন। বালোচের এই সব কাণ্ড না-পসন্দ ছিল তাঁর পরিবারের। বিশেষ করে বালোচোর ভাই ওয়াসিমের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বালোচের পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘‘বালোচ গোঁড়া মুসলিম পরিবারের মেয়ে। অনেক দিন ধরেই ওঁর ভাই ওঁকে মডেলিং ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু বালোচ তাতে কান দেননি।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, প্রায়ই মডেলিং ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হতো বালোচকে। ওয়াসিমও তাঁকে প্রায়ই হুমকি দিতেন বলে অভিযোগ।

সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, হুমকির মাত্রা এমন চরমে ওঠে যে, তিন সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল এবং ইসলামাবাদের সিনিয়র সুপারিন্টেনডেন্টকে চিঠি লিখে তাঁর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বলেছিলেন বালোচ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারেও তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানে আমি নিরাপদ নই। এমনকী বাড়িতেও না। মোবাইলে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই ইদের পরে বিদেশে চলে যাব ভাবছি।’’ এত কিছুর পরেও কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।

বরাবরই বিতর্ক সঙ্গী ছিল বালোচের। ২০১৪ সালে তাঁর বিস্ফোরক ভিডিও সামনে আসার পরেই সকলের নজর কাড়েন। তার পর থেকেই পাকিস্তানের ‘ইন্টারনেট সেনসেশন’ হয়ে ওঠেন এই মডেল। এর পর একাধিক বার ইমরান খানকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তিনি। আবার অনুষ্কার সঙ্গে বিরাটের ব্রেক-আপের পর বিরাটকে প্রেম নিবেদন করেছেন। টি-২০ বিশ্বকাপ চলাকালীন বালোচ জানিয়েছিলেন, পাকিস্তান জিতলে তিনি নগ্ন হয়ে নাচবেন! কিন্তু পাকিস্তান হেরে যাওয়ায় নগ্ন হয়ে নাচতে না পারার দুঃখে কেঁদে ভাসিয়েছিলেন বালোচ! ইন্টারনেটে সেই ভিডিও পোস্টও করেছিলেন। বালোচের সঙ্গে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরে শীর্ষ ধর্মীয় সংগঠন থেকে সরতে হয়েছিল মুফতি আব্দুল কাভ নামে এক ধর্মগুরুকে।

১৭ বছর বয়সে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। কিন্তু দু’বছরের মধ্যেই ডিভোর্স। ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন বালোচ। এর পরেই মডেলিং-এর জগতে প্রবেশ আর একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়া।