Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
সিরিয়ায় ইরানি সেনা

অব্যাহত হামলা, পেন্টাগনের সঙ্গে সংঘাতে ক্রেমলিন

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় আজও লাগাতার বিমানহানা চালাল রাশিয়া। সেইসঙ্গে সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে রাশিয়া-আমেরিকার মতপার্থক্যে ফের ঠান্ডা লড়াইয়ের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন কূটনীতিকেরা। আসাদ সরকারের হয়ে লড়তে সিরিয়ায় এসেছে কয়েক হাজার ইরানি সেনাও।

সংবাদ সংস্থা
মস্কো ও ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় আজও লাগাতার বিমানহানা চালাল রাশিয়া। সেইসঙ্গে সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে রাশিয়া-আমেরিকার মতপার্থক্যে ফের ঠান্ডা লড়াইয়ের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন কূটনীতিকেরা। আসাদ সরকারের হয়ে লড়তে সিরিয়ায় এসেছে কয়েক হাজার ইরানি সেনাও।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থনে বুধবার সিরিয়ার ময়দানে নেমেই রাশিয়া দাবি করেছিল, এক বছর ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মোকাবিলায় মার্কিন যৌথবাহিনী অভিযান চালালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে, ওবামা সরকারকে এক প্রকার কোণঠাসা করেই আমেরিকার ‘শত্রু’ আসাদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া। আর তাতেই রাতারাতি বদলাতে শুরু করেছে পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমীকরণ। আজ সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যেই পারদ চড়েছে ক্রেমলিন-পেন্টাগনের মধ্যে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক একটি বিবৃতিতে আজকের হামলার কথা জানিয়েছে। পাশাপাশি, মন্ত্রকের টুইটার অ্যাকাউন্টে আপলোড করা হয়েছে বোমাবর্ষণের ছবি। তৈরি হয়েছে #সিরিয়াদিসনাইট নামে নতুন হ্যাশট্যাগ। সিরিয়া প্রশ্নে কোনও মতেই রণে ভঙ্গে দেবেন না বলে ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

সিরিয়া-সঙ্কট প্রশ্নে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনে আমেরিকার নীতি এবং পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন যৌথবাহিনীর প্রসঙ্গে সুর চড়িয়েছিলেন পুতিন। আইএস-কে রোখা নিয়ে একমত হলেও ওবামা-পুতিনের মতপার্থক্য প্রকট হয় আসাদের প্রশ্নে। আমেরিকা মনে করে, আসাদকে না হটালে সিরিয়ার সঙ্কটের সমাধান খোঁজা অসম্ভব। কিন্তু পুতিনের মতে, আইএসের মোকাবিলা করতে হলে আসাদকে পাশে নিয়েই চলতে হবে।

এ দিকে, রাশিয়াকে জমি ছাড়তে নারাজ আমেরিকা আজ সিরিয়ায় বিমানহানার ‘আসল উদ্দেশ্য’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাশিয়ার মূল লক্ষ্য আইএস নয়, বরং আসাদ-বিরোধী বিদ্রোহীদের উপর হামলা করতেই পুতিন সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পেন্টাগন। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের একাংশও একই অভিযোগ তুলেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব, অ্যাশটন কার্টারের কথায়, ‘‘যে এলাকায় রাশিয়া হামলা চালাচ্ছে, সেখানে আইএসের অস্তিত্বই নেই। এটাই আসল সমস্যা।’’ একদিকে আসাদকে সমর্থন, আর অন্য দিকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই— দুটোই একসঙ্গে চলতে পারে না বলে রাশিয়াকে কটাক্ষ করে তিনি জানান, আইএস-কে ঠেকাতে হলে সিরিয়ায় রাজনৈতিক বদল প্রয়োজন। তা না করেই জঙ্গিনিধনের চেষ্টা করলে আদতে সিরিয়ার আগুনে ঘি ঢালা হবে। ওয়াশিংটনের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে কার্টার বলেন, ‘‘জঙ্গিনিধন এবং সিরিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বদল— এই দু’টি বিষয়কেই গুরুত্ব দেয় আমেরিকা।’’ লক্ষ্যপূরণে তাই আলাদা ভাবে নয়, বরং একসঙ্গে এগোলেই সাফল্য মিলবে বলে রাশিয়াকে বার্তাও দিয়েছেন কার্টার।

মার্কিন তোপের মুখে আজ সুর চড়াতে ছাড়েনি রাশিয়াও। আজ পুতিনের এক মুখপাত্র জানান, আইএস তো বটেই, সঙ্গে অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করেও হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। ভুল তথ্য দিয়ে আমেরিকা বিভ্রান্তি তৈরি করছে বলেও অভিযোগ রাশিয়ার। এ দিকে, মার্কিন যৌথবাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা এবং জঙ্গিযুদ্ধে হেরে যাওয়ার পরেই রাশিয়া মাঠে নেমেছে বলে
দাবি করেছেন ফ্রান্সে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ওরলভ। তাঁর কথায়, ‘‘সিরিয়ায় এক বছর ধরে রয়েছে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বাহিনী। হাজার পাঁচেক হামলাও চলেছে। কিন্তু আইএস বহাল তবিয়তেই রয়েছে।’’ সিরিয়া পরিস্থিতিতে পুতিনের হস্তক্ষেপ নিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী, ‘‘এক বছরের মধ্যেই সিরিয়ায় স্বাধীন ভাবে নির্বাচন হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE