Advertisement
E-Paper

বিভেদের ক্ষত নিয়েই ভোটে জনতা

ভারত যখন আচমকা নোট গুনতে ব্যস্ত, মার্কিন মুলুকে ভোট গোনার সময় ঘনিয়ে এল। ভারতীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত থেকে খুলে গিয়েছে ভোটকেন্দ্র। সাত তাড়াতাড়ি ভোট দিয়ে এসেছেন হিলারি ক্লিন্টন।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৭

ভারত যখন আচমকা নোট গুনতে ব্যস্ত, মার্কিন মুলুকে ভোট গোনার সময় ঘনিয়ে এল। ভারতীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত থেকে খুলে গিয়েছে ভোটকেন্দ্র। সাত তাড়াতাড়ি ভোট দিয়ে এসেছেন হিলারি ক্লিন্টন। বুধবার সকাল থেকে ভোট গোনা হবে। বেলার দিকেই বোঝা যাবে, সাদা বাড়ি কার দখলে যেতে চলেছে।

আর্লি ভোটিং অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল আরও বেশ কদিন আগে থেকেই। ক’দিন আগেই লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখে এসেছি, দোতলায় বুথ। নোটিস ঝোলানো আছে এক তলায়। যেতেই এক হাস্যমুখ বৃদ্ধ অভ্যর্থনা জানালেন। আমার পিছনে ঢুকেছেন এক শ্বেতাঙ্গ মহিলা। বৃদ্ধ তাঁকে বলছেন শুনি, ‘ভোট দিয়েছেন তো? দোতলায় বুথ’। আমাকে কথাটা বলা হল না কেন? আমার ভোটাধিকার আছে না নেই, এ তো ভদ্রলোকের জানার কথা না। তবে কি চামড়ার গুণ?

অন্য সময় হলে এ সব মাথায় আসত না। কিন্তু আমেরিকার ভিতরের চাপা বিদ্বেষ, বৈরিতা সবই তো ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে এ বারের নির্বাচনে। আগের দিনই টিভিতে দেখলাম, নর্থ ক্যারোলিনার এক জমায়েতে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন হিলারি-সমর্থক এক কৃষ্ণাঙ্গ হিপহপ গায়ক। ধন্যবাদ কী জন্য? না, অনেকেই ভাবছিলেন জাতিগত বিদ্বেষের যুগ পেরিয়ে আসা গেছে, বিশেষ করে কালো চামড়ার মানুষ যখন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু ট্রাম্পের উত্থান দেখিয়ে দিয়েছে, এই বিভেদ আসলে কতটা গভীর।

পরিচিত এক শ্বেতাঙ্গ অধ্যাপককে বলতে শুনি ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে তিনি বিদেশে পাড়ি দেবেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্সিতে বাঁচা অসম্ভব। পরিচিত বাঙালি বন্ধু জানায় ডিসেম্বরে দেশে যাবার টিকিট কাটা আছে, তেমন হলে নভেম্বরের পর রিটার্ন টিকিটটা বাতিল করে দেবে। আর এক ভারতীয় বন্ধু বাড়ি কিনেছেন একটু ভিতরের দিকে। দীর্ঘদিনের ডেমোক্র‌্যাট কর্মী। ওবামার হয়ে প্রচার করতে যাওয়ায় এক পড়শি কুকুর লেলিয়ে দেবে বলে ভয় দেখিয়েছিল, সেই গল্প খুব হেসে হেসে প্রায়ই শোনান। এ বার বললেন, বাড়ির সামনে হিলারির প্ল্যাকার্ড পুঁততে কী রকম একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। কিছু হয়ে যাবে না তো?

এই অনুভূতি অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় সর্বত্র। মেক্সিকান অভিবাসীরা শুনি রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দিচ্ছেন। আমার মেক্সিকান বন্ধু নেই। কিন্তু আন্দাজ করতে পারি, অনুভূতিটা। এ পর্যন্ত পড়ে এই নির্বাচনী যুদ্ধে এক পক্ষকে ভিলেন মনে হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই ২০১৬-র পশ্চিম গোলার্ধে কোনও হিসেবই অত সহজ-সরল না। মিসিসিপি পাড়ের এ তল্লাটে বছর দশেক আগে যখন পা রাখি, সাদা ছাড়া কাউকে বিশেষ দেখা যেত না। দশক না পেরোতেই এখন এখানে থিকথিক করছে বাদামি চামড়ার হোয়াইট কলার কর্মীরা। খবর পাওয়া যাচ্ছে, স্থানীয় ট্রাক্টর তৈরির কোম্পানির লাভ কমছে দ্রুত। তারা টপাটপ লে-অফ করছে। খুব বেশি লোকসান শুরু হলে কারখানার পাট সোজা তুলে নিয়ে যাবে চিন কিংবা মেক্সিকোয়। কী হবে তখন শ্বেতাঙ্গ ভূমিপুত্রদের? আমরা ফিরে যাব নিজভূমে, কিন্তু এদের তো কোথাও যাবার নেই।

রেড ইন্ডিয়ানদের কথা মনে পড়ে। বহু দূর ইউরোপ থেকে একদল সাদা অভিবাসীই তো এসে তাদের উচ্ছিন্ন করেছিল। ইলিনয় রাজ্যের নামটাই ইলিনি উপজাতিদের থেকে নেওয়া। আজ যেন অবস্থান বদলের পালা। আমরা ভারতীয়রা যারা দেশে থাকতে বাংলাদেশিদের দেখে নাক কুঁচকেছি, বিদেশে এসে সাহেব হতে চেয়েছি, কালো কিংবা মেক্সিকানদের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করিনি, তারা দেখতে পাচ্ছি, নিজেদের অনাকাঙ্খিত ভাবতে কেমন লাগে। আর যারা ইউরোপ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল এই বিরাট মহাদেশে, তারা পাচ্ছে উৎখাত হয়ে যাবার ভয়ের স্বাদ। এই যুদ্ধ এ সব স্বাদ বদলাবদলিরই বহিঃপ্রকাশ।

মার্কিন মুলুকে ভোট

ভোটার কে

ভোট দেওয়ার আগে মার্কিন নাগরিকদের ভোটার তালিকায় নাম নথিভূক্ত করতে হয়। দেশের ৫০টি রাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসি-র ২৪ কোটি যোগ্য ভোটারের মধ্যে মাত্র ১৪ কোটি ৬৩ লক্ষ এ বার তাঁদের নাম রেজিস্টার করিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩০ লক্ষ ইতিমধ্যে ভোট দিয়েও দিয়েছেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ কী

আমেরিকায় ভোটদাতারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট বাছতে পারেন না। ভোট হয় ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে। সারা দেশে ৫৩৮ ইলেক্টর রয়েছেন। জিততে হলে কম পক্ষে ২৭০টি ভোট দরকার।

ভোট পদ্ধতি কী রকম

এক জন প্রার্থী যে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নিজের দিকে টানতে পারবেন, সেই রাজ্যের সব ক’টি ভোট তাঁর। যেমন ডেমোক্র্যাট ঘাঁটি ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫ জন ইলেক্টর। এই রাজ্যে যিনি বেশি ভোট পাবেন, তিনিই ৫৫ জন ইলেক্টর জিতে নেবেন। ব্যতিক্রম, মেইন ও নেব্রাস্কা।

এই পদ্ধতির খামতি কোথায়

অনেক সময়েই গোটা দেশের জন-ভোট বা পপুলার ভোট আর ইলেক্টর সংখ্যায় ফারাক থেকে যায়। যেমন, ২০০০ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জর্জ বুশের থেকে ৫৩ লক্ষ বেশি পপুলার ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের ফল বেরোতে দেখা যায়, বুশের থেকে ৫টি ইলেক্টোরাল ভোট কম পেয়ে হেরে গিয়েছেন গোর।

Presidential election US Trump vs Hillary
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy