Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Prince Philip

এক অজ্ঞাতকে চিঠি লিখলেন রানির স্বামী

পৃথিবী হারাল এক সৎ পরিবেশপ্রেমীকে। যিনি অজ্ঞাত এক বাঙালিকে অযাচিত স্নেহ আর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

প্রিন্স ফিলিপের সই করা জিম করবেটের জীবনী। নিজস্ব চিত্র।

প্রিন্স ফিলিপের সই করা জিম করবেটের জীবনী। নিজস্ব চিত্র।

অরূপ রায়চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫৫
Share: Save:

১৯৮১-৮২ সালের কথা। জিম করবেট কেন নিঃশব্দে ভারত ছাড়লেন, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আতিপাতি করে খুঁজে চলেছি বহু বই আর ছুটে চলেছি বহু মানুষের কাছে। করবেটের লেখা শেষ বই ‘ট্রি টপ্স’ পড়তে পড়তে চোখে পড়ল দু’টি নাম— ‘প্রিন্সেস এলিজ়াবেথ’ ও ‘প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অব এডিনবরা’। করবেট-নেশা তখন তুঙ্গে। সাত পাঁচ না-ভেবে লিখে বসলাম এক চিঠি। পাঠিয়ে দিলাম বাকিংহাম প্যালেসের ঠিকানায়। দিলাম তো! মনে মনে ভাবলাম, কে দেবে আমার মতো এক অজ্ঞাত মানুষের এই আজব প্রশ্নের উত্তর! তিনি আবার রানির স্বামী বলে কথা।

বোধ হয় সপ্তাহটুকু শুধু পার হয়েছে। রেজিস্টার্ড ডাকে এক চিঠি এসে হাজির। লম্বা খামের উপরে ঠিকানা টাইপ করা। গায়ে দু’-চার খানা শিলমোহর। লেখা— বাকিংহাম প্যালেস। ভিতর থেকে যে চিঠিখানা বার হয়ে এল তাতে আমার নাম কলম দিয়ে কেউ লিখেছেন। মধ্যের চিঠিখানা টাইপ করা। আর নীচে সই— ফিলিপ।

যেন কত দিনের বন্ধু! লিখেছিলেন, করবেটকে দেখলেও, তাঁকে তেমন জানার সুযোগ পাননি। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেনি তাঁর রাজকীয় আভিজাত্য। আমাকে বলেছিলেন, ‘নিজের প্রতি বিশ্বাস কখনও হারাবেন না। মনে রাখবেন, আমরা সকলেই প্রকৃতি-মায়ের সন্তান।’ অসাধারণ সৌজন্য আর অন্যকে সাহায্য করার এক বিরল উদার মনের পরিচয় পেয়েছিলাম তাঁর লেখা সেই চিঠিতে।

নিজে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে না-পারলেও এর পরেও মনে রেখে ছিলেন আমাকে। লেখক ও চিত্রনির্মাতা মার্টিন বুথ সাহেবকে আমার নাম-ঠিকানা দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। মার্টিন সাহেব জিম করবেটকে নিয়ে সিনেমা করার জন্য তখন ভারতে। অবাক হয়েছিলাম, মার্টিন সাহেবের মুখে যখন শুনলাম, প্রিন্স ফিলিপ তাঁকে বলেছেন, ‘অরূপ করবেটকে নিয়ে অনেক তথ্য জোগাড় করেছে।’ মার্টিন বুথের বইটি প্রকাশ হওযার পরে১৯৮৬ সালে বড়দিনের কার্ডের সঙ্গে পাঠিয়েছিলেন নিজের সই করা বইটির একটি কপি।

তার পরেও প্রিন্সের সাথে যোগাযোগ হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে গুরু সালিম আলি সাহেবের চলে যাওয়ার পরে এবং আরও কয়েক বার। প্রতিবারই দেখেছি, ভারতের বন্যপ্রাণী, পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে কী আন্তরিক আগ্রহ। তখন তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত। মুম্বই এলেন। সালিম আলিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমার কথা, কোথায় থাকে ছেলেটা! অত অল্প সময়ে আমার পক্ষে মূম্বই যাওয়া সম্ভব নয় শুনে আচমকা ফোন করে বসলেন। উনি জানতেন আমি ‘বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি’র সদস্য। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষ জে সি ড্যানিয়েল আমাকে ফোন করে বললেন, ‘ধরো, প্রিন্স কথা বলবেন’। আমি থতমত খেয়ে ফোন ধরতে এক অসাধারণ কণ্ঠস্বর, মৃদু ভারী গলায় যে ক’টি কথা বলেছিলেন, আজও তা যেন শুনতে পাই।

আজ যখন তাঁর চলে যাওয়ার খবরটা পেলাম, মনে হল পৃথিবী হারাল এক সৎ পরিবেশপ্রেমীকে। যিনি অজ্ঞাত এক বাঙালিকে এত অযাচিত স্নেহ আর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

লেখক পরিবেশকর্মী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

England Prince Philip Jim Corbett
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE