E-Paper

৬ নতুন দেশ, ব্রিকস নিয়ে ইতিবাচক দিল্লি

ইরান দীর্ঘদিন ধরে শক্তিক্ষেত্রে ভারতের সবচেয়ে বড় অংশীদার ছিল। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পরে সেই আমদানির যুগ আর নেই। কিন্তু ভূকৌশলগত ভাবে ইরানের প্রতি নির্ভরতা রয়েছে ভারতের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৩৯
An image of BRICS

আর্জেন্টিনা, ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, মিশর এবং ইথিওপিয়া আগামী বছরের গোড়া থেকে ব্রিকস গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হবে। —ফাইল চিত্র।

ছ’টি নতুন রাষ্ট্র এ বার যুক্ত হল ব্রিকস আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে। আজ নেতারা ঘোষণা করলেন আর্জেন্টিনা, ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, মিশর এবং ইথিওপিয়া আগামী বছরের গোড়া থেকে ব্রিকস গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হবে। গতকালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, ব্রিকস সম্প্রসারণের প্রশ্নে ভারত ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই চলছে। আজ সাংবাদিকদের সামনে তাঁর এই বিষয়ে বক্তব্য, “ব্রিকস বিস্তারে ভারতের পূর্ণ সমর্থন ছিল। আজ যে নতুন রাষ্ট্রগুলির সংযোজন ঘটল তাতে এই গোষ্ঠীকে শক্তি জোগাবে। অনেক দেশেরই বহুপাক্ষিক বিশ্বের উপর আস্থা বাড়বে।”

মোদীর কথায়, “এই সম্প্রসারণ ঘটানো হয়েছে ব্রিকসের দিশামুখ, চরিত্র, বৈশিষ্টকে রক্ষা করেই। নতুন যুক্ত হওয়া প্রত্যেকটি দেশের সঙ্গেই ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। আমি নিশ্চিত ব্রিকসে আসার ফলে ভারতের সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও নতুন গতি পাবে।” জানানো হয়েছে যে এই ছ’টি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তি প্রথম দফার। এর পরে আবেদন করা অন্য রাষ্ট্রগুলিকেও ব্রিকসের শর্তের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একে একে সংযুক্ত করার প্রক্রিয়া চলবে।

ব্রিকস সম্প্রসারণের প্রশ্নে সবচেয়ে বড় উদ্যোগী রাষ্ট্র ছিল চিন। বেশ কিছু দিন ধরেই তারা জি ৭-এর প্রতিস্পর্ধী একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল, যারা ধারে ও ভারে আমেরিকা তথা পশ্চিমি দেশগুলিকে টেক্কা দিতে পারে এবং যে গোষ্ঠীতে চিনের ব্যাপক প্রভাব থাকে। চিনের এই উদ্যোগের শরিক ছিল রাশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। সূত্রের বক্তব্য, ভারত গোড়া থেকেই চায়নি ব্রিকস গোষ্ঠী কার্যত চিনের ‘ক্লাব’ হয়ে দাঁড়াক। আজ নতুন ছ’রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তির পরে কূটনৈতিক শিবির বলছে, ভারতের আশঙ্কার বিশেষ কারণ নেই। নতুন সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একমাত্র ইথিওপিয়া বাদ দিয়ে বাকি দেশগুলির সঙ্গে কম-বেশি নিয়মিত কূটনৈতিক আদানপ্রদান রয়েছে নয়াদিল্লির। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে মোদীর শাসনকালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। আর্জেন্টিনার সঙ্গে প্রতিরক্ষা এবং বৈদ্যুতিন গাড়ির জন্য লিথিয়াম ব্যাটারির আমদানি ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

ইরান দীর্ঘদিন ধরে শক্তিক্ষেত্রে ভারতের সবচেয়ে বড় অংশীদার ছিল। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পরে সেই আমদানির যুগ আর নেই। কিন্তু ভূকৌশলগত ভাবে ইরানের প্রতি নির্ভরতা রয়েছে ভারতের। তবে মিশর, ইথিওপিয়া এবং আর্জেন্টিনার উপর চিনের প্রভাব ভারতের চেয়ে অনেকটাই বেশি, মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

আজ চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, ‘‘ব্রিকসের এই সম্প্রসারণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এর ফলে ব্রিকসে সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন উদ্দীপনা আসবে। বিশ্বের শান্তি এবং প্রগতির প্রশ্নে যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।” কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এত দিন পর্যন্ত ব্রিকস গোষ্ঠীর রাষ্ট্রগুলির নিজেদের মধ্যে দু’টি বিষয়ে সাদৃশ্য ছিল। প্রথমত, এত দিন পর্যন্ত ব্রিকসের প্রতিটি দেশই ছিল বড় অর্থনীতি। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেকেরই বৃদ্ধির হার উল্লেখজনক। কিন্তু এখন এমন কিছু দেশকে সঙ্গে নেওয়া হল যাদের অনেকেরই অর্থনীতি রুগ্ন, কোনও দেশ সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ফলে শুধুমাত্র বড় অর্থনীতিকেই ব্রিকসভুক্ত করার আবশ্যক শর্ত থেকে এ বার সরে আসা হল।

আজ সম্মেলনের শেষে যে ‘জোহানেসবার্গ ঘোষণাপত্র’ প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে ইউক্রেনের নাম না করে সংঘাতের মোকাবিলায় ব্রিকসের অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। ঘোষণাপত্রের বক্তব্য, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলতি সংঘাতের বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সংলাপ এবং সংঘবদ্ধভাবে আলোচনার মাধ্যমে বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে ব্রিকস। এ ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতা করতে আমরা তৈরি।’

পাশাপাশি, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার এবং আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের মতো ভারতীয় স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বিষয়গুলিও জায়গা পেয়েছে জোহানেসবার্গের এই ঘোষণাপত্রে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BRICS

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy