Advertisement
০৮ মে ২০২৪
9/11 Attack

Afghanistan Crisis: নজরে ‘৯/১১’, আল কায়দা হামলার বর্ষপূর্তিতেই তালিবানি সরকারের আনুষ্ঠানিক উদ্‌যাপন?

দু’দিন হল আফগানিস্তানে কার্যনির্বাহী সরকার গঠন করেছে তালিবান। শোনা যাচ্ছে, উদ্‌যাপনের জন্য ‘৯-১১’-র বিশেষ দিনটিকে বেছে নিতে পারে তারা।

কাবুলের রাস্তায় তালিবান যোদ্ধারা।

কাবুলের রাস্তায় তালিবান যোদ্ধারা। ছবি পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:৩৯
Share: Save:

দু’দিন হল আফগানিস্তানে কার্যনির্বাহী সরকার গঠন করেছে তালিবান। আনুষ্ঠানিক উদ্যাপন এখনও হয়নি। শোনা যাচ্ছে, এর জন্য ‘৯-১১’-র বিশেষ দিনটিকে বেছে নিতে পারে তারা। আমেরিকার উপরে আল কায়দার হামলার বিশ বছর পূর্তির দিনই জাঁকজমক করে উদ্‌যাপন করা হতে পারে নতুন সরকার গঠন। এ-ও শোনা যাচ্ছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চিন, রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক ও কাতারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তারা।

তালিবানের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এ খবর জানিয়েছে একটি সংবাদমাধ্যম। ওই সূত্রের কথায়, ‘‘আমেরিকা আমাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করেছে, তা আমরা জানি। ওদের অস্বস্তিতে ফেলতে চাইছি না। কিন্তু ওই দিনটা আমাদের জন্য একটা বড় দিন। তবে আমরাও তো অস্বস্তিতে, আমাদের মন্ত্রীকে আমেরিকা নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করে রেখেছে।’’

তালিবানের অন্দরমহল থেকে এ খবর মিললেও কোনও পক্ষ এখনও এ কথা ঘোষণা করেনি। এই দাবির সত্যাসত্যও তাই অস্পষ্ট। কিন্তু এ যদি সত্যি হয়, আরওই প্রশ্নের মুখে পড়বে আমেরিকা। ইতিমধ্যেই আফগানিস্তান-সিদ্ধান্ত নিয়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ঘরেবাইরে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং দেশটাকে একপ্রকার তালিবানের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য অনেকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তাঁকে। যদিও বাইডেন তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। তাঁর কথায়, ‘‘আমেরিকা যথেষ্ট করেছে। আফগান সেনা কেন নিজেদের দেশকে তালিবানের হাত থেকে রক্ষা করবে না।’’ তিনি আরও জানান, ৯-১১-র হামলার জবাবে তারা আফগানিস্তানে সেনা পাঠিয়েছিল। ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পরে সে কাজ অনেক দিনই হল সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু তালিবানের হুঙ্কারে বারবার উঠছে, ‘আমেরিকার হার’। সম্প্রতি তারা এমনও বলেছে, ‘‘গোটা বিশ্ব দেখে নিক, এ দেশে এলে কী হয়!’’

তালিবানের বক্তব্য, হক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্যদের কালো তালিকায় রেখে আমেরিকা ঠিক করছে না। তাঁদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা ওঠাতে হবে। তাদের দাবি, আফগানিস্তানের অন্যতম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্যদের কালো তালিকায় রেখে আমেরিকা দোহার শান্তি চুক্তি ভাঙছে। তালিবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দ হক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্য। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হক্কানি এফবিআইয়ের জঙ্গি তালিকায় রয়েছেন। শুধু আমেরিকা নয়, তালিবান মন্ত্রিসভার পাঁচ মন্ত্রী রাষ্ট্রপুঞ্জেরও নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছেন।

তালিবানের আফগানিস্তান-দখলের প্রতিবাদে গত কয়েক দিন ধরে পথে নামছেন সে দেশের বহু সাধারণ মানুষ। তালিবান জানিয়ে দিয়েছে, কোনও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মেনে নেওয়া হবে না। বরং প্রতিবাদ করলেই মিলবে শাস্তি। এ যে শুধু মুখের কথা নয়, তা-ও স্পষ্ট। একটি ভাইরাল ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, কাবুলের রাস্তায় বিক্ষোভকারী মহিলাদের বেতের ঘা মারা হচ্ছে প্রকাশ্যে। কিন্তু তা-ও বিক্ষোভ থামছে না। মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে পথে নামছেন শয়ে শয়ে আফগান। এর মধ্যে পুরুষ, মহিলা, উভয়ই রয়েছেন। তাঁদের কারও মুখে স্লোগান, ‘এই প্রতিবাদ চলবেই’, কেউ বলছেন ‘পাকিস্তানের মৃত্যু হোক’। শেষে আজ আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয় তালিবান। তাদের অনুমান, সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে একজোট হচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।

এর পাশাপাশি দেশের সংবাদমাধ্যমকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তালিবান-বিরোধী খবর করা যাবে না, কোনও বিক্ষোভ সম্প্রচার করা যাবে না টিভিতে।

কার্যনিবার্হী প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ হাসান আখুন্দ আজ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির জমানার সরকারি কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এঁদের অনেকেই আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়েছেন। তাঁদের নির্ভয়ে দেশের ফেরার কথা বলছেন আখুন্দ। একই সুর আগেও শোনা গিয়েছে তালিবানের মুখে। তারা বিদেশি কূটনীতিক ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদেরও আফগানিস্তানে ফিরতে বলেছে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাস নতুন করে খোলার আবেদন জানিয়েছে তালিবান। তারা এমনও জানিয়েছে, এত দিন যাঁরা আমেরিকার সঙ্গে কাজ করেছেন, ২০০১-এ আমেরিকান সেনার আফগানিস্তানে প্রবেশকে সমর্থন জানিয়েছেন, তাঁদেরও কোনও ক্ষতি করা হবে না।

যদিও তালিবানের এ সব আশ্বাসে ভরসা নেই কারও। মন্ত্রিসভায় কোনও মহিলাকে রাখা হয়নি। পড়াশোনা থেকে বাড়ির বাইরে বেরনো, সবেতেই চাপানো হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এত দিন তারা বলছিল মেয়েদের শিক্ষার অধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু গত কাল দেশের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ধর্মীয় শিক্ষাই আসল, বাকি সব মূল্যহীন। এ অবস্থায় আফগানিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

ইতিমধ্যে আজ ‘ন্যাশনাল রেজ়িজ়ট্যান্স ফ্রন্ট’ (এনআরএফ) দাবি করেছে, এখনও পঞ্জশির দখল করতে পারেনি তালিবান। ৬০ শতাংশ এলাকা এখনও এনআরএফ-এর দখলে আছে। দলের নেতা আহমেদ মাসুদ ও প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালে নিরাপদে আছে বলে জানিয়েছে তারা। এনআরএফ এবং মাসুদের মুখপাত্র আলি মাইসাম নাজ়ারি বলেছেন, ‘‘কম্যান্ডার আহমেদ মাসুদ এবং আমরুল্লা সালে, দু’জনেই আফগানিস্তানে রয়েছেন। দেশের মানুষকে ফেলে তাঁরা কোথাও পালাবেন না। মানুষ জেগে উঠছেন। সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে তাঁরা গর্জে উঠছেন কাবুলে।’’

তবে তাঁরা যে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন, তা মেনে নিয়েছেন নাজ়ারি। পাকিস্তানের নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তের ও পার থেকে ওদের জন্য সাহায্য আসছে। তবে সিংহের গুহায় পা রেখেছে তালিবান। এর পরিণতি ওদের ভুগতে হবে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

9/11 Attack taliban Afghanistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE