Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
China

গোটা গ্রামের দখল নিয়েছে প্রকৃতি, আদিবাসীরা ডাকে ‘ভূত গ্রাম’

ঘরবাড়ি আছে, কিন্তু মানুষজন নেই। গোটা গ্রামটিই পরিত্যক্ত। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। ঘরবাড়ি, দালান, উঠোন থেকে রাস্তাঘাট সবই ঢেকে গিয়েছে ঘন লতাপাতায়। কি নাম এই গ্রামের?

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৮ ০৯:৩৮
Share: Save:
০১ ১৬
যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। ঘরবাড়ি, দালান, উঠোন থেকে রাস্তাঘাট সবই ঢেকে গিয়েছে ঘন লতাপাতায়। রাস্তার দু’ধারে মাথা উঁচিয়ে রয়েছে আঙুরলতা। চিনের শেঙশান দ্বীপে অবস্থিত জনমানব শূন্য ওই গ্রামটিকে বলা হয় ‘ভূত গ্রাম’। কেমন দেখতে সেই গ্রাম? কেন ডাকা হয় এই নামে? দেখে নিন গ্যালারির পাতায়।

যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। ঘরবাড়ি, দালান, উঠোন থেকে রাস্তাঘাট সবই ঢেকে গিয়েছে ঘন লতাপাতায়। রাস্তার দু’ধারে মাথা উঁচিয়ে রয়েছে আঙুরলতা। চিনের শেঙশান দ্বীপে অবস্থিত জনমানব শূন্য ওই গ্রামটিকে বলা হয় ‘ভূত গ্রাম’। কেমন দেখতে সেই গ্রাম? কেন ডাকা হয় এই নামে? দেখে নিন গ্যালারির পাতায়।

০২ ১৬
সাংহাইয়ের উপকূল থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরত্বে শেঙশান দ্বীপের ছোট্ট গ্রাম হাওটাওওয়ান। সাংহাই থেকে জলপথে গ্রামটিতে যেতে সময় লাগে ঘণ্টা পাঁচেক। পুরোপুরি সবুজে ছাওয়া গ্রামটি দীর্ঘদিনই ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে।

সাংহাইয়ের উপকূল থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরত্বে শেঙশান দ্বীপের ছোট্ট গ্রাম হাওটাওওয়ান। সাংহাই থেকে জলপথে গ্রামটিতে যেতে সময় লাগে ঘণ্টা পাঁচেক। পুরোপুরি সবুজে ছাওয়া গ্রামটি দীর্ঘদিনই ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে।

০৩ ১৬
গ্রামটির ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট সবই সবুজ গাছপালায় ঢেকে গিয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও মাত্রা ছাড়া দূষণ যখন সবুজ প্রকৃতিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে, এই রকম একটা গ্রামের ছবি দেখে বিস্ময় হতবাক গোটা বিশ্ব। চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা গ্রামটি এক সময় পাহাড় কেটেই তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ছোট ছোট মাটির বাড়িগুলিও পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সাজানো।

গ্রামটির ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট সবই সবুজ গাছপালায় ঢেকে গিয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও মাত্রা ছাড়া দূষণ যখন সবুজ প্রকৃতিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে, এই রকম একটা গ্রামের ছবি দেখে বিস্ময় হতবাক গোটা বিশ্ব। চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা গ্রামটি এক সময় পাহাড় কেটেই তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ছোট ছোট মাটির বাড়িগুলিও পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সাজানো।

০৪ ১৬
গ্রামটির আয়তন প্রায় ৫০০ বর্গ কিলোমিটার। এক সময় প্রায় তিন হাজার মানুষের বাস ছিল এই গ্রামে। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পেশায় জেলে। কমপক্ষে ৬০০ পরিবারের বাস ছিল এই গ্রামে।

গ্রামটির আয়তন প্রায় ৫০০ বর্গ কিলোমিটার। এক সময় প্রায় তিন হাজার মানুষের বাস ছিল এই গ্রামে। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পেশায় জেলে। কমপক্ষে ৬০০ পরিবারের বাস ছিল এই গ্রামে।

০৫ ১৬
১৯৫০ সালে পাহাড় কেটে গ্রামটি তৈরি করা হয়। শহরাঞ্চল থেকে অনেকটাই দূরে প্রান্তিক এই গ্রামটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল একেবারেই অনুন্নত। সেই সঙ্গে খাবার ও পানীয় জলের জন্যও গ্রামবাসীদের অনেক দূরে পাড়ি দিতে হত।

১৯৫০ সালে পাহাড় কেটে গ্রামটি তৈরি করা হয়। শহরাঞ্চল থেকে অনেকটাই দূরে প্রান্তিক এই গ্রামটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল একেবারেই অনুন্নত। সেই সঙ্গে খাবার ও পানীয় জলের জন্যও গ্রামবাসীদের অনেক দূরে পাড়ি দিতে হত।

০৬ ১৬
একদিকে পাহাড়ে ঘেরা রুক্ষ পরিবেশ, অন্যদিকে জীবনধারণের নানা অসুবিধার মুখোমুখি হয়ে একে একে গ্রামবাসীরা তাঁদের ভিটেমাটি ছাড়তে শুরু করেন। শোনা গিয়েছে, কাজের সূত্রেও জেলে পরিবারের অনেকে তাঁদের ভিটে ছেড়ে শহরে পাড়ি দেন।

একদিকে পাহাড়ে ঘেরা রুক্ষ পরিবেশ, অন্যদিকে জীবনধারণের নানা অসুবিধার মুখোমুখি হয়ে একে একে গ্রামবাসীরা তাঁদের ভিটেমাটি ছাড়তে শুরু করেন। শোনা গিয়েছে, কাজের সূত্রেও জেলে পরিবারের অনেকে তাঁদের ভিটে ছেড়ে শহরে পাড়ি দেন।

০৭ ১৬
১৯৯০ সাল নাগাদ হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার ছাড়া গোটা গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ বাড়িই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকে।

১৯৯০ সাল নাগাদ হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার ছাড়া গোটা গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ বাড়িই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকে।

০৮ ১৬
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরিত্যক্ত বাড়িগুলিতে ধীরে ধীরে ডালপালা বিস্তার করতে শুরু করে গাছগাছালি। সমস্ত বাড়িগুলির গা বেয়ে উঠতে থাকে আঙুর গাছ। এক সময় দেখা যায় গোটা গ্রামটিই সবুজে আবৃত হয়ে গিয়েছে। ঘরবাড়ি, দালান, উঠোন কোনও কিছুই বাকি নেই।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরিত্যক্ত বাড়িগুলিতে ধীরে ধীরে ডালপালা বিস্তার করতে শুরু করে গাছগাছালি। সমস্ত বাড়িগুলির গা বেয়ে উঠতে থাকে আঙুর গাছ। এক সময় দেখা যায় গোটা গ্রামটিই সবুজে আবৃত হয়ে গিয়েছে। ঘরবাড়ি, দালান, উঠোন কোনও কিছুই বাকি নেই।

০৯ ১৬
গ্রামের আদি বাসিন্দাদের দাবি, উপযুক্ত খাদ্য, পানীয়, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবেই তাঁরা শহরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল গ্রামটি। যাঁরা থেকে গিয়েছিলেন তাঁরাও অনেকটা দূরে পাহাড়ের উপর আশ্রয় নিয়েছিলেন। লোকজনের বাস থাকায় গ্রামটির নাম হয়ে যায় ‘ভূত গ্রাম’।

গ্রামের আদি বাসিন্দাদের দাবি, উপযুক্ত খাদ্য, পানীয়, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবেই তাঁরা শহরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল গ্রামটি। যাঁরা থেকে গিয়েছিলেন তাঁরাও অনেকটা দূরে পাহাড়ের উপর আশ্রয় নিয়েছিলেন। লোকজনের বাস থাকায় গ্রামটির নাম হয়ে যায় ‘ভূত গ্রাম’।

১০ ১৬
প্রকৃতির কোলে হারিয়ে গিয়ে গ্রামটিও এক সময় চলে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। ২০১৫ প্রথম এই গ্রামের খোঁজ পান চিনের এক তরুণ ফোটোগ্রাফার কুইং জিয়ান। তিনিই প্রথম এই গ্রামের বেশ কিছু ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন। সবুজে ছাওয়া এমন গ্রাম দেখে হতবাক হয়ে যায় গোটা বিশ্ব।

প্রকৃতির কোলে হারিয়ে গিয়ে গ্রামটিও এক সময় চলে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। ২০১৫ প্রথম এই গ্রামের খোঁজ পান চিনের এক তরুণ ফোটোগ্রাফার কুইং জিয়ান। তিনিই প্রথম এই গ্রামের বেশ কিছু ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন। সবুজে ছাওয়া এমন গ্রাম দেখে হতবাক হয়ে যায় গোটা বিশ্ব।

১১ ১৬
পরবর্তীকালে গবেষণার কাজে হোক বা নিছক পর্যটনের জন্য, বহু মানুষের পা পড়ে এই গ্রামে। খোঁজ শুরু হয় এক সময় গ্রামে বসবাস করা পরিবারদের। ছবি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় হাওটাওওয়ান।

পরবর্তীকালে গবেষণার কাজে হোক বা নিছক পর্যটনের জন্য, বহু মানুষের পা পড়ে এই গ্রামে। খোঁজ শুরু হয় এক সময় গ্রামে বসবাস করা পরিবারদের। ছবি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় হাওটাওওয়ান।

১২ ১৬
গ্রামটি নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন ওয়াং পরিবার। বছর সাতাশের ওয়াং জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর পরিবার যখন গ্রাম ছাড়েন তখন তাঁর বয়স ছিল পাঁচ বছর। কাজের সন্ধানেই গ্রাম ছেড়ে চলে যায় তাঁর পরিবার। এখন তাঁদের ছোট্ট বাড়িটি নাকি আঙুরলতায় ছেয়ে গিয়েছে।

গ্রামটি নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন ওয়াং পরিবার। বছর সাতাশের ওয়াং জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর পরিবার যখন গ্রাম ছাড়েন তখন তাঁর বয়স ছিল পাঁচ বছর। কাজের সন্ধানেই গ্রাম ছেড়ে চলে যায় তাঁর পরিবার। এখন তাঁদের ছোট্ট বাড়িটি নাকি আঙুরলতায় ছেয়ে গিয়েছে।

১৩ ১৬
একই অভিজ্ঞতা ঝু মান্ডিরও। তিনি জানিয়েছেন, পাহাড়ের ঢালে তাঁদের তিন তলা বাড়িটা সবুজ লতাপাতায় ভরে গিয়েছে। কাঠের দরজা ভেঙে ডালপালা মেলেছে আঙুর গাছের সারি।

একই অভিজ্ঞতা ঝু মান্ডিরও। তিনি জানিয়েছেন, পাহাড়ের ঢালে তাঁদের তিন তলা বাড়িটা সবুজ লতাপাতায় ভরে গিয়েছে। কাঠের দরজা ভেঙে ডালপালা মেলেছে আঙুর গাছের সারি।

১৪ ১৬
তবে, গ্রামটিতে এখনও জনা পাঁচ লোক বাস করেন। তাঁরা পাহাড়ের উপর নিজেদের জন্য আলাদা ঘর বানিয়ে নিয়েছেন। এমনই একজন গ্রামবাসী বছর বাষট্টির প্রৌঢ় জানিয়েছেন, গ্রামটিতে এক সময় বহু মানুষের বাস ছিল। এখন কান পাতলে গাছপালার শিরশিরানি শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না।

তবে, গ্রামটিতে এখনও জনা পাঁচ লোক বাস করেন। তাঁরা পাহাড়ের উপর নিজেদের জন্য আলাদা ঘর বানিয়ে নিয়েছেন। এমনই একজন গ্রামবাসী বছর বাষট্টির প্রৌঢ় জানিয়েছেন, গ্রামটিতে এক সময় বহু মানুষের বাস ছিল। এখন কান পাতলে গাছপালার শিরশিরানি শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না।

১৫ ১৬
তবে, ইদানীং গ্রামটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। এমনই একজন বছর বাইশের কলেজ ছাত্রী হুয়াং ডান বলেছেন, চারদিকে যখন গাছপালা সাফ করে ঘরবাড়ি গড়ে তুলছে মানুষ, সেই সময় এমন একটা জায়গার খোঁজ পাওয়াটা সত্যিই বিস্ময়কর। তাঁর কথায়, “এখানে এসে মনে হচ্ছে শুরু থেকেই জায়গাটা প্রকৃতিরই ছিল। মানুষ চলে গিয়েছে, প্রকৃতি আবার তার ঠাঁই ফিরে পেয়েছে।’’

তবে, ইদানীং গ্রামটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। এমনই একজন বছর বাইশের কলেজ ছাত্রী হুয়াং ডান বলেছেন, চারদিকে যখন গাছপালা সাফ করে ঘরবাড়ি গড়ে তুলছে মানুষ, সেই সময় এমন একটা জায়গার খোঁজ পাওয়াটা সত্যিই বিস্ময়কর। তাঁর কথায়, “এখানে এসে মনে হচ্ছে শুরু থেকেই জায়গাটা প্রকৃতিরই ছিল। মানুষ চলে গিয়েছে, প্রকৃতি আবার তার ঠাঁই ফিরে পেয়েছে।’’

১৬ ১৬
গোটা গ্রামটিরই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এখন সরকারের হাতে। পর্যটন স্থল হিসেবেই হাওটাওওয়ানের পরিচিতি বেড়েছে। আগে বিনামূল্যে গ্রামে ঘোরার সুযোগ করে দেওয়া হলেও বর্তমানে মাথা পিছু ৫২৬ টাকা (ভারতীয় টাকায়) টিকিটের দাম ধার্য করেছেন কর্তৃপক্ষ।

গোটা গ্রামটিরই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এখন সরকারের হাতে। পর্যটন স্থল হিসেবেই হাওটাওওয়ানের পরিচিতি বেড়েছে। আগে বিনামূল্যে গ্রামে ঘোরার সুযোগ করে দেওয়া হলেও বর্তমানে মাথা পিছু ৫২৬ টাকা (ভারতীয় টাকায়) টিকিটের দাম ধার্য করেছেন কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE