Advertisement
১৮ মে ২০২৪

স্থানীয় ভোটে এগিয়ে, স্বস্তি টেরেসা মে-র

স্থানীয় কাউন্সিলের ভোট। কিন্তু সেটাই যেন এক মাস পরের সাধারণ নির্বাচনের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৭ ০৩:০২
Share: Save:

স্থানীয় কাউন্সিলের ভোট। কিন্তু সেটাই যেন এক মাস পরের সাধারণ নির্বাচনের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে।

তাই কেউ কেউ বলছেন, কাউন্সিল ভোট আসলে ব্রেক্সিট ভোট। এই ভোটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র পায়ের তলার মাটি যত শক্ত হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের সঙ্গে ব্রেক্সিট মীমাংসা করতে ততই সুবিধা হবে তাঁর।

ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসে অন্তত পাঁচ হাজার কাউন্সিল আসনে ভোট হয়েছে কাল। মত জানিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন শহরে নতুন মেয়র নির্বাচনও হবে। সময় যত এগিয়েছে, কনজারভেটিভ পার্টির একের পর এক জয়ের খবর এসেছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। চওড়া হয়েছে টেরেসা মে-র মুখের হাসি।

কূটনীতিকদের মতে, স্বাভাবিক ভাবেই টেরেসার কাছে এটা সামান্য কাউন্সিলের ভোট ছিল না। আঞ্চলিক ভোটের ফল জাতীয় রাজনীতিতে তথা সাধারণ নির্বাচনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে, সে বিশ্বাস রয়েছে তাঁর। ইংল্যান্ডের দশটি কাউন্সিলের মধ্যে ন’টিই (ডর্সেট, এসেক্স, গ্লস্টারশায়ার, হ্যাম্পশায়ার, হার্টফোর্ডশায়ার, আইল অব ওয়াইট, লিঙ্কনশায়ার, সমারসেট এবং ওয়ারউইকশায়ার) টোরিদের দখলে। ওয়েলসেও লাভের মুখ দেখেছে টেরেসার দল। যদিও সেখানে কিছু চেনা ঘাঁটিতে লেবার পার্টিই এগিয়ে রয়েছে।

পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে— এই খবর গত বুধবার বাকিংহাম প্যালেসে গিয়ে জানিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে দাঁড়িয়ে ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ব্রিটেনের জন্য লড়াই করতে আমায় সমর্থন করুন।’’ প্রচার পর্বেও দু’টি কথাই ঘুরে-ফিরে আসছে টেরেসার মুখে, ‘শক্তিশালী এবং স্থায়ী নেতৃত্ব’ রয়েছে শুধু কনজারভেটিভ পার্টির অন্দরেই। আর দেশের মানুষকে টেরেসা বোঝাচ্ছেন, ব্রেক্সিট-মীমাংসা মোটেই খুব সহজ হবে না। জনতার কাছে তাঁর প্রস্তাব: ‘‘এর পরে যিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হবেন, তাঁকে ইইউ-এর ২৭ জন শাসকের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। ভেবে দেখুন, আমি না বিরোধী লেবার নেতা জেরেমি করবিন— কে সব চেয়ে ভাল মীমাংসা করতে পারবেন?’’ নিজেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের মতো বজ্রকঠিন, আক্রমণাত্মক মনে করেন টেরেসা। ব্রেক্সিট মীমাংসার ক্ষেত্রেও তিনি যে সহজে জমি ছাড়বেন না, বুঝিয়ে দিচ্ছেন তা।

গত বুধবারই ডাউনিং স্ট্রিটে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ জুঙ্কারের সঙ্গে টেরেসার নৈশভোজ নিয়ে এক প্রস্ত বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সেখানে কী কথা হয়েছে, তার কিছু অংশ ফাঁস হয়ে যায় একটি জার্মান সংবাদপত্রে। যা জানার পরে খেপে উঠে টেরেসা বলেন, ব্রিটেন কোন পথে ব্রেক্সিট মীমাংসা নিয়ে এগোবে, তার ভুল ব্যাখ্যা চলছে ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমে। টেরেসার কড়া কথা শুনে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ওঁর উচিত একটু নরম হওয়া। তাঁর মতে, ব্রেক্সিট মীমাংসা শুরু হওয়ার আগেই ব্রিটেন আর ইইউ যদি এত জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে, তা হলে আলোচনাই ‘অসম্ভব’ হয়ে উঠবে।

এই বিষয়টিকেই হাতিয়ার করছেন বিরোধী নেতা জেরেমি করবিন। অক্সফোর্ডে গত কাল প্রচারের ফাঁকে তিনি বলেন, ‘‘আমি কখনও কাউকে নিগ্রহ করি না। কখনও রেগেও যাই না।’’ যদিও সমীক্ষায় আভাষ এটাই যে, করবিনের দল ভয়ঙ্কর ভাবে হারবে। স্কটল্যান্ডেও ন্যাশনাল পার্টির কাছে তারা হেরে যাবে বলেই ইঙ্গিত। সমীক্ষা অনুযায়ী, ওয়েলসে এই প্রথম কনজারভেটিভরা এগিয়ে আসবে। কারণ সেখানে ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট পড়েছিল। সব মিলিয়ে ১৯৮৩-র পরে লেবার পার্টির এমন দৈন্য দশা আর হয়েছে কিনা সন্দেহ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Theresa May Council Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE