ডিমই এখন সোনা। অথচ এই ডিমই আগে আকছার ছোড়াছুড়ি করা হতো আনন্দ-উৎসবে। আর এখন একটা গোটা ডিম খাওয়ার কথাও যেন ভাবতে পারেন না ভেনেজুয়েলার মানুষ। একটি শপিং মলের ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে জানালেন বছর চব্বিশের গ্যাব্রিয়েল মার্কেজ। মল লুঠ হচ্ছে খবর পেয়ে তিনিও ছুটে এসেছিলেন। যদি কিছু খাবার পাওয়া যায়! কিন্তু তত ক্ষণে সব ফুরিয়ে গিয়েছে।
লুঠ কেন?
ভেনেজুয়েলার বর্তমান অবস্থাটা এখন এ রকমই। দু’মুঠো খাবারের জন্য চলছে দাঙ্গা, লুঠতরাজ। ‘শেষ কবে পেট ভরে খাবার খেয়েছিলে?’ — এই প্রশ্নটার উত্তরে কেউই সদ্য পেরোনো কোনও দিনের কথা বলতে পারছেন না। তিন দিন, চার দিন, বা আরও বেশি দিন হয়তো পেরিয়ে গিয়েছে পেট ভরে খাওয়ার পর।
পেশায় স্কুলশিক্ষক বেকি জর্ডন বললেন, ‘‘যুদ্ধ হচ্ছে না এখন, তবে যুদ্ধের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতিতে বাস করছি।’’ তিনি জানালেন, কয়েক ঘণ্টা ধরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর হয়তো এক প্যাকেট পাউরুটি মিলছে। সাবান, টুথপেস্ট— এ সবের ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে অন্যতম শিক্ষা ব্যবস্থার নজির ছিল ভেনেজুয়েলায়। সেখানকার স্কুলগুলিই প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। কারণ শিক্ষকেরা লাইন দিয়ে খাবার সংগ্রহ করছেন। দোকানে নেই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও। ভেনেজুয়েলার চিকিৎসক মারিয়া আলেজান্দ্রা টোরেস জানাচ্ছেন, ওষুধের অভাবে রোগী মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে গিয়েছে সম্প্রতি। তাঁর কথায়, ‘‘পরপর মানুষ মারা যাচ্ছেন চিকিৎসার অভাবে। আমরা নিরুপায়। সাহায্য করার কোনও উপায় নেই আমাদের হাতে।’’
খাবারের জোগান নেই, পানীয় নেই, ওষুধ নেই, বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিয়মিত। চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থায় ধুঁকছে একটা গোটা দেশ। প্রেসিডেন্ট উগো চাভেসের সময় খাদ্য উৎপাদনের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত দেশ ভেনেজুয়েলায় এই সঙ্কটের কারণ কী? বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো মূলত দু’টো বিষয়কে দায়ী করেছেন। প্রথমত, চোরাচালান। ভেনেজুয়েলার মুদ্রার দাম অনেকটা পড়ে যাওয়ায় সেখান থেকে প্রচুর জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী অতি সহজে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র কলম্বিয়ায় পাচার হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত. ভেনেজুয়েলার অতিমাত্রায় ভর্তুকিপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ নিতে সীমাহীন অনুপ্রবেশ ঘটছে। সব মিলিয়ে চাহিদা-জোগানের মধ্যে ব্যাপক অসামঞ্জস্য তৈরি হচ্ছে।
তবে দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার শুরু উগো চাভেসের সময় থেকেই। ভেনেজুয়েলার রফতানি আয়ের ৯৭ শতাংশই আসত তেল থেকে। কিন্তু তেলের দাম ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকায় রফতানি আয়ও ক্রমশ কমে আসছিল। তার পর তেলের দামে রীতিমতো ধস নামার পরেই প্রবল অর্থনৈতিক টালমাটালের মুখে দাঁড়িয়েছে ভেনেজুয়েলা।
আর এই বিপর্যয়ের আঁচ লাগছে রাজনীতিতেও। ২০১৩ সালে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর অপসারণের দাবি উঠেছে বিরোধী শিবিরে। মাদুরো-বিরোধী ‘ডেমোক্র্যাটিক ইউনিটি’-র দাবি, এই পরিস্থিতিতে আর প্রেসিডেন্ট-নির্বাচন আয়োজন করার সময় নেই। যত তাড়তাড়ি সম্ভব গণভোটের মাধ্যমে মাদুরোকে পদচ্যুত করতে চায় তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy