Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia-Ukraine war: হাঁটু গেড়ে ভিক্ষে করতে চাই না, নেটোয় যেতে আর জোর দিতে চান না প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি

ইউক্রেনের অভিযোগ, গত রাতেই সুমির আবাসিক এলাকায় ৫০০ কেজি ওজনের একটি বোমা ফেলেছে রুশ বিমানবাহিনী।

দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে স্ত্রী ও সন্তানেরা, বিদায় জানাতে গিয়ে অশ্রুসজল এক ইউক্রেনীয় পুলিশ অফিসার।

দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে স্ত্রী ও সন্তানেরা, বিদায় জানাতে গিয়ে অশ্রুসজল এক ইউক্রেনীয় পুলিশ অফিসার। ছবি রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
কিভ শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২২ ০৬:১০
Share: Save:

তিনি বুঝে গিয়েছেন, নেটো রাশিয়াকে চটাবে না। তাই নেটোয় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনিও কোনও জোরাজুরি করবেন না। তিনি এমন দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চান না, যারা হাঁটু গেড়ে ভিক্ষে চায়। টিভি সাক্ষাৎকারে এই কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন ভলোদিমির জ়েলেনস্কি।

শুধু তা-ই নয়, রাশিয়াপন্থী দু’টি এলাকার (ডনেৎস্ক ও লুহানস্ক) বর্তমান অবস্থা নিয়েও তিনি খোলা মনে সমঝোতা করতে প্রস্তুত বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন। ইউক্রেনের নেটোয় যোগদানের সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন ভ্লাদিমির পুতিন সে দেশ আক্রমণের আগে ডনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। জ়েলেনস্কির এ দিনের মন্তব্য যদি রাশিয়াকে প্রচ্ছন্ন বার্তা হয়, সে ক্ষেত্রে যুদ্ধ থামানোর ক্ষেত্রে তা সহায়ক হলেও হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

যুদ্ধের সময়ে অন্তত ২০টি দেশ নেপথ্যে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর। কিন্তু নেটো এখনও প্রকাশ্যে ময়দানে না নামায় অথবা ইউক্রেনের আকাশসীমায় উড়ান নিষিদ্ধ না করায় জ়েলেনস্কি তা নিয়ে বার বারই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এ দিনও ভিডিয়ো-বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘‘তেরো দিন ধরে শুধু প্রতিশ্রুতির কথা শুনেই আসছি। আকাশপথে নাকি আমাদের সাহায্য করা হবে। আমাদের জন্য বিমান পাঠানো হবে। এ বিষয়ে এখনও যারা সিদ্ধান্ত নিতে পারল না, রাশিয়ার আক্রমণ থেকে ইউক্রেনের আকাশকে সুরক্ষিত রাখতে পারল না, দায়িত্ব কিন্তু তাদের উপরেই বর্তাবে।’’ পরে এবিসি নিউজ়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বুঝে গিয়েছি, নেটো ইউক্রেনকে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। বিতর্কের ভয় পায় এই জোট। রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে যেতেও তারা চায় না।’’

তবে প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও তিনি যে দেশ ছাড়েননি, তা বোঝাতে নয়া ভিডিয়ো-বার্তায় নিজের বর্তমান ঠিকানাও জানিয়ে দিয়েছেন জ়েলেনস্কি। বলেছেন, ‘‘আমি কিভের বাঙ্কোভা স্ট্রিটে আছি। আমি লুকিয়ে নেই। কাউকে ভয় পাচ্ছি না। দেশপ্রেমের এই যুদ্ধ জিততে যা যা করার, আমি করব।’’ ঘটনাচক্রে, গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মস্কোর দূত ভ্যাসিলি নেবেনজ়িয়া জানান, মানবিক করিডর গড়ে কিভ, সুমি, মারিয়ুপোল এবং চের্নিগভের সাধারণ বাসিন্দাদের উদ্ধার করা হবে। তার জন্য ওই এলাকাগুলিতে সংঘর্ষবিরতি কার্যকর করা হবে। কিন্তু জ়েলেনস্কির অভিযোগ, মুখে এই কথা বললেও রাশিয়া আসলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সাধারণ মানুষদের উদ্ধারে প্রতি মুহূর্তে বাধার সৃষ্টি করছে। যে রাস্তা দিয়ে মারিয়ুপোলে ত্রাণ পাঠানোর কথা হয়েছিল, সেখানেই মাইন বিছিয়ে রাখা হয়েছে। মানুষকে উদ্ধারের জন্য আনা বাসগুলিতে হামলা চালানো হচ্ছে। রাস্তায় দাপাচ্ছে ট্যাঙ্ক আর মাল্টিপল রকেট লঞ্চার।’’

ইউক্রেনের অভিযোগ, গত রাতেই সুমির আবাসিক এলাকায় ৫০০ কেজি ওজনের একটি বোমা ফেলেছে রুশ বিমানবাহিনী। তাতে দু’টি শিশু-সহ অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। এমনই একটি বোমার ছবি গত কাল টুইট করে ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা জানান, এক জেনারেল তাদের বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। গত সোমবারই মারা গিয়েছিলেন রাশিয়ার এক মেজর জেনারেল। রাশিয়া এখনও পর্যন্ত তাদের শ’পাঁচেক সেনার মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও ইউক্রেনের দাবি, সংখ্যাটা প্রায় ১১ হাজার।

রাশিয়া এ দিন বিভিন্ন দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করে জানিয়েছে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেনি। সেই তালিকায় আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি ছাড়াও রয়েছে কানাডা, সুইৎজ়ারল্যান্ড, নরওয়ে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ানের মতো দেশ। ইউক্রেনের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চের্নোবিলে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রসি। রাশিয়া তা মেনে নিয়েও জানিয়েছে, চের্নোবিলের বদলে অন্য কোনও শহরে ওই বৈঠক করা যেতে পারে।

ইতিমধ্যে ইউক্রেন সরকারের টুইট করা একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার একটি ট্যাঙ্ককে টেনে নিয়ে যাচ্ছে একটি ট্রাক্টর। পিছনে ছুটছেন এক ব্যক্তি, যিনি রুশ সেনা বলেই অনেকের সন্দেহ। ভিডিয়োর সঙ্গে ইউক্রেন লিখেছে, ‘‘অস্বস্তিকর ছবি। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনী ইউক্রেনের চাষিদের কাছে হেরে যাচ্ছে! ইউক্রেনের চাষিদের সঙ্গে লাগতে এসো না!’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন অভিযান মাখনে ছুরি চালানোর মতো যতটা মসৃণ হবে বলে পুতিনের সেনা ভেবেছিল, আদতে তা হচ্ছে না। এখন জ়েলেনস্কি নেটোর উপরে বীতশ্রদ্ধ হলেও ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া বেদখল হওয়ার পর থেকেই ভবিষ্যতের রুশ আক্রমণের কথা ভেবে নেটোর সাহায্যে নিজেদের বাহিনীকে ক্রমাগত উন্নত করে গিয়েছে ইউক্রেন। যুদ্ধক্ষেত্রেও ‘ঘরের মাঠের’ চেনা অলিগলিতে অনেক ক্ষেত্রেই ইউক্রেনের সেনা বেশি ফায়দা পাচ্ছে। দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাধারণ ইউক্রেনবাসীও অস্ত্র ধরেছেন। এমনকি দেশের হয়ে লড়তে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে ইউক্রেনের সেনাদের ফিরিয়ে নিচ্ছেন জ়েলেনেস্কি। উল্টো দিকে ক্রমাগত ক্ষয়ক্ষতিতে রুশ সেনাবাহিনীর মধ্যে মনোবলের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে বলেই খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE