Advertisement
E-Paper

আমাদের ভুল হয়েছিল, চিনকে বোঝাচ্ছে রাশিয়া

পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় সিপিসি-র পার্টি কংগ্রেস। শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে বেশ কিছু নতুন ভাবনায় শান দিতে বেজিংয়ের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের ১৯তম পার্টি কংগ্রেস শুরু করতে চলেছে ১৮ অক্টোবর থেকে।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২১
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

একশো বছর আগে দুনিয়া কাঁপিয়ে সমাজতান্ত্রিক স্বপ্ন দেখিয়েছিল লেনিনের দেশ। আবার ২৬ বছর আগে সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার কাছে স্বপ্নভঙ্গের কারণও হয়েছিল তাঁর দেশ! সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান ও পতনের সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে এ বার বাড়তি তৎপরতা শুরু করল চিনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)।

পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় সিপিসি-র পার্টি কংগ্রেস। শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে বেশ কিছু নতুন ভাবনায় শান দিতে বেজিংয়ের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের ১৯তম পার্টি কংগ্রেস শুরু করতে চলেছে ১৮ অক্টোবর থেকে। যে দিকে নজর এখন তামাম বিশ্বের। কিন্তু অর্থনৈতিক প্রতাপের শিখরে দাঁড়িয়েও সিপিসি নেতৃত্ব কোথাও যেন আশঙ্কার সিদূঁরে মেঘ দেখছেন! সেভিয়েতের মতো পরিণতি তাঁদের জমানারও হবে না তো? তাই সোভিয়েতের পতন থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে রাশিয়া-সহ পুরনো ইউনিয়ন ভেঙে তৈরি হওয়া দেশগুলোয় প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে সিপিসি। এই ধরনের সফরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রে়ড ট্যুর্‌স’। আর্কাইভে গিয়ে নথিপত্র পড়ার পাশাপাশি রাশিয়ার কমিউনিস্ট নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন চিনা প্রতিনিধিরা।

কেউ কেউ বলছেন, আমেরিকার সঙ্গে টক্কর নিয়ে সোভিয়েত যেমন দ্বিমেরু বিশ্বে বিকল্প শক্তির মাথা ছিল, সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে জিনপিঙের চিনও এখন সেই ভূমিকাই নিতে চাইছে। ‘ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভ’ (ওবোর)-এর নেতৃত্ব দেওয়া, দক্ষিণ চিন সাগরে কর্তৃত্ব কায়েম করার পরে রাশিয়া, পাকিস্তানের মতো দেশকে সঙ্গে নিয়ে নতুন অক্ষ গড়ে তোলার দিকে চোখ তাদের। ‘রেড ট্যুর্‌স’-এর অন্যতম উদ্দেশ্য কি সেটাও? কমিউনিস্ট পার্টি অফ রাশিয়ান ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দরোখিন পাভেল অবশ্য বলছেন, তা নয়। তাঁর যুক্তি, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির ব্লকের নেতৃত্ব সোভিয়েতের হাতে ছিল। এখনকার বিশ্বের পরিস্থিতি তা নয়। এক প্রান্তে ভিয়েতনাম, অন্য প্রান্তে কিউবা এবং লাতিন আমেরিকার কিছু দেশকে নিয়ে পুরনো দ্বিমেরু বিশ্বের ধারণা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

সিপিআইয়ের আমন্ত্রণে আলোচনাচক্রে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছেন পাভেলের মতো অন্যান্য দেশের কমিউনিস্ট ও সমাজবাদী নেতারা। কী বলছেন তাঁরা চিনের প্রতিনিধিদের? আনন্দবাজারের সঙ্গে আলোচনায় রবিবার পাভেল বলেছেন, ‘‘সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিএসইউ) নেতৃত্ব বেশ কিছু ভুল করেছিলেন। ভুল আড়াল করে বেঁচে থাকা যায় না। কোথায় ত্রুটি হয়েছিল, কোথায় বাঁধ দেওয়া সম্ভব ছিল, সে সব নিয়েই মত বিনিময় হচ্ছে আমাদের সঙ্গে সিপিসি-র।’’

পাভেলের পাশে দাঁড়িয়ে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ত্রান দাক লয় বলছেন, সোভিয়েত মডেলের ভেঙে পড়া অবশ্যই বিপর্যয়। কিন্তু সেটা একটা গোটা মতাদর্শের মৃত্যু নয়। লয়ের কথায়, ‘‘সোভিয়েতের পতন মোটেও অনিবার্য ছিল না। সিপিএসইউ নেতৃত্বের অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতা ওই পতন ডেকে এনেছিল।’’ পাভেল, লয়েরা মানছেন, যুগের সঙ্গে তাল রেখে বেঁচে থাকার জন্য বেজিং ‘চিনা বৈশিষ্ট্যযুক্ত সমাজতন্ত্র’ গড়ে তুলেছে। সংস্কারের পথে চলতে গিয়ে দুর্নীতির মুখে পড়ে সেই রোগের মোকাবিলাও তারা লৌহমুষ্টি দিয়ে করছে।

রাশিয়ায় পাঠানোর আগে চিনা প্রতিনিধিদের যে সব কর্মশালা হয়েছে, সেখানে সিপিসি-র পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য লি কিবাও-এর মতো নেতারা বলে দিয়েছেন, দীর্ঘ কাল ধরে ভাবনাচিন্তায় অনড় থেকে শুধু সামরিক ক্ষমতায় জোর দিয়েছিল সোভিয়েত। সংস্কারে যায়নি। আটের দশকের মাঝামাঝি এসে হঠাৎ যখন তাদের সংস্কারের কথা মনে হল, তখন আর লেনিনবাদ-মার্ক্সবাদের নীতি মাথায় না রেখেই এগিয়ে যাওয়া হল! ফল বিপর্যয়। এই অংশটুকু শুনে কি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম এবং বাংলায় বাম জমানার পতনের কাহিনি মনে পড়ে যাচ্ছে না? প্রশ্ন করলে স্মিত হাসছেন বঙ্গের কমিউনিস্টরা!

China Russia Xi Jinping রাশিয়া চিন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy