Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কারা চালাচ্ছে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ? ভাবাচ্ছে দিল্লিকে

গুলশনের কাফেতে নাশকতার জন্য জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গিদের কাজে লাগানো হয়ে থাকতেই পারে। কিন্তু এই জঙ্গিরা কাদের হাতে পরিচালিত হচ্ছে? আইএস না আল কায়দা? সাউথ ব্লকের ধারণা, গুলশনের ঘটনার পিছনে আইএস বা আল কায়দার মতো শক্তিশালী কোনও সংগঠনের মস্তিষ্কই কাজ করেছে।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪২
Share: Save:

গুলশনের কাফেতে নাশকতার জন্য জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গিদের কাজে লাগানো হয়ে থাকতেই পারে। কিন্তু এই জঙ্গিরা কাদের হাতে পরিচালিত হচ্ছে? আইএস না আল কায়দা? সাউথ ব্লকের ধারণা, গুলশনের ঘটনার পিছনে আইএস বা আল কায়দার মতো শক্তিশালী কোনও সংগঠনের মস্তিষ্কই কাজ করেছে। পাশাপাশি এই নাশকতা যে ভবিষ্যতে উপমহাদেশ তথা ভারতে আরও ভয়াবহ রূপ নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে, সে আশঙ্কাও ক্রমশই গভীর হয়ে দানা বাঁধছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সামনে।

বাংলাদেশের জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। সরকারি সূত্রের খবর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এই হামলা শুধু জেএমবি-র কাজ বলে ভাবলে ভুল হবে। তাদের পিছনে ক্ষুরধার কোনও জঙ্গি সংগঠনের মস্তিষ্ক এবং সাহায্য দুই-ই আছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতর, কূটনীতিকদের বাড়ি-অফিস সমৃদ্ধ গুলশনের মতো একটি হাই প্রোফাইল জোন-এ হামলা হলে গোটা বিশ্বের নজর কাড়া যাবে। জেএমবি এর আগে অনেক হামলা চালালেও সেখানে এ ভাবে নজর কাড়ার ছাপ দেখা যায়নি। সে কারণেই গুলশনের ঘটনার পিছনে আইএস বা আল কায়দা-যোগের ছায়া দেখছেন গোয়েন্দারা।

আইএস এবং আল কায়দা— দু’টি সংগঠনই এই হত্যাকাণ্ডের দায় নিলেও ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটা বড় অংশ কিন্তু আইএস-যোগই দেখছেন। তাঁদের মতে, আল কায়দার সেই রমরমা গত কয়েক বছরে আর নেই। সেই জায়গা অনেকটাই দখল করেছে আইএস। সুতরাং এই ঘটনায় আল কায়দা দায় নিলেও আইএস-যোগের সম্ভাবনাই বেশি। কেন্দ্রীয়

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “সাধারণ ভাবে দেখা গিয়েছে, আইএস নিজেরা সব রকম ভাবে যুক্ত থাকলে তবেই কোনও হামলার দায় নেয়। এ ব্যাপারে কখনও উল্টোপাল্টা দাবি করে না বা যে কোনও জঙ্গি হামলার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে চায় না। তবে হ্যাঁ, এই ঘটনায় অবশ্যই কিছু স্থানীয় ফ্যাক্টরও কাজ করেছে।” তা ছাড়া যে রকম নৃশংসতার সঙ্গে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে, তাতে আইএস-এর ‘হাতের ছাপ’ স্পষ্ট।

গোয়েন্দারা বলছেন, স্থানীয় জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে আইএস নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি এতটাই বাড়িয়েছে যে নাশকতার মধ্যেও তাদের স্টাইল ফুটে উঠেছে। তবে আইএস প্রত্যক্ষ ভাবে ঢাকায় তাদের ডালপালা ছড়াচ্ছে, নাকি আইএস-কে দেখে অনু্প্রাণিত স্থানীয় জঙ্গিরা নতুন উদ্যমে নাশকতায় নামছে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।

নর্থ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, আইএস বেশ কিছু দিন ধরেই নজর দিয়েছে বাংলাদেশের উপরে। বাংলাদেশে শক্তি বাড়িয়ে দক্ষিণ-পূর্ব ভারতে, বিশেষ করে ভারতে পা ফেলতে বেশি উৎসাহী তারা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের যে দু’টি জঙ্গি সংগঠন হাসিনা প্রশাসনের ঘুম কেড়েছে, তারা হল জেএমবি এবং আনসারউল বাংলা টিম (এবিটি)। এদের মধ্যে জেএমবি আবার আইএস-ঘেঁষা। আইএস-এর পত্রিকা ‘দাবিক’-এ গত সংখ্যাতেই লেখা হয়েছিল, কিছু দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে তারা হাই প্রোফাইল আক্রমণ করবে। সেখানেই থামবে না। তার পরের আক্রমণটা হবে আরও বড়। গোয়েন্দাদের মতে, বাংলাদেশে আইএস-এর থাবা বসানোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এখানে সরকার-বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলি যথেষ্ট সক্রিয়। বাংলাদেশে পা দেওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপই যে ভারত হতে পারে, এমন আশঙ্কাকে এখন আর আদৌ অমূলক বলে মনে করছেন না সাউথ ব্লকের কর্তারা।

আবার পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গেও যে জেএমবি-র যোগ নেই, এমন কথাও মনে করা ঠিক হবে না বলেই কূটনৈতিক মহলের মত। তাঁদের কারও কারও দাবি, সম্প্রতি আইএসআই-এর সঙ্গে জেএমবি-র নতুন করে আঁতাঁত হয়েছে। সার্ক দেশগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে আসন্ন সম্মেলনে এ প্রসঙ্গ উঠতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গ যে হেতু সীমান্তবর্তী রাজ্য, তাই হামলার আশঙ্কায় চরম সতর্কতা জারি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “কয়েক দিন আগেই ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল বাংলাদেশকে। এ ব্যাপারে একটি ‘ডসিয়ার’ও দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়, বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হাত মিলিয়ে বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরি করতে চাইছে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশকে মিশিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। ডসিয়ারে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের ভিতরে কিছু জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর ভিত তৈরি করতে সক্রিয় সহযোগিতা করছে।’’

এই হামলার সঙ্গে সাম্প্রতিক প্যারিস হামলার নকশার মিল খুঁজে পাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এটা লক্ষণীয় যে, ঢাকার ঘটনায় টার্গেট করা হয়েছে বিদেশি নাগরিকদেরই। তবে স্থানীয় কিছু বিষয়ও যে এর সঙ্গে জড়িত, তা আজ সকালেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে জঙ্গিদের শর্তগুলি দেখে। তারা জেএমবি নেতা খালেদ সাইফুল্লার মুক্তির দাবি করেছিল। পাশাপাশি গুলশনের এই আক্রমণকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বার্থে হওয়া অভিযান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ারও দাবি তুলেছিল।

জঙ্গিদের দেওয়া এই শর্তগুলিই নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্বের সমস্ত জেহাদি গতিবিধির উপর নজর রাখে যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, সেই ‘সাইট’ জানিয়েছে, আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ঠিকই। কিন্তু তারা যদি হামলা চালায়, তা হলে জেএমবি নেতার মুক্তির দাবি প্রধান হয়ে উঠবে কেন? বাংলাদেশের একটি অংশের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাস বাড়াতেই আইএস-এর নাম ব্যবহার করছে জেএমবি।

তবে নয়াদিল্লি এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। বিদেশ মন্ত্রকের মতে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে এক ছাতার তলায় আনতে চাইছে আইএস। গুলশনের হামলা চালানোর ছক আগেই কষা হয়েছিল। জেএমবি-র স্থানীয় জঙ্গিদের সহায়তা নেওয়া হয়েছে বলে নিজেদের অপারেশনের সঙ্গে জেএমবি নেতার মুক্তির দাবিটাও জুড়ে দিয়েছে আইএস।

গত বেশ কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে একের পর এক নাশকতা, হুমকির সঙ্গে নাম জড়িয়েছে আইএস-এর। কিন্তু বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার আইএস-এর উপস্থিতি স্বীকারই করেনি কখনও। গুলশনের হামলার পর অবশ্য ঢাকার তরফে এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JMB Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE