Advertisement
E-Paper

ব্যালট-যুদ্ধে সামিল সৌদি মেয়েরাও

মুখে চওড়া হাসি। ডান হাতে আলগোছে ধরা একটা শাল। কালো রঙের ‘আবায়া’ পরে ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এলেন হাতুন আল-ফাসি। ‘‘আজ একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, এমন দিনে আমি বেঁচে আছি’’, জীবনে প্রথমবার ভোট দিয়ে বললেন উচ্ছ্বসিত ফাসি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:০৪
প্রথম ভোট। সৌদি আরবের জেড্ডার এক বুথে। ছবি: এ এফ পি।

প্রথম ভোট। সৌদি আরবের জেড্ডার এক বুথে। ছবি: এ এফ পি।

মুখে চওড়া হাসি। ডান হাতে আলগোছে ধরা একটা শাল। কালো রঙের ‘আবায়া’ পরে ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এলেন হাতুন আল-ফাসি। ‘‘আজ একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, এমন দিনে আমি বেঁচে আছি’’, জীবনে প্রথমবার ভোট দিয়ে বললেন উচ্ছ্বসিত ফাসি।

শুধু ফাসি নন, সৌদি ইতিহাসে আজ প্রথমবার ভোট দেওয়ার অধিকার পেলেন এ দেশের মহিলারা। পুরুষদের পাশাপাশি এই পুরভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করলেন তাঁরা।

সৌদি আরবই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে এখনও গাড়ি চালানোর নিয়ম নেই কোনও মহিলার। অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া তাঁরা যেতে পারেন না কোথাও। সরকারি, বেসরকারি অফিসে চাকরি করলেও কোনও বন্ধুর সঙ্গে রেস্তোঁরা বা অন্য জায়গায় ঘোরা নিষেধ তাঁদের।

এক জন পুরুষ যতটা সহজে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন, সে সুযোগ নেই কোনও মহিলার। এত কিছু ‘নেই’-এর মধ্যেও ভোটাধিকার সে দেশে মেয়েদের কাছে যেন এক ঝলক টাটকা বাতাস। আর সে কারণেই ক’জন মহিলা প্রতিদ্বন্দ্বী জিতবেন, বা আদৌ কেউ জিতবেন কি না— তা নিয়ে ভাবতে রাজি নন ফাসি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যে এই ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পেরেছি, এটাই সব চেয়ে বড় ব্যাপার। মেয়েদের মতামতেরও দাম আছে, আজকের ঘটনা তারই প্রমাণ।’’


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

তবে এই তাজা বাতাসের স্বাদ পেতে হাঁটতে হয়েছে বহু –বহু পথ। যে পথের সূচনা হয়েছিল সৌদি আরবের প্রয়াত রাজা আবদুল্লার সময় থেকেই। এ বছর জানুয়ারিতে মারা যান তিনি। রাজা থাকাকালীন তিনিই মেয়েদের ভোটদানের অধিকার দিয়ে যান। ক্যাবিনেটের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে ‘শুরা কাউন্সিল’। সেই সংগঠনে আবদুল্লাই প্রথম ৩০ জন মহিলাকে নিয়োগ করেন।

তবে ১৯৬৫ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ৪০ বছর দেশে নির্বাচনই হয়নি। এই নিয়ে তৃতীয়বার ভোট হচ্ছে এখানে। আর সেই ভোটে প্রথমবার নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন মেয়েরা।

অর্থাৎ বদলাচ্ছে সৌদি। কিন্তু সেই বদলের পথেও আছে বহু নিষেধের ঘোরাটোপ। একা একা ভোটকেন্দ্রে আসার অনুমতি মেলেনি মেয়েদের। তাঁদের নির্ভর করতে হয়েছে পুরুষ অভিভাবকদের উপর। পুরুষ-মহিলাদের জন্য ছিল আলাদা আলাদা ভোট কেন্দ্র। ঠিক যেমন, প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারলেও সবার সামনে এসে ভোটপ্রচারের ছাড়পত্র পাননি মহিলারা। অতএব এ ব্যাপারেও পুরুষদের উপরেই ভরসা করতে হয়েছে তাঁদের। পর্দার আড়ালে থেকে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু ফেসবুক, ইউটিউব বা টুইটার— সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেলেদের সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিয়েছেন মেয়েরা। আর সেই কারণেই ব্যঙ্গ ঝরে পড়ে আবদুল্লা আল-মাইতেবের গলায়। সকাল সকাল ভোট দিতে এসেছিলেন তিনি। মেয়েদের ভোট দানের অধিকার নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে আবদুল্লা আল-মাইতেবের কটাক্ষ, ‘‘মেয়েদের জায়গা তো এটা নয়। তাঁদের জায়গা বাড়িতে। বাড়ির দেখভাল করা আর ছেলে মানুষ করাই মহিলাদের দায়িত্ব!’’ তবে অন্য সুরও শোনা গিয়েছে কারও কারও গলায়। যেমন মহম্মদ আল-শামারি। নিজের মেয়েকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলেন তিনিই। শামারি বললেন, ‘‘কে মেয়েদের ভোট দিতে বাধা দিচ্ছে? যতক্ষণ পুরুষদের সঙ্গে মহিলারা মিশছেন না, ততক্ষণ কোনও অসুবিধা তো নেই।’’

ভোট দিয়ে হাসি হাসি মুখে বুথ থেকে বেরোচ্ছিলেন বছর পঁচিশের আওয়াতিফ মারজুক। সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘এখন আমারাও স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারি। আমাদের মতামতেরও মূল্য আছে।’’

এ দিন ভোট শুরু হয় সকাল আটটায়। চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। ২১০০ কাউন্সিল আসনে ভোট। লড়ছেন প্রায় ছ’হাজার পুরুষ। এবং ৯৭৮ জন মহিলা। ভোট দানের জন্য নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার মহিলা। আর পুরুষের সংখ্যাটা সাড়ে ১৩ লক্ষ। অর্থাৎ হিসেব কষলে দেখা যাবে, প্রতি ১০ জন পুরুষ ভোটদাতার মধ্যেও এক জন মহিলাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মহিলাদের সংখ্যাটা নেহাতই কম, তবু দেশের ইতিহাসে এই পরিবর্তনটাই একটা নয়া যুগের সূচনা করল। জানালেন সলমা অল-রাশিদ। তিনিই প্রথম মহিলা ভোটার হিসেবে নিজের নাম তুলেছিলেন প্রশাসনিক খাতায়। আলাদা করে বলতেই হবে লতিফা আল-বেইজির কথা। ৫৩ বছরের এই মহিলা একটি স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল। ২৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করার পাশাপশি এখন ভোটেও লড়ছেন তিনি।

বেইজি চান দেশের যুবসমাজ এই কাজে এগিয়ে আসুক। তাঁর কথায়, ‘‘আমার লক্ষ তিনটি। প্রগতি। পরিবর্তন। উদ্ভাবন।’’

women vote saudi arabia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy