Advertisement
১৮ মে ২০২৪

গণহত্যার এক বছর পরেও বিচারের আশা ক্ষীণ সিরিয়ায়

দু’বছর ধরে যে দেশটা মৃত্যু ছাড়া আর কিছু দেখেনি, তার ক্ষেপণাস্ত্রে ভয় কীসের? প্রশ্ন করলেন দামাস্কাসের বাসিন্দা বছর সাতাশের মজিদ। বললেন, “দেশের যুদ্ধ-পরিস্থিতির সঙ্গে আমরা আপস করেই ফেলেছিলাম। কিন্তু এক বছর আগে আজকের দিনটা আমাদের নতুন করে ভয় পেতে শিখিয়েছিল।”

সংবাদ সংস্থা
দামাস্কাস শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪৭
Share: Save:

দু’বছর ধরে যে দেশটা মৃত্যু ছাড়া আর কিছু দেখেনি, তার ক্ষেপণাস্ত্রে ভয় কীসের? প্রশ্ন করলেন দামাস্কাসের বাসিন্দা বছর সাতাশের মজিদ। বললেন, “দেশের যুদ্ধ-পরিস্থিতির সঙ্গে আমরা আপস করেই ফেলেছিলাম। কিন্তু এক বছর আগে আজকের দিনটা আমাদের নতুন করে ভয় পেতে শিখিয়েছিল।”

একুশ শতকের সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনাটা ঘটেছিল সে দিন। বিরোধীদের হটাতে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দামাস্কাস এবং সংলগ্ন পূর্ব ও পশ্চিম ঘুটা এবং আয়েন তারমা এলাকায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল সিরিয়ার সরকার। স্থানীয় সময় রাত ১২টা নাগাদ বর্ণ-গন্ধহীন নার্ভ গ্যাসের প্রয়োগে নিমেষে মারা যায় ১৩০০ সিরিয়াবাসী। অধিকাংশেরই বয়স এক থেকে চার। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, নিঃশ্বাসের মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে ওই গ্যাস মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করে দিয়েছিল।

মজিদের কথায়, “ওই রাতের কথা মনে পড়লে এখনও হাড় হিম হয়ে যায়!” রাতারাতি ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে ভিডিও। বিশ্বজুড়ে নিন্দা-প্রতিবাদ-মোমবাতি মিছিলও হয়। তবে দিন কয়েকের মধ্যেই মুছে গিয়েছে স্মৃতি। এখনও হাসপাতালে নরক যন্ত্রণা ভোগ করছেন নার্ভ গ্যাসের মারণ হামলা থেকে রক্ষা পাওয়া কয়েক জন। এক বছর পরেও সেই গণহত্যার বিচার হয়নি। বিচারের প্রত্যাশাও করছেন না সিরিয়ার মানুষ। খোদ সরকারই তো রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল! গণহত্যার দায় অস্বীকার করলেও রাসায়নিক অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করেছিল আসাদ-সরকার। গত ৭ সেপ্টেম্বর ১৬টি দেশের সদস্যদের নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি বৈঠকে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র নষ্টের প্রস্তাব গৃহীত হয়। সেই মতো, চলতি বছরের জুনে সিরিয়ার অস্ত্র নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় রাষ্ট্রপুঞ্জ। যদিও খাতায় কলমে এখনও দোষীদের শনাক্ত করা যায়নি। বিচার তো দূর অস্ত। যদিও সিরিয়ায় নার্ভ গ্যাসের প্রয়োগ নিয়ে সরব মানবাধিকার কমিশন। তবে যেখানে খোদ সরকারের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, সেখানে বিচার করবে কে?

১৯৮৮ সালে ইরাকের কুর্দিস্তানের মানুষকে ‘শাস্তি’ দিতে এমনই এক রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল সাদ্দাম হুসেনের সরকার। সে বার অবশ্য হামলার প্রমাণ মেলেনি। গত বার অবশ্য প্রমাণ দিয়েছিল সারি সারি শিশুর মৃতদেহ। পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকার মানবাধিকার দফতরের প্রধান নাদিম হাউরি বলেন, “ওই হামলা ঠেকানো যায়নি। তবে সিরিয়ায় যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে সে জন্য ওই অস্ত্র নষ্ট করা জরুরি ছিল।” যদিও নাদিমের দাবি, ওই গণহত্যায় যুক্তদের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা সারা জীবন চালিয়ে যাবেন তাঁরা।

২২ জুন রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে সিরিয়া-পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে মামলার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাধা দেয় চিন ও রাশিয়া। শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ৬০টি দেশ ওই প্রস্তাবের পক্ষে সায় দেয়। তবে তাতেও সামনে আসেনি দোষীরা। মজিদের কথায়, “আমরা জানি বিচার হবে না। মৃত্যুকেও আর ভয় পাই না। কিন্তু কয়েকশো বাচ্চার নিথর দেহ চোখের সামনে দেখাটা মৃত্যুর থেকেও বড় শাস্তি। আমাদের শত্রুদেরও যেন এমন দিন দেখতে না হয়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mass killing syria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE