চলছে তল্লাশি। ছবি: এএফপি।
এয়ার এশিয়া বিমান দুর্ঘটনার পর পেরিয়ে গিয়েছে এক সপ্তাহ। বিপত্তির পিছনে আবহাওয়ার যে বড়সড় ভূমিকা ছিল, এত দিন তা অনুমান করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। আজ প্রথম সরকারি ভাবে স্বীকার করে নেওয়া হল সেটা। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে রবিবার প্রায় চোদ্দো পাতার একটি রিপোর্ট দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ‘মেটেরোলজি, ক্লাইমেটোলজি অ্যান্ড জিওফিজিক্স এজেন্সি’ বা বিএমকেজি। মাঝ আকাশে বিমান অন্তর্ধানের কারণ হিসেবে প্রতিকূল আবহাওয়াকেই দায়ী করা হয়েছে সেখানে।
কী আছে ওই রিপোর্টে?
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শেষ পাওয়া তথ্য এবং বিমানটির অবস্থান থেকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে খারাপ আবহাওয়ার সন্দেহই জোরালো হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, বিমানে কোনও ভাবে বরফের আস্তরণ পড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ইঞ্জিন। তদন্তকারীদের আরও দাবি, উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, বিমানটি যে উচ্চতা দিয়ে যাচ্ছিল, তখন সেখানকার তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৮০ থেকে ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রবল ঝড়-বৃষ্টি আর তার সঙ্গেই ঘন ঘন বজ্রপাতের কথা আগেই জানিয়েছিলেন আবহবিদেরা। বিজ্ঞানীদের মতে, ওই ঝড়ের মধ্যে ছিল বরফের কুচি। বিপদ বাড়িয়েছিল এ সমস্ত কিছুই।
২৮ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে চাঙ্গি যাওয়ার পথে মাঝ আকাশে দুর্ঘটনার শিকার হয় এয়ার এশিয়ার বিমান কিউজেড-৮৫০১। দু’দিন পর জাভা সাগর থেকে মেলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও কিছু যাত্রীর মৃতদেহ। গত রবিবার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে যখন শেষ বার কথা বলেছিলেন চালক, নিজেই জানিয়েছিলেন আবহাওয়া ভীষণ খারাপ। বিমানটি আকাশেই তাই বড়সড় দুর্যোগে পড়েছিল বলে এত দিন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। আজ বিএমকেজি-র রিপোর্ট সিলমোহর দিল তাতেই। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিমানের ব্ল্যাক বক্স এখনও উদ্ধার হয়নি। শেষ পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা এই দাবি করলেও আসল কারণের হদিশ দেবে ব্ল্যাক বক্সই।
তবে এই আবহাওয়াকে ঘিরেই এ দিন দানা বেঁধেছে অন্য বিতর্ক। ইন্দোনেশিয়ার একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, আকাশে ওড়ার আগে বিমানচালকের হাতে আবহাওয়ার সর্বশেষ রিপোর্ট দেননি এয়ার এশিয়ার কর্মীরা। এই অভিযোগের পিছনে ইন্দোনেশিয়ার পরিবহণ মন্ত্রককে পাঠানো বিএমকেজি-র একটি তথ্যকেই হাতিয়ার করেছে তারা। সেখানে বলা হয়েছে, আবহাওয়া সংক্রান্ত শেষ যে খবর চালকের পাওয়া উচিত ছিল, তা দেওয়াই হয়নি তাঁকে। নিয়ম হল, যাত্রা শুরুর অন্তত দশ মিনিট আগেই বিএমকেজি-র পাঠানো রিপোর্ট জানাতে হয় চালককে। কিন্তু সে দিন ওই এয়ার এশিয়া ওই রিপোর্ট নিয়েছিল সকাল সাতটা নাগাদ। এ দিকে বিমান রওনা হয় সকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে। আবহাওয়ার রিপোর্টে চোখ না বুলিয়েই কি তা হলে ১৫৫ জন যাত্রীকে নিয়ে জাভা সাগরের উপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিলেন চালক, প্রশ্ন তুলছে ওই সংবাদ মাধ্যম।
এই অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি এয়ার এশিয়া। ইন্দোনেশিয়ার এয়ার এশিয়ার ডিরেক্টর সুনু উইডিআতমোকোর কথায়, প্রত্যেক উড়ানের আগেই ভাল করে খতিয়ে দেখা হয় আবহাওয়ার খুঁটিনাটি।
এ দিকে আজও আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়ার ব্যাহত হয়েছে তল্লাশি। তার মধ্যেই যদিও বেশ কিছু দেহ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। ১৬২ জন যাত্রী ও কর্মীর মধ্যে এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে মোট ৩৪ জনের দেহ। গত কাল জাভা সাগর থেকে তোলা গিয়েছিল বিমানের চারটি বড় টুকরো। আজ বিমানের আরও একটা বড়সড় অংশ জল থেকে তুলে এনেছেন তল্লাশিকারীরা। ঝোড়ো হাওয়া আর বিশাল উঁচু ঢেউয়ের তোড়ে ডুবুরি নামানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ানোয় দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন একটি ডুবোজাহাজ পাঠানো হয়েছে রবিবার। ব্ল্যাক বক্সের শব্দ তরঙ্গ ধরা পড়বে, পাঠানো হয়েছে এমন একটি পিং লোকেটরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy