Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সাগরে পড়ার মুহূর্তেও কি অক্ষত ছিল বিমান

ভয়ঙ্কর কিছু একটা হতে চলেছে, আঁচ করেছিলেন কি যাত্রীরা? এয়ার এশিয়ার বিমান উধাও হয়ে যাওয়ার চার দিনের মাথায় আপাতত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই প্রশ্নটাই। রবিবার ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের পথে মাঝ-আকাশেই হারিয়ে যায় এয়ার এশিয়ার বিমান কিউজেড-৮৫০১। গত কালই প্রথম সমুদ্রে ভাসতে দেখা যায় ধ্বংসাবশেষ। বোর্নিওর কাছে জাভা সাগরের ওই অংশ থেকে এখনও পর্যন্ত সাতটি দেহ মিলেছে।

কফিনবন্দি দেহ পৌঁছল সুরাবায়া বিমানবন্দরে। বুধবার। ছবি: এ এফ পি।

কফিনবন্দি দেহ পৌঁছল সুরাবায়া বিমানবন্দরে। বুধবার। ছবি: এ এফ পি।

সংবাদ সংস্থা
জাকার্তা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৭
Share: Save:

ভয়ঙ্কর কিছু একটা হতে চলেছে, আঁচ করেছিলেন কি যাত্রীরা? এয়ার এশিয়ার বিমান উধাও হয়ে যাওয়ার চার দিনের মাথায় আপাতত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই প্রশ্নটাই।

রবিবার ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের পথে মাঝ-আকাশেই হারিয়ে যায় এয়ার এশিয়ার বিমান কিউজেড-৮৫০১। গত কালই প্রথম সমুদ্রে ভাসতে দেখা যায় ধ্বংসাবশেষ। বোর্নিওর কাছে জাভা সাগরের ওই অংশ থেকে এখনও পর্যন্ত সাতটি দেহ মিলেছে। উদ্ধারকারী দলের অনেক সদস্যই জানিয়েছেন, লাইফ জ্যাকেট গায়ে দেওয়া একটি মৃতদেহ পেয়েছেন তাঁরা। অনেকেরই আবার পরনের জামাকাপড় রয়ে গিয়েছে অটুট।

আর এখানেই দানা বাঁধছে সন্দেহ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জল ছোঁয়া বা ডুবে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত এয়ারবাস ৩২০-২০০ ছিল অক্ষত। তাঁদের দাবি, মৃতদেহের পরিপাটি জামাকাপড় ইঙ্গিত করছে তেমনটাই। তা ছাড়া, এক জনেরও গায়ে লাইফ জ্যাকেট থাকার অর্থ, সেটি পরার সময় পেয়েছিলেন তিনি। আকাশেই যদি বিমান ভেঙে যেত বা বিস্ফোরণ হতো, লাইফ জ্যাকেট গায়ে দেওয়ার সময়টুকওু পেতেন না কেউ। নজরদারি বিমানের এক চালক আবার বুধবার জানান, হাতে হাত ধরে তিনটি লাশ ভাসতে দেখেছেন তিনি। দুর্ঘটনার অভিঘাতে যাত্রীরা যে সঙ্গে সঙ্গে মারা যাননি, এই ঘটনা তারই প্রমাণ বলে মনে করা হচ্ছে।

মৃত্যু যদি এক নিমেষে এতগুলো প্রাণ কেড়ে না-ই নেয়, তা হলে চালক কোনও বিপদ-বার্তা পাঠালেন না কেন সেই প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি আজও।

জল ছোঁয়ার আগে পর্যন্ত বিমান যদি অক্ষতই থাকে, তা হলে জোরালো হয় অন্য একটি সম্ভাবনাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক বিমানচালকের মতে, কিউজেড-৮৫০১ আকাশেই যে বড়সড় দুর্যোগে পড়েনি লাইফ জ্যাকেট পড়া দেহই তার আভাস দিচ্ছে। বিপদের কারণ হিসেবে সে ক্ষেত্রে আরও জোরদার হয় আকাশে বিমানের যন্ত্রপাতির কাজ বন্ধ করে দেওয়া বা এরোডায়ানামিক স্টল-এর তত্ত্বই।

মাঝ-আকাশে বিমানের ইঞ্জিন-সহ অন্যান্য কলকব্জা বিকল হয়ে যাওয়াতেই আস্ত বিমানটা জলে এসে পড়েছিল বলে অনুমান ওই চালকের। তাঁর কথায়, “রেডারে ধরা পড়া শেষ ছবিতে দেখা গিয়েছিল, ওই উচ্চতায় বিমানের যে গতিতে যাওয়ার কথা, কিউজেড-৮৫০১-এর তা ছিল না। মনে হচ্ছে, বিমানের যন্ত্রপাতি সব ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। ভুল রিডিং দেখাচ্ছিল মিটার। এই পরিস্থিতিতে বিমান যাতে ঠিক মতো ওড়ে, চালক সেই চেষ্টাই করবেন। এয়ার এশিয়ার ওই বিমানটির চালকও হয়তো সেটাই করছিলেন। তাই যাত্রীরা লাইফ-জ্যাকেট গায়ে চাপানোর ফুরসত পেলেও বিপদ বার্তা আসেনি এয়ারবাস ৩২০-২০০-র ককপিট থেকে।”

বিমান বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে থমাস আবার মনে করেন, আবহাওয়া যে সে সময় খুব খারাপ ছিল, এটিসিকে নিজেই সে কথা জানিয়েছিলেন বিমান চালক ইরিয়ান্তো। আর তা এড়াতেই হয়তো বিমানের গতি কমিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। শেষ মুহূর্তে এয়ারবাস ৩২০-২০০-র গতি ছিল ৩৫৩ নট। যা ওই উচ্চতায় স্বাভাবিক গতির চেয়ে প্রায় ১০০ নট কম। মালয়েশিয়ার একটি রেডার থেকে পাওয়া ছবিতেও বিমানটিকে ওই গতিতে উড়তে দেখা গিয়েছে। থমাস ও আরও কয়েক জন বিমান বিশেষজ্ঞের ধারণা, ‘ব্ল্যাক স্টর্ম সেল’ বা প্রবল শক্তিশালী বজ্রপাত ও বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে কম গতিতে যাওয়ার ফলেই গতি নির্ধারক যন্ত্র (পিতো টিউব)-এ বরফের আস্তরণ পড়ে যায়। ২০০৯ সালে এয়ার-ফ্রান্স দুর্ঘটনার সময়ও ঠিক এমনটাই হয়েছিল।

বিমান হারিয়ে যাওয়ার আগে সেটির উচ্চতা ছিল ৩২ হাজার ফুট। তা বাড়িয়ে ৩৮ হাজার ফুটে নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়ে ইন্দোনেশিয়ার এটিসিতে শেষ বার যোগাযোগ করেছিলেন ইরিয়ান্তো। এর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেও রেডার থেকে পুরোপুরি উবে যায় কিউজেড-৮৫০১। শেষ বার্তা পাঠাতেও কি অনেক দেরি করে ফেলেছিলেন চালক তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন সেই সম্ভাবনাও।

এয়ারবাস ৩২০-২০০-তে যে রেডার ছিল, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। প্রচণ্ড বিদ্যুৎ আর ঝড়ে পড়লে খারাপ হয়ে যেতে পারত এই বিমানের রেডার ব্যবস্থা। আর এতে চালককে নিজে নিজেই ঠিক করতে হতো অনেক কিছু। থমাসের ব্যখ্যা, এতে ভুলের আশঙ্কাও তাই অনেক বেশি। বিমানটির শেষ পরিণতি কী হয়েছিল, তা নিয়ে নানা তত্ত্ব আর জল্পনা জোরালো হলেও শেষ উত্তর দেবে বিমানের ব্ল্যাক বক্স। যদিও এখনও পর্যন্ত তা মিললে।

এরই মধ্যে আজ সুরাবায়ার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছল কফিন-বন্দী দু’টি দেহ। যে সাতটি দেহ এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে তার মধ্যে তিন জন পুরুষ, দুই মহিলা ও এক শিশু রয়েছে। দেহ শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে পরিজনের। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, যেখানে তল্লাশি কাজ চলছে সেই পাঙ্গকালান বান-এ নিয়ে যাওয়া হবে আত্মীয়দের। তাতে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হতে পারে ভেবে শেষমেশ বাতিল করা হয় সেই পরিকল্পনা। জল থেকে দেহ উদ্ধারের পর মৃতদেহের জন্য বিশেষ ব্যাগে পুরে তা আনা হচ্ছে পাঙ্গকালান বান-এর বিমান ঘাঁটিতে। সেখান থেকে সুরাবায়া বিমানবন্দরের ক্রাইসিস সেন্টারে আনা হচ্ছে শবদেহ। নববর্ষের রাতে উৎসব ভুলে আপাতত মৃতদেহ সংরক্ষণেরই আয়োজনে ব্যস্ত সুরাবায়ার বাসিন্দারা।

আজ প্রথমে শোনা গিয়েছিল, শব্দ তরঙ্গ শুনে সাগরের তলায় বিমানের কাঠামো কোথায় আছে, তা আন্দাজ করতে পেরেছেন উদ্ধারকারীরা। ভাইস এয়ার মার্শাল জানিয়েছিলেন, বিমানটি যেখানে আছে বলে গতকাল ভাবা হয়েছিল উত্তাল সমুদ্রে তা বোধ হয় আরও ৫০ কিলোমিটার দূরে সরে গিয়েছে। তবে বিমানের কাঠামো খুঁজে পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন এয়ার এশিয়ার সিইও টনি ফার্নান্ডেজ।

খারাপ আবহাওয়াতে এ দিন ব্যাহত হয়েছে তল্লাশির কাজ। ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি আর প্রায় তিন মিটার উঁচু ঢেউ-এর চোটে আজ শেষ পর্যন্ত কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন উদ্ধারকর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

air asia missing flight qz8501 indonesia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE