Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Narendra Modi

বাদল ঝড় সামলেই মোদী লোকসভা ভোটের প্রচারে ঝাঁপাবেন! জোর প্রস্তুতি শুরু গেরুয়া শিবিরে

অনেক আগে থেকেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। এত দিন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা রাজ্যে রাজ্য সফর করেছেন। এ বার স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী সফর শুরু করতে চান।

Narendra Modi

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ ১৭:০০
Share: Save:

সংসদের বাদল অধিবেশনে শুরু থেকেই ঝড় চলছে। মণিপুর নিয়ে উত্তাল লোকসভা এবং রাজ্যসভা। অনাস্থা প্রস্তাবও এনেছে বিরোধীরা। তবে সেই ঝড় সামলানোর মধ্যেই লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। এত দিন দলের অন্য কেন্দ্রীয় নেতা থেকে মন্ত্রীরা রাজ্যে রাজ্য সফর করছিলেন। এ বার স্বয়ং সেনাপতি ভোটের ময়দানে নামতে চলেছেন। বিজেপি সূত্রে খবর, সংসদে বাদল অধিবেশন শেষ হলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রচার সূচি তৈরি করে ফেলবে দল। আর প্রথম দফায় তিনি কোন কোন রাজ্যে যাবেন, তা মোদী নিজেই ঠিক করতে চান বলেও জানা গিয়েছে। সেই লক্ষ্যে সংসদে অধিবেশন চলার মধ্যেই দফায় দফায় শুধু দল নয়, এনডিএ-র সব সাংসদের সঙ্গে বসতে চলেছেন তিনি।

গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একাই জিতেছিল ৩০১টি আসন। অন্য শরিক দলের শক্তি মিলিয়ে লোকসভায় এনডিএ সাংসদের সংখ্যা ৩৩১। এই সব জেতা আসন ধরে রাখার পাশাপাশি হেরে যাওয়া আসনেও শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি। সব রাজ্যকে ইতিমধ্যেই লক্ষ্য বলে দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই মতো প্রস্তুতি নিতেও বলা হয়। সেই কাজ কতদূর হয়েছে জানার পাশাপাশি পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরির জন্যই সাংসদদের সঙ্গে বসে বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনাই এই বৈঠকের লক্ষ্য বলে জানা গিয়েছে।সামনেই চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। নভেম্বরে ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মিজোরামে বিধানসভা নির্বাচন। পরের মাস ডিসেম্বরে রাজস্থান এবং তেলেঙ্গানায় বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। তবে মোদীর লক্ষ্য ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের পাশাপাশি এখন থেকেই লোকসভা নির্বাচনের জন্য অন্য রাজ্যেও মোদী সভা করতে পারেন আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকেই। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, চলতি বছরের পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কতটা শক্তি পেতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলতে পারে। কিন্তু বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে লোকসভা ভোটের কোনও মিল খোঁজা অবান্তর। সম্পূর্ণ অন্য প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজনীতির দিকে তাকিয়ে এবং মোদীর মুখ দেখেই ভোট হবে। পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল যা-ই হোক না কেন, তাতে লোকসভার ফলে যে বিশেষ প্রভাব পড়বে না, সেই দাবি করতে পাঁচ বছর আগের উদাহরণ দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা।

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় বিজেপি। তিনটিতেই জয় পায় কংগ্রেস। পরে মধ্যপ্রদেশে জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডের নেতৃত্বে কংগ্রেস ভেঙে যাওয়ায় কমল নাথ সরকার পড়ে যায় এবং বিজেপির শিবরাজ সিংহ চৌহান মুখ্যমন্ত্রী হন। মিজোরামে এনডিএ শরিক মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট ক্ষমতায় এলেও বিজেপির তেমন সাফল্য নেই। আর ১১৯ আসনের তেলেঙ্গানায় বিজেপি জিতেছিল মাত্র দু’টিতে। এর পরেও গত লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পায় বিজেপি। জয় মিলেছিল বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়া রাজ্যগুলিতেও।এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মোদীর প্রচার সফরের পরিকল্পনা করতে চলেছে বিজেপি। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিতে চায় উত্তরপ্রদেশকে। ৩১ জুলাই থেকে ১১ অগস্টের মধ্যে মোট ১১ দফায় মোদী এনডিএ সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আর তাতে প্রথম দিনেই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, ব্রজ এবং কানপুর-বুন্দেলখণ্ড এলাকার সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর পরে ২ অগস্ট অওয়ধ, কাশী এবং গোরক্ষপুর এলাকার সাংসদদের বৈঠকে ডেকেছেন মোদী। ৮০ আসনের উত্তরপ্রদেশে এখন বিজেপির দখলে রয়েছে ৬৪ জন সাংসদ। শরিক আপনা দলের হাতে দু’টি। বাকি ১৪টি লোকসভা এলাকাতেও কী ভাবে জয়ের পথ তৈরি করা যায়, তার পরিকল্পনা এই বৈঠকে হওয়ার কথা। বিজেপির পুরনো সঙ্গী সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি সদ্যই এনডিএ-তে ফিরে এসেছে। শরিকদের কোন আসন ছেড়ে দিয়ে বিজেপি কোন কোন আসনে লড়বে, তারও রূপরেখা তৈরি হতে পারে সাংসদদের সঙ্গে আলোচনায়।

শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, একে একে সব রাজ্যের সাংসদদের সঙ্গেই বৈঠক করবেন মোদী। যেমন প্রথম দিনের বৈঠকেই উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে বাংলা, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার এনডিএ সাংসদদের ডাকা হয়েছে। মোদী ছাড়াও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা থাকবেন বৈঠকে। ডাকা হয়েছে দলের তিন প্রাক্তন সভাপতি অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, নীতিন গড়কড়িকে। এ ছাড়াও ১১ দফার বৈঠকের প্রতিটির জন্য একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মূল কাজ হবে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট রাজ্য বা এলাকার সব সাংসদকে মোদীর বৈঠকে হাজির করা। শুধু লোকসভা নয়, রাজ্যসভা মিলিয়ে মোট ৪৩০ জন এনডিএ সাংসদের সঙ্গে বসেই লোকসভা নির্বাচনের পরিকল্পনা করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। সাংসদদের সঙ্গে কথা বলে প্রচারের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হলেও শুরুতেই মোদীকে কোন কোন রাজ্যে এবং কোন এলাকায় নিয়ে যাওয়া দরকার, তার একটি তালিকা তৈরি করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ নিয়ে গত কয়েক দিন সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন নড্ডা। শনিবার নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিও ঘোষণা করেছেন নড্ডা। সেখানে অনেক নতুন নাম এসেছে। নতুন দুই সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তেলেঙ্গানার সঞ্জয় বান্দি এবং কেরলের অনিল অ্যান্টনি। বাকি চার পুরনো সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংহ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, তরুণ চুঘ এবং সুনীল বনসলকে নিয়ে শীঘ্রই একটি বৈঠক হওয়ার কথা নড্ডার। আলোচনার মূল বিষয় হতে পারে সংসদদের সঙ্গে মোদীর বৈঠক সফল করার পরিকল্পনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE