Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

১০ অক্টোবর ২০২৪ ই-পেপার

জীবনধারা

G C Laha art supplies store: ফোন করলে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি পৌঁছে যেত রং-তুলি, ১১৭ বছর ধরে রমরমিয়ে চলছে শহরের বিপণি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৪৮
ধর্মতলার মোড়ে ঠিক টিপু সুলতান মসজিদের উল্টো দিকের দোকানটি আশপাশের বেল্ট-জুতোর দোকানের ভিড়ে হয়তো অনেকেরই চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু শহরের শিল্পীরা এবং শিল্পপ্রেমীরা ঠিক জানেন সেখানে গেলেই পাওয়া যাবে আঁকার যাবতীয় সামগ্রী। গত ১১৭ বছর ধরে এই বিপণি রমরমিয়ে চলছে।

‘জি সি লাহা’র নাম এ শহরের শিল্পীরা ভালই জানেন। এমন কোনও ধরনের রং নেই যা এখানে পাওয়া যাবে না। নানা ধরনের আঁকার কাগজ, ক্যানভাস, ইজেল, সবেরই মজুত দেয় এই দোকান। রয়েছে নানা ধরনের ক্যালিগ্রাফির পেনও।
Advertisement
আর্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এই দোকানের নিত্য খদ্দের। তাঁদের মাসের যাবতীয় সরঞ্জাম আসে এখান থেকেই। তবে এই রীতি সাম্প্রতিককালের নয়, চলছে বহু বছর ধরে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু, গণেশ পাইন, মকবুল ফিদা হুসেনের মতো বহু বিখ্যাত শিল্পী এই দোকান থেকেই তাঁদের রং-তুলি কিনতেন। সেই তালিকার অন্যতম নাম অবশ্যই সত্যজিৎ রায়ও।

এখনকার যুগে অ্যামাজন বা ইনস্টাগ্রাম থেকে আঁকার জিনিস কেনার ঝোঁকের মাঝেও এই দোকান মাথা তুলে রয়েছে। এখনও শিল্পীরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রং-কাগজ কিনতে হাজির হন এখানেই। আগে থেকে অর্ডার দিলে সেই মতো ক্যানভাসও তৈরি করে দেওয়া হয় এখানে।
Advertisement
মাত্র ১৬ বছর বয়সে গিরীন্দ্র কুমার লাহা এই দোকানটি শুরু করেন। তার পিছনেও রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। তাঁর দাদু নবীন চন্দ্র দত্ত ভারতের প্রথম রং বিক্রেতা ছিলেন। বাড়ি-ঘরের জন্য রঙের জোগান দেওয়া ছিল তাঁর ব্যবসা।

এখনও ‘জি সি লাহা’ দোকান থেকে দু’-পা হাঁটলেই দেখা যায় ‘অক্ষয় কুমার লাহা’। প্রায় ১৫০ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেন্ট বিক্রি করছে তারা। ১৬ বছর বয়সে গিরীন্দ্রর মনে হয়েছিল, আঁকা জন্য রং-তুলির চাহিদাও কম নয়। তাই ১৯০৫ সালে নিজের দোকান শুরু করেন তিনি। এখন তাঁর পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম সিদ্ধার্থ লাহা চালান দোকানটি।

বহু বিখ্যাত শিল্পী নানা সময়ে এই দোকান থেকে তাঁদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনেছেন। সে সব গল্প এখনও এই দোকানের কর্মচারীদের মুখে শোনা যায়। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পী রাজা রবি বর্মার গল্প। তিনি নাকি এক সময় প্রুশিয়ান ব্লু রংটি খুঁজে পাচ্ছিলেন না কোথাও। তখন গিরীন্দ্রকে চিঠি লিখে সে কথা জানান। কোনও রকম অগ্রীম টাকাপয়সার কথা না বলেই গিরীন্দ্র তাঁকে রং পাঠিয়ে দেন।

তাতে রবি বর্মা এতই অবাক হয়ে যান যে পরবর্তীকালে এই দোকান ঘুরে যান। তার পর থেকে বহু বার এসেছিলেন। গিরীন্দ্রর সঙ্গে তাঁর বিশেষ বন্ধুত্বও হয়ে যায়। শোনা যায়, তিনি নাকি তাঁর আঁকা ছবিও উপহার দিয়েছিলেন গিরীন্দ্রকে।

 ‘উইনসর অ্যান্ড নিয়টন’এর সঙ্গে গোড়াতেই সুসম্পর্ক তৈরি হয় গিরীন্দ্রর। দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত তাদের মাল সরাসরি এই দোকানেই আসত। তা ছা়ড়াও ‘পেলিকান’, ‘ফ্যাব্রিয়ানো’, ‘লাইফলং কেট’-এর মতো বেশ কিছু সংস্থার সরঞ্জাম থাকত এই দোকানে। ধীরে ধীরে অন্য বিশ্বখ্যাত কিছু ব্র্যান্ড যেমন জার্মানির ‘স্ট্যাডলার’ বা ‘ফেবার ক্যাস্‌ল’-এর জিনিসও নিয়মিত বিক্রি হত এখানে। পরবর্তীকালে ভারতীয় ব্র্যান্ড ‘ক্যামেল’-এর জিনিসও জায়গা করে নেয় এই দোকানে।

সত্যজিৎ রায় নাকি এ দোকান ছাড়া অন্য কোনও দোকানের মাল কিনতে ভরসা পেতেন না। তখনও তিনি পরিচালনার পাশাপাশি ‘ডি জে কেমার’এ গ্রাফিক শিল্পী হিসাবে কর্মরত ছিলেন। নিজের অনেক ছবির পোস্টারও নিজে ডিজাইন করতেন। এই দোকান থেকে যেত লেআউট আঁকার খাতা এবং বিভিন্ন আঁকার ব্লক।

সে সময়ে অ্যামাজন বা অন্য নামী খাতা পেন্সিলের দোকান সে ভাবে ছিল না। কিন্তু জি সি লাহা’-এ নানা বিদেশি সরঞ্জাম পাওয়া যেত। সত্যজিৎ রায় ‘চাইনিজ পেলিকান’ কালি এবং ‘স্ট্যাডলার’-এর পেন্সিল কিনতেন এই জায়গা থেকেই। ফোন করলে মাল পৌঁছে যেত বাড়িতেই। যেহেতু সে যুগ থেকেই এই সুবিধা ছিল এ দোকানের, তাই এ যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে যে অসুবিধা হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। এখনও তাঁদের ওয়েবসাইট এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নানা সরঞ্জাম বাড়ি বসেই কিনে ফেলা যায়।