কোন তিন খাবার খেলে মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটতে পারে, না জেনেই খেয়ে চলেছেন বেশির ভাগই। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
রোজ এমন কিছু খাবার খাওয়া হয়, যা থেকে মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটতে পারে। ভাজাভুজি বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সময়ে তা খেয়াল থাকে না। খাবার থেকে যে কেবল পেটের গোলমালই হবে তা নয়। মস্তিষ্কে বিষক্রিয়াও হতে পারে। মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটলে তা থেকে রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন। ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে। খাবারের সঙ্গে মস্তিষ্কের প্রদাহ বা সংক্রমণের নিবিড় যোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আমেরিকার এক পুষ্টিবিদ বাইবিং চেন।
খাবারের সঙ্গে মস্তিষ্কে সংক্রমণের কী সম্পর্ক?
মস্তিষ্কে সংক্রমণ বলতে বোঝায় মস্তিষ্কের কোষ (এনসেফালাইটিস), মস্তিষ্কের আবরণী (মেনিনজাইটিস) বা উভয় স্থানে প্রদাহ। এই সংক্রমণ বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা হতে পারে,যেমন এন্টেরোভাইরাস, হার্পিস ভাইরাস, জ়িকা ভাইরাস বা ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস। স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা নামে কিছু ব্যাক্টেরিয়া রক্তপ্রবাহে মস্তিষ্কে পৌঁছোতে পারে। আবার কয়েক রকম ছত্রাকের সংক্রমণেও মস্তিষ্কে প্রদাহ হতে পারে।
এই সব ভাইরাস , ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটতে পারে বিভিন্ন খাবার ও দূষিত জল থেকে। কোন কোন ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে, তার পরামর্শও দিয়েছেন পুষ্টিবিদ।
সামুদ্রিক মাছ বা যে কোনও রকম সি-ফুড
সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া বা সি-ফুড খেলেই যে মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটবে তা নয়। বরং, অনেক সামুদ্রিক মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তবে যে সব বড় মাছ প্রবাল প্রাচীরের আশপাশে থাকে, তেমন কিছু মাছ খেলে বিপদ ঘটতে পারে। ওই সব মাছে সিগুয়াটক্সিন নামে এক ধরনের বিষ থাকে, যা থেকে মস্তিষ্কে ভয়ঙ্কর সংক্রমণ ঘটতে পারে। সোর্ডফিশ, কিং ম্যাকারেল, রেডস্ন্যাপার জাতীয় মাছ অনেকে শখ করে খান। সম্প্রতি ম্যাঙ্গালুরু ও তিরুঅনন্তপুরমে এমন মাছ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে।
বাঙালির হেঁশেলে এই সব মাছ রান্না হয় না। তবে চিংড়ি, কাঁকড়া রসিয়েই রাঁধা হয়। তবে সেগুলিও পরিষ্কার করা, সংরক্ষণ ও রান্নার নিয়ম আছে। সি-ফুড বেশি দিন ফেলে রেখে খেলে বা ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে, তার ভিতরে থাকা ভারী ধাতু, পিউরিন রক্তে মিশে মস্তিষ্কে গিয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। আবার সি-ফুডে সালমোনেল্লা নামক এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়, যা থেকে বিষক্রিয়া হতে পারে।
প্যাকেটেবন্দি বা টিনের খাবার
প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার প্রবণতা এখন বেশি। রান্নার সময় বাঁচাতে এখন প্যাকেটবন্দি খাবার বা টিনের খাবার খাওয়ার চল হয়েছে এ দেশেও। তার উপর ফ্রোজ়েন ফুড অনলাইনে অর্ডার দিলেই পাওয়া যায়। সেগুলি কিনে কম সময়ে সেদ্ধ করে বা ভেজে নিলেই হল। এই সব খাবার দীর্ঘ দিন ধরে সংরক্ষণ করা হয়। ফলে তার মধ্যে ক্লসট্রিডিয়াম বটুলিনাম নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। এই ব্যাক্টেরিয়া থেকে ‘বটুলিনাম টক্সিন’ নামে এক প্রকার বিষ তৈরি হয়, যা শরীরে গেলে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটতে পারে। ‘বটুলিনাম টক্সিন’ কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রাতেও নষ্ট হয় না। তাই প্যাকেটের খাবার না খাওয়াই ভাল।
আধসেদ্ধ সব্জি, মাংস
আধসেদ্ধ বা কম আঁচে রান্না করা মাংস, মাছ ও সব্জিতে যদি ফিতাকৃমির ডিম থাকে, তা হলে তা মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে। এর পাশাপাশি অপরিশোধিত জল থেকেও হতে পারে এই সংক্রমণ। মাঠে বা ঘাসজমিতে পড়ে থাকা মলে কৃমির ডিম থাকে। সেই ঘাস খায় গবাদি পশু, ফলে ওই ডিম তাদের শরীরে প্রবেশ করে। লার্ভা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাংসপেশিতে। সেই মাংস ভাল করে ধুয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রান্না করে না খেলেই সমস্যা!