স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েও বশে থাকছে না শর্করা? ভুল কোথায়? ছবি: সংগৃহীত।
স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন। ব্রাউন ব্রেড, পিনাট বাটার তালিকায় রেখেছেন। খাচ্ছেন এখন যা কিছু ‘স্বাস্থ্যকর’ বলে পরিচিত, তার সবটাই। তবু বশে আসছে না রক্তের শর্করা? কেন?
ডায়াবিটিস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন তাঁরা বলছেন, সরাসরি চিনি যেমন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, তেমনই অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটও গোপন শত্রু হতে পারে। আসলে ডায়াবিটিস শুধুমাত্র চিনি খাওয়ার উপরে নির্ভর করে না। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে আরও অনেক শর্ত।
দিল্লির চিকিৎসক রিচা চর্তুবেদির কথায়, লোকজন দৈনন্দিন খাবারে ক্যালোরি, প্রোটিন, ফ্যাটের কথা মাথায় রাখতে গিয়ে সেই খাবারের উপকরণের তালিকায় গুরুত্ব দেন না। অনেক সময় সরাসরি চিনির উল্লেখ না থাকলেও সরল শর্করা বা এমন কোনও উপাদান সেই খাবারে রয়ে যায়— যা চিনির মতো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ‘স্বাস্থ্যকর’, ‘কম ফ্যাটযুক্ত’ খাবার বলে বিক্রিত খাবারেও গোপনে রয়ে যেতে পারে সেই শর্করা।
কার্বোহাইড্রেট এবং ডায়াবিটিস
ডায়াবিটিস হলে চিনি খেতে বারণ করেন চিকিৎসকেরা। ডায়াবিটিসের চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝি বলছেন, "ডায়াবিটিস হলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা এবং ক্যালোরি মেপে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। সে কারণেই ডায়াবেটিকদের শর্করা জাতীয় খাবারে রাশ টানতে বলা হয়।" কার্বোহাইড্রেট মানেই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর, এমন নয়। প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেটেও প্রয়োজন রয়েছে। তবে এক জন সুস্থ মানুষ দৈনিক যতটা কার্বোহাইড্রেট খেতে পারেন, ডায়াবিটিস হলে তা চলে না। চিকিৎসক রিচা সতর্ক করছেন, অনেক খাবারের গায়ে হয়তো চিনি বলে উল্লেখ থাকে না। কিন্তু ফ্রুক্টোজ, মল্টোডেক্সট্রিন-সহ এমন অনেক উপকরণ হয়তো সংশ্লিষ্ট খাবারে মেশানো হয়, যা চিনির মতোই কাজ করে। কোনও খাবারের প্রাকৃতিক মিষ্টত্ব এক জিনিস, কিন্তু কৃত্রিম জিনিস শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।
অনেকেই ময়দা ছেড়ে মাল্টিগ্রেন ব্রেড খান। সাধারণ মাখনের বদলে চিনেবাদামের মাখন খান। বাজারচলতি সিরিয়াল খান। স্বাস্থ্য ভাল করতেই এই বদল। কিন্তু তা কি উপকার করে? অভিজ্ঞানের কথায়, "মাল্টিগ্রেন ব্রেডে বাড়তি ফাইবার এবং পুষ্টিগুণ মেলে। ডায়াবেটিকদের খাদ্যতালিকায় ফাইবার থাকা খুব জরুরি। কারণ দেখা যায়, কেউ যদি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খান, তখন আর রক্তে শর্করার মাত্রা ঝট করে বেড়ে যেতে পারে না। ফাইবার এ ক্ষেত্রে ছাঁকনির কাজ করে।"
কোন খাবার নিয়ে সতর্কতা জরুরি?
অনেক সময় বিভিন্ন ফলের স্বাদ-গন্ধ যুক্ত ইয়োগার্ট, বাজারচলতি সিরিয়াল এবং মুজ়লিতে অল্পবিস্তর চিনি যুক্ত থাকে। চিনি একেবারেই বাদ দিতে হলে তাই ঘরোয়া খাবারেই জোর দিতে বলছেন চিকিৎসকেরা। ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কার্বোহাইড্রেট যেমন কমিয়ে ফেলতে হবে তেমনই প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন এবং খনিজযুক্ত খাবারে জোর দেওয়া দরকার। আর দরকার হাঁটাহাটি অথবা শরীরচর্চা। অভিজ্ঞান বলছেন,‘‘পরিমিত ভাত এবং রুটির সঙ্গে প্রচুর শাকসব্জি এবং বিভিন্ন ফলমূল খেলেও শরীর ভাল থাকবে। আর দরকার নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।’’ পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, যা-ই খান, ক্যালোরি কোনটায় কত বুঝে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিমিত খাদ্যগ্রহণই সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।