Advertisement
Nutritionist Dr Ananya Bhowmik

পুজোর আগেই চটজলদি ওজন কমানোর তাগিদে পুষ্টি অধরা থাকছে না তো? কী বলছেন নিউট্রিশনিস্ট ডাঃ অনন্যা ভৌমিক

পুজোর আগেই চটজলদি ওজন কমানোর তাগিদে পুষ্টি অধরা থাকছে না তো? কী বলছেন নিউট্রিশনিস্ট ডাঃ অনন্যা ভৌমিক

পুজো আসছে। এই সময়ে দীপিকা, আলিয়া, ক্যাটরিনার মতো ছিপছিপে শরীর না হলেই যেন নয়!

পুজো আসছে। এই সময়ে দীপিকা, আলিয়া, ক্যাটরিনার মতো ছিপছিপে শরীর না হলেই যেন নয়!

আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:৫১
Share: Save:

পুজো আসছে। এই সময়ে দীপিকা, আলিয়া, ক্যাটরিনার মতো ছিপছিপে শরীর না হলেই যেন নয়! সপ্তমীর লুকে, ছবি ফেসবুকে আপলোড হতে না হতেই কমেন্টের বন্যা না বইলে আর কিসের পুজোর সাজ! অতঃপর শুরু ডায়েট। নেট দুনিয়াতে ইতিমধ্যেই ভাইরাল লেবু-কফির হ্যাক। খেলেই কমবে ওজন, বিশেষ করে বহু দিনের জমে থাকা ভুঁড়ির মেদ। এ ছাড়াও কিটো ডায়েট, জেনারেল মোটরস ডায়েট, লিকুইড ডায়েট, ক্র্যাশ ডায়েট- গুগলে আছে রকমারি পথের হদিশ। অধিকাংশ মানুষই পুজোর আগে চটজলদি ওজন কমানোর আশায় এই সব ডায়েটের পথে হাঁটেন, অদূর ভবিষ্যতে কী ক্ষতি হতে পারে সেটা না ভেবেই।

অজান্তে কী কী ক্ষতি হচ্ছে এই ধরনের ডায়েটে?

মানুষের সার্বিক সুস্থতার প্রাথমিক শর্তই হল পর্যাপ্ত ও যথাযথ ডায়েট। প্রত্যেক মানুষের শরীর অনুযায়ী খাওয়াদাওয়ার ধরন ও প্রয়োজন আলাদা হয়। গুগল দেখে, না বুঝে যেমন খুশি ডায়েট করলে ওজন হয়তো কমছে, কিন্তু শরীরেরও ক্ষতি হচ্ছে। এমনটাই মনে করছেন ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ডাঃ অনন্যা ভৌমিক।

একটা পর্যাপ্ত ডায়েট হল প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের সঠিক সংমিশ্রণ। এর থেকে অন্য রকম কিছু মানেই সেটা অস্বাস্থ্যকর।

একটা পর্যাপ্ত ডায়েট হল প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের সঠিক সংমিশ্রণ। এর থেকে অন্য রকম কিছু মানেই সেটা অস্বাস্থ্যকর।

‘‘কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট কোনও জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদী নয়, যে জীবন থেকে বাদ দিয়ে দিতে হবে।’’-  ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ডাঃ অনন্যা ভৌমিক

‘‘কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট কোনও জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদী নয়, যে জীবন থেকে বাদ দিয়ে দিতে হবে।’’- ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ডাঃ অনন্যা ভৌমিক

সব থেকে বড় বিষয় হল, এই ধরনের ডায়েট দু’মাসের বেশি কেউ করে না। ফলে ডায়েট ছেড়ে সাধারণ জীবনযাপনে ফিরলেই ওজন দ্রুত গতিতে আবার আগের জায়গায় চলে যায়। এই যে, বার বার ওজন কমছে-বাড়ছে ইলাস্টিকের মতো, এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর। মুখ থেকে শুরু করে পায়ু, এই জিআই সিস্টেমের বাহ্যিক কিছু চাহিদা আছে। এই ধরনের ডায়েট সেগুলি পূরণ করতে পারে না। এমন ডায়েটের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল- চুল পড়ে যাওয়া, খিদে না পাওয়া, প্যালপিটিশন হওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়াও ডিহাইড্রেশন, অ্যানিমিয়া, গল ব্লাডার স্টোন জাতীয় সমস্যার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ঘন ঘন কিটো ডায়েট করলে 'কিটো ফ্লু' হয়। কিটো ডায়েট প্রস্রাবের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স নষ্ট হয়; সোডিয়াম, পটাশিয়াম , ম্যাগনেশিয়াম-এর মাত্রা নষ্ট হয়ে গিয়ে কিডনির অসুখের সম্ভাবনা দেখা দেয়। আদতে এই ধরনের ডায়েট করে মানুষ উল্টে রোগ ডেকে আনেন।

অনন্যার কথায়, ‘‘সমীক্ষা অনুযায়ী, এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক ডায়েটের ফলে মৃত্যুহারও বাড়ছে।’’

অদূর ভবিষ্যতে কারও কী কী রোগ হতে পারে, তার অনেকটাই নির্ভর করে সেই মানুষটির বর্তমান জীবনশৈলীর উপরে। জেনেটিক্সের পাশাপাশি এই জীবনশৈলী অনেকটাই এতে দায়ী। ক্র্যাশ ডায়েট, লিকুইড ডায়েট কিংবা ৮০০ ক্যালরির ডায়েটে অনেক সময়েই দেখা যায় ‘মিল রিপ্লেসমেন্ট’ বিষয়টি। মিল রিপ্লেসমেন্ট করে সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের কেউই বিজ্ঞানসম্মত ভাবে কাজটি করছেন না। এ বিষয়ে নিউট্রিশনিস্ট বলেন, ''পরিমাণে অল্প হলেও শরীরে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস প্রয়োজন। প্রাকৃতিক খাবার থেকে তৈরি হওয়া মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস অনেক উন্নত। কৃত্রিম হেলথ সাপ্লিমেন্টগুলি সেই চাহিদা পূরণ করতে পারে না। ফলে দীর্ঘ সময়ে একটা ঘাটতি তৈরি হয়। অনেক সময়ে, বড় অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে লিকুইড ডায়েট বা হেলথ সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয় হাসপাতালগুলিতে। রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মনে রাখতে হবে একটা পর্যাপ্ত ডায়েট হল প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের সঠিক সংমিশ্রণ। এর থেকে অন্য রকম কিছু মানেই সেটা অস্বাস্থ্যকর।”

অনন্যার মতে, পুজোর আগে ওজন কমিয়ে সুন্দর হব, মানুষ ছবি লাইক করবে- এই সামাজিক খ্যাতির চাইতে জীবন অনেকটা বড়, যেখানে সার্বিক ভাবে সুস্থ থাকাটাই হল আসল কথা।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE