করণ জোহর থেকে রাম কপূর, কপিল শর্মা সহ একাধিক বলিউড ব্যক্তিত্ব সাম্প্রতিক অতীতে দ্রুত এবং ব্যাপক হারে ওজন কমিয়ে তাক লাগিয়েছেন। আপনিও কি ওজন কমাতে নিয়মিত জিমে যাচ্ছেন, শরীর চর্চা করছেন, তাও কোনও ফিটনেস ট্রেনারের সাহায্য ছাড়াই? অজান্তেই এই কাজগুলি করে নিজের বিপদ ডেকে আনছেন না তো? কী জানালেন বিশেষজ্ঞ?
দ্রুত ওজন কমাতে কী করছেন তারকারা?
দ্রুত ওজন কমাতে বিভিন্ন তারকারা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন। কেউ কেউ ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করছেন তো কেউ আবার কড়া ডায়েট মেনে চলছেন। কপিল শর্মা যেমন শরীর চর্চা, ডায়েটের পাশাপাশি ধূমপান, কফি খাওয়া, মদ্যপান করাও বন্ধ করেছিলেন ওজন কমাতে। কোনও কোনও তারকা আবার সাঁতার বা স্টেরয়েডের সাহায্যও নিয়ে থাকেন সহজে রোগা হওয়ার জন্য। কিন্তু তাঁরা যাই করুন না কেন সবটাই করে থাকেন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে, তাঁদের তত্ত্বাবধানে।
তারকাদের মতো দ্রুত ওজন কমানোর হিড়িক বর্তমানে সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটা কি আদৌ ঠিক, নাকি তার ক্ষতিকর কোনও দিকও রয়েছে, যা অজান্তেই বিপদ ডেকে আনছে? ফিটনেস এবং জিম ট্রেনের কুণাল দাসের কথায়, ''আজকাল অনেককেই দেখি শাহরুখ, সলমন জিমে গিয়ে কী করছেন সেই ছবি, ভিডিয়ো দেখে এসে সেটা নকল করতে শুরু করে দেন। বিশেষ করে এই সদ্য স্কুলের গণ্ডি টপকানো ছেলেমেয়েরা। এঁরা বোঝেন না কেবল শরীর চর্চা নয়, তারকারা নির্দিষ্ট ডায়েট মেনেও চলেন। সবথেকে বড় কথা তাঁদের সকলের ফিটনেস ট্রেনার থাকে।''
আরও পড়ুন:
তাহলে কী করণীয়? কুণাল বলেন, ''ব্যক্তিগত ট্রেনারের তত্ত্বাবধানে শরীর চর্চা করা উচিত। শরীর চর্চার আগে হার্টরেট ভ্যারিয়েবিলিটি দেখা উচিত। আজ যে পরিমাণ শরীর চর্চা করছেন, বা যতটা কসরত করছেন কাল যে সেই একই পরিমাণ কসরত করবেন বা শরীর চর্চা করতে হবে সেটা কিন্তু নয়। বরং কমবে। হার্টরেট মনিটর করাও জরুরি। কেবল এটা নয়, ওজন কমানো বা সুস্বাস্থ্যের জন্য আরও একটা দিক বিবেচনা করা জরুরি। আমাদের কাজের চাপ, স্ট্রেস কতটা আছে, ঘুম কতটা হচ্ছে সেটাও দেখতে হবে। হৃদয় এবং মস্তিষ্ক ভাল রাখতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। কিন্তু সেটা তো আজকালকার দিনে অধিকাংশ মানুষের হয় না। এটার একটা খারাপ প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যের উপর।''
ইদানিংকালে শরীর চর্চার সময় অল্পবয়সীদের মধ্যে এত হৃদরোগের ঘটনা কেন ঘটছে? এর সঙ্গেও কি এই অতি কসরত জড়িয়ে? ফিটনেস ট্রেনার দাস বললেন, ''লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ট্রেডমিলে দৌড়ানোর সময় এঁরা হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, অন্যান্য ব্যায়ামের সময় নয়। কিন্তু এটা কেন? কারণ ট্রেডমিলে দৌড়ানো আসলে একটি অ্যারোবিক ব্যায়াম, এতে অক্সিজেন বেশি লাগে। কিন্তু দ্রুত ওজন কমাতে অনেকেই বেশি মাত্রায় দৌড়ান, ঘাম ঝরান। সম্পূর্ণ নজর থাকে ওজন মেশিনের কাঁটায়, খেয়াল থাকে না হার্টরেটের দিকে। আর এভাবে চলতে থাকে হার্ট দুর্বল হতে থাকে। এই ব্যায়াম অতিরিক্ত মাত্রায় করার ফলে আমাদের কার্ডিয়ো ভাসকুলার পেশী দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সেই কারণেই এই বিপদ হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, আমরা জিমে ট্রেন হতে যাই, ড্রেন নয়।''
কুণালের সাফ কথা, ''তারকারা অনেক সময়ই ফ্যাট লস করার পাশাপাশি মাসেল লস করছেন, সেটা কিন্তু কাম্য নয়। নজরটা বডি ফ্যাট পরিমাণের দিকে থাকতে হবে, সেটা ঝরাতে হবে। মাসেল নয়।''
নিজেকে সুস্থ রেখে ওজন কমানোর জন্য কী করবেন তবে?
ওজন কমানোর ট্রেনিং তো করবেনই, কার্ডিয়ো ব্যায়াম ততটাই করবেন যতটা প্রয়োজন, তবে সবটাই বিশেষজ্ঞের নজরদারিতে, ইউটিউব দেখে নয়। আর অবশ্যই তার সঙ্গে ডায়েটের দিকে নজর রাখতে হবে, মত কুণালের।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।