সাংবাদিক ও সম্পাদকদের আপত্তি উপেক্ষা করে ‘ডিজিটাল সুরক্ষা আইন-২০১৮’ সংসদে পাশ করাল শেখ হাসিনা সরকার। বিলটির নানা বিতর্কিত বিষয় উল্লেখ করে সেটি বাছাই কমিটির কাছে পাঠানো ও সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিরোধী জাতীয় পার্টি ও নির্দল সাংসদরা। কিন্তু তাতে আমল না দিয়ে বুধবার রাতে ধ্বনি ভোটে বিলটি পাশ করিয়ে নেওয়া হয়।
প্রাস্তাবিত আইনটিকে ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণতন্ত্রের হুমকি’ বলে বর্ণনা করে সেটি পাশ না-করাতে এক সপ্তাহ আগেও পরামর্শ দিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। সংসদীয় কমিটির সঙ্গে দু’দফা বৈঠকে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নও অন্তত ১০টি ধারা সংশোধন ছাড়া বিলটি পাশ না-করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু বুধবার সংসদে বিলটি ভোটাভুটির জন্য পেশ করে দেন ডাক, টেলিযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। কয়েক ঘণ্টা আলোচনার পরে অনেক রাতে সেটি পাশও হয়ে যায়। তবে নতুন আইনে আগের ২০০৬-এর তথ্য ও যোগাযোগ আইনের ৫৭ ধারাটি বাতিল করা হয়েছে। এই ধারায় ডিজিটাল মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত মানহানি, অশ্লীলতা, মিথ্যা তথ্য ও গুজব প্রচার করলে ৭ থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান ছিল।
তবে নতুন আইনে সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে কেউ ওই অপরাধগুলি প্রথম বার করলে তাঁর ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। একাধিক বার এই অপরাধ করলে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায়ের কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুষমার বৈঠকে কর্তারপুর
নির্বাচনের আগে সরকার এই বিতর্কিত আইনটি পাশ করানোয় সাংবাদিক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এক নেতার কথায়, আইনটিতে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-এর মতো সামাজিক মাধ্যম ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমকেএকই শ্রেণিতে ফেলে বিচার ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, যা মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর কথায়, নির্বাচনের আগে এই আইন প্রণয়নে সরকারের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে। তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারে না, এমন ধারণা মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল হবে। মনে হওয়া স্বাভাবিক, সংবাদ মাধ্যমকে সরকার প্রতিপক্ষ হিসাবে মনে করছে।
আরও পড়ুন: গলেনি বরফ, তবু পাক বৈঠকে দিল্লি
মন্ত্রী জব্বারের দাবি, ‘‘আইনটির খসড়া নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে একাধিক বার আলোচনা হয়েছে। তাঁরা ৩২ নম্বর ধারা নিয়ে আপত্তি করায় তাতে সংশোধন করে বলা হয়েছে, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘন করলে তবেই তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।’’ তিনি জানান, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘনের নজির বাংলাদেশে নেই। তাই সাংবাদিকদের আতঙ্কিত হওয়ারও কারণ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy