বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আফগানরা। ছবি: এএফপি।
আশির দশকে তিনি রঞ্জি ট্রফি মাতিয়েছেন। প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে ১১০ ম্যাচে রান ৭৯৮৮। ২০ সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ৪৬টি অর্ধশতরান। মুম্বইয়ের এই ওপেনার ভারতের হয়ে খেলেছেন ২ টেস্ট, ৪ ওয়ানডে। ১৯৮৫ সালে কলম্বো টেস্টে তার অভিষেকটা ছিল কাকতালীয়। ১২৫ টেস্টে ১১৯টিতে ওপেন করা গাওস্কর সেই সফরে জানিয়ে দিলেন ওপেনিং করবেন না। বাধ্য হয়ে তখন মহারাস্ট্রের ওপেনার লালচাঁদ রাজপুত ডাক পেলেন। অভিষেক টেস্টে দু’ইনিংসে ৩২ ও ৬১ এবং পি সারা স্টেডিয়ামের পরের টেস্টে ০ ও ১২। ওখানেই শেষ তাঁর টেস্ট কেরিয়ার। ক্রিকেট কেরিয়ার ছেড়ে মহারাস্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদদের দায়িত্ব পালন করেছেন। আইপিএলের প্রথম পর্বে ছিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কোচ। ভারত ক্রিকেট দলের সর্বশেষ কোচ নিয়োগে যে তিনজনের বায়ো ডাটা ছিল বিসিসিআই-এর টেবিলে, সেই তালিকায় ছিলেন লালচাঁদ রাজপুত।
ভারতের কোচ নিয়োগের লড়াইয়ে অনিল কুম্বলের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। কিন্তু ইনজাজাম পরবর্তী আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নিয়ে মাত্র ৪ মাসেই বদলে দিয়েছেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশটির ক্রিকেট। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলতি ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের জয়ে উঠে এসেছে তার নাম। বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার বাঁ হাতি হওয়ায় নুতন বলে ডান হাতি অফ স্পিন তাঁদের বেগ দেবে, এই আইডিয়া থেকেই অফ স্পিনার মোহম্মদ নবিকে দিয়ে বোলিং আক্রমন শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কোচ লালচাঁদ। কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়ে ১০ ওভারে ১৬ রান দিয়ে নিয়েছেন দু’উইকেট। নুতন বলে দুই প্রান্ত থেকে পেস অ্যাটাকে অভ্যস্ত হয়ে পড়া আফগানিস্তান মুখস্ত গেম প্ল্যান থেকে বেরিয়ে এসেই পেয়েছে সাফল্য। বাংলাদেশকে ২০৮ রানে বেঁধে ফেলে জিতেছে আফগানরা জিতেছে দু’উইকেটে। বাংলাদেশের মাটিতে দ্বি-পাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে আতিথ্য পাওয়াকেই বড় সুযোগ আর অভিজ্ঞতা অর্জন বলে দেখেছেন যিনি, সেই লালচাঁদ রাজপুতই এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের ছক কষছেন!
মাত্র ৭ বছর আগে ওয়ানডে খেলার মর্যাদা পেয়েছে আফগানিস্তান। এইটুকু সময়ে অন্য এক আফগান দলের আবির্ভাব দেখছে বিশ্ব। ৬৭ ওয়ানডেতে ৩৫ জয়, যেখানে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ জিম্ববোয়ের বিপক্ষে ১৪ ম্যাচে জয় ৮টি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেখানে ৪টি লড়াইয়ে ফলাফল ২-২। ২০১৪ সালে এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে ৩২ রানে হারিয়ে দেওয়া আফগানদের সেই জয়টিকে ফ্লুক বলে ধরে নিয়েছেন যারা, এখন তারাই আফগান শক্তিকে সমীহ করছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭ রানে হারে আফগান বীরত্ব দেখেছে বিশ্ব।স্থানীয় কোচ তাজ মালিকে দিয়ে শুরু আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। পাকিস্তান কোচ কবির খানের কৌশলে আইসিসি’র প্রথম কোনও পূর্ণ সদস্য দেশ বাংলাদেশকে হারিয়েছে তারা ২০১৪ সালে। ব্রিটিশ কোচ অ্যান্ডি মোলসে কোয়ালিফাইয়ারের বাধা পেরিয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলেছে আফগানিস্তান। ওয়ানডে এবং টি-২০,দুই ভার্সনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্ববোয়ের বিরুদ্ধে জয় ছাড়া তাদের উপর্যুপরি ২টি ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে আফগানরা। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচকের অফার পেয়ে ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপ শেষে আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব থেকে ইনজামাম পদত্যাগ করলে কোচের শূন্যপদে গত জুনে লালচাঁদ রাজপুতকে দিয়েছে দায়িত্ব দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। মাত্র ৪ মাসেই অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি। স্কটল্যান্ডের মাটিতে স্কটিশদের ১-০তে হারিয়ে, আয়ারল্যান্ডের মাটিতে তাদের সঙ্গে ২-২ ড্র করে বাংলাদেশ সফরে ইতিমধ্যে ১-১ এ সমতায় বড় কোনও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানরা। দায়িত্ব নিয়ে আফগান ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছেন লালচাঁদ। আফগান মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হাসমাতুল্লা শহীদি কোচের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, “গত এক বছর আফগানিস্তানের ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে। ইনজামাম-উল-হক কোচ হিসেবে দারুণ কাজ করেছেন। এখন রাজপুত স্যারও খুব ভাল করছেন। আমাদের নিয়ে তিনি অনেক পরিশ্রম করছেন। বিশ্বের সেরা দলগুলোর মধ্যে আমরা যে একটি, সে আত্মবিশ্বাস আমাদের মধ্যে এনে দিয়েছেন তিনি। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক না কেন, রাজপুত স্যার সব সময় ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে বলেন আমাদের। ৫০ ওভারের ম্যাচ কী ভাবে খেলতে হয়, তা শিখিয়েছেন তিনি। সিঙ্গেলসে জোর দিয়ে শেষ বল পর্যন্ত খেলার শিক্ষাটা দিয়েছেন।” শিষ্যরা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছেন তাঁর নির্দেশ। আর তাতেই বাংলাদেশ সফরে সিরিজ জয়ের মতো অসাধ্য সাধনের স্বপ্ন দেখছেন লালচাঁদ। তিনি বলেন, “ছেলেদের বলেছি ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে। ম্যাচটা জিতলে এটা আফগানিস্তানের জন্য ইতিহাস হবে। আমি শুধু দলটার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশ টেস্ট খেলুড়ে দেশ। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাই ছেলেদের বলেছি, তাদেরকে হারাতে হলে টি-২০ স্টাইলে ব্যাটিং বাদ দিয়ে ধৈর্য ধরে খেলতে হবে।” লালচাঁদ রাজপুতের শেষ বল পর্যন্ত খেলার মন্ত্রটা ধারণেই তা হলে ওয়ানডে ক্রিকেটে দিন বদলের গান গাইছে আফগানিস্তান।
আরও পড়ুন:
সাকিবের রেকর্ডের ম্যাচে খলনায়ক মুশফিকুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy