ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও সে মোস্ট ওয়ান্টেড— সোহেল মাহফুজ ওরফে নাসিরুল্লা। গত ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় কাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত নাসিরুল্লাকে ধরতে ভারত সরকার ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র সেই শীর্ষ জঙ্গিকে শনিবার ভোরে গ্রেফতার করা হয়েছে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে।
পুরস্কার ঘোষণার পর ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে আসে নাসিরুল্লা। পুলিশ জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকাতে ছিল সে। একটি হাত না থাকাতে সহজেই তাকে চিহ্নিত করা সম্ভব। সে কারণেই সাধারণ মানুষ থেকে দুরে লুকিয়ে থাকত এই জঙ্গি। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী সোহেল মাহফুজ কিছু দিন ভারতে পলাতক ছিল। সেই সময়ে সে সেখানে জেএমবি-র শাখা গঠন করে। জেএমবি-র ভারতীয় শাখা আমিরের দায়িত্ব নেয় বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গ্রেফতার খাগড়াগড় কাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত নাসিরুল্লা
বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, “সোহেল মাহফুজ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ফের বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর পর সে পুরনো জেএমবি ছেড়ে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়।” মনিরুল বলেন, “গত বছর হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরিকল্পনার সময় সে উপস্থিত ছিল। হামলার আগে সে অস্ত্র ও গ্রেনেড নিয়ে আসে।”
পুলিশ সূত্রে খবর, বাংলাদেশে জেএমবি-র উত্থানকালে এই মাহফুজ ছিল তৎকালীন জেএমবি নেতা সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইয়ের সহযোগী এবং জেএমবি-র প্রতিষ্ঠাকালীন শূরা সদস্য। সেই সময়ে ২০০৫ সালে নওগাঁর আত্রাই এলাকায় বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে বোমা বানাতে গিয়ে সোহেলের একটি হাত উড়ে গিয়েছিল। গুলশনের হোলি আর্টিজান বেকারিতে গত বছরের হামলায় জড়িত সন্দেহে তাকে খুঁজছিল পুলিশ। সেই হামলার মূল চক্রী হিসেবে বিস্ফোরকও সরবরাহ করেছিল সে।
২৫ বছর বয়সের সোহেল মাহফুজ বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার বাসিন্দা রেজাউল করিমের ছেলে। নসরুল্লাহ ছাড়াও শাহাদাত, রিমন-সহ আরও বেশ কয়েকটি নামে পরিচিত বাংলাদেশ ও ভারতের ওয়ান্টেড এই জঙ্গি। এক হাত বোমায় উড়ে যাওয়ায় তার পরিচিতি রয়েছে হাতকাটা সোহেল নামেও। জেএমবি-র হয়ে একটি হামলার সময় ককটেল ছোড়ার সময় সোহেল মাহফুজের হাত উড়ে যায়।
গত কয়েক বছর ধরেই সোহেল মাহফুজ নামটি নিয়ে পুলিশের খাতায় নাম ছিল তার। এই জঙ্গির গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে চলেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন জঙ্গি ডেরাতে অভিযানের সময় বহু বার মাহফুজের নাম উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন মৌলভী বাজারের জঙ্গি ডেরা ঘিরে ফেলে তখন সেখানে থাকা আরও এক জঙ্গি মুসা কথা বলেছিল এই সোহেল মাহফুজের সঙ্গে।
বাংলাদেশ পুলিশের রাজশাহি রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশিদ হোসেন সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, “সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক তছনছ করা গিয়েছে। তারা আর উত্তরাঞ্চলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।” পুলিশ জানিয়েছে, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা সোহেল উত্তরাঞ্চলে নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করছিল। ইদে ওই এলাকাতে জঙ্গিদের নাশকতার পরিকল্পনার ছিল বলেও পুলিশের কাছে আগাম তথ্য ছিল। তবে পুলিশের তৎপরতায় জঙ্গিরা কোনও অঘটন ঘটাতে পারেনি। সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা আরও দুর্বল হয়ে গেল বলে দাবি পুলিশের।
ভারতের খগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে সোহেল মাহফুজ জড়িত থাকার বিষয়ে ভারতীয় গোয়েন্দাদের তথ্যের বিষয়ে ডিআইজি এম খুরশিদ হোসেন বলেন, “সোহেল মাহফুজ-সহ জেএমবি-র অন্তত দু’ডজন নেতা ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ-র টার্গেটে রয়েছে। জঙ্গি সোহেলকে খোঁজে ভারতেও তল্লাশি চলছিল।”
বাংলাদেশে গত বছরের ১ জুলাই হোলি আর্টজান বেকারিতে হামলার পর থেকে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েকটি জেলাতে জঙ্গিদের ডেরাতে অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানগুলোতে নব্য জেএমবি-র আর এক চাঁই তামিম চৌধুরী খতম হয়েছে। খতম হয়েছে জঙ্গি মুসা-সহ বেশ কয়েক জন। সব শেষে শনিবার ভোরে তারা গ্রেফতার করল আরও এক মোষ্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি চাঁইকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy