নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় সাংসদ ও তাঁর বাহিনীর হাতে প্রধানশিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্তের লাঞ্ছনার ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিল বাংলাদেশের হাইকোর্ট। দুই বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও আশিসরঞ্জন দাসের বেঞ্চ বুধবার রায়ে বলেছে— তদন্ত রিপোর্টে দোষীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ।
মাস তিনেক আগে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক প্রৌঢ় শ্যামলকান্তি বাবুর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে প্রকাশ্যে তাঁকে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়। অভিযোগ, স্কুলের কমিটি দখলে ব্যর্থ হওয়ার পরে জাতীয় পার্টির স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের বাহিনীই প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম-বিরোধী মন্তব্য করার গুজব ছড়ায়। এর পর ১৩ মে কয়েকশো উত্তেজিত লোক শিক্ষককে ঘেরাও করে। দোষীকে শাস্তি দিতে আসেন সাংসদ। সকলের সামনে প্রথমে তাঁকে থাপ্পড় মারেন ওসমান। তার পর কান ধরে ওঠবোস করতে বলেন। লাঞ্ছিত শিক্ষক ওঠবোস করতে করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। তাঁকে টেনে তুলে ফের ওঠবোস করানো হয়। ঘটনার ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যমে। অসুস্থ শিক্ষককে ঢাকায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্কুল কমিটি তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করলেও শিক্ষা দফতর সেই নির্দেশ খারিজ করে কমিটিকেই ভেঙে দেয়। জুলাইয়ে নারায়ণগঞ্জে ফিরে ফের শিক্ষকতা শুরু করেন শ্যামলবাবু।
এ ঘটনার পরে সাংসদের শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। মন্ত্রী-সাংসদেরা সংসদেও এই দাবি জানান। ঝড় ওঠে সোশ্যাল সাইটগুলিতেও। বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষ কান ধরে নিজেদের ছবি টুইটার-ফেসবুকে আপলোড করে লেখেন— সরি স্যার। নারায়ণগঞ্জে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য সাংসদ সেলিম সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, তিনি কোনও ভুল কাজ করেননি। ধর্ম অবমাননাকারীকে শাস্তি দিয়েছেন মাত্র। তিনি হস্তক্ষেপ করে ‘লঘু শাস্তি’ না-দিলে গণপ্রহারেই মারা যেতে পারতেন ওই শিক্ষক।
স্কুলের পক্ষে থানায় অভিযোগ দায়ের না-হলেও আদালত স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পুলিশকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলে।
নারায়ণগঞ্জের ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ নামে একটি নাগরিক সংগঠনের দাবি, তদন্তের নামে প্রহসন করেছে পুলিশ। এমনকী লাঞ্ছিত শিক্ষকের বয়ানটুকুও নেয়নি তারা। এর পর তদন্ত রিপোর্টে পুলিশ জানায়, সাংসদের বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ মেলেনি। ৭ অগস্ট সরকারি আইনজীবী হাইকোর্টে ওই রিপোর্ট পড়ে শোনান। তাতে বলা হয়, ‘‘প্রধানশিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্ত ও স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান শুধু পরিস্থিতির শিকার।’’ এর পর ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ হাইকোর্টে ফের একটি মামলা করে এক জন বিচারকের নেতৃত্বে তদন্ত করার আর্জি জানান। সেই মামলার শুনানি শেষে বুধবার হাইকোর্ট পুলিশকে কার্যত ভর্ৎসনা করে ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy