ছবি সৌজন্যে: বাংলা ট্রিবিউন
শত্রুরা এখন সন্ত্রাসবাদী হয়ে আক্রমণ করছে। কিন্তু, তাদের সে চেষ্টা সফল হবে না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এই দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করব। স্বাধীন বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের কোনও স্থান নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহিদ মিনার চত্বরে আয়োজিত জঙ্গিবিরোধী মানববন্ধনে এমন কথাই বললেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা মন্ত্রকের ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সোমবার বেলা ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত এই মানব বন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। রাজধানী সহ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ৪০-৫০ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী এই মানব বন্ধনে অংশ নিয়েছেন।
রাজধানীতে এ মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে শহিদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ সহ অন্য স্কুল -কলেজ-মাদ্রাসাগুলিতে। এই মানব বন্ধনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলিও অংশ নিয়েছে।
শহিদ মিনারের মানব বন্ধনে অংশ নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুনুর রশিদ প্রমুখ। সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ সাধারণ মানুষও উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সতর্ক করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে জঙ্গি তৎপরতা দেখতে পেলেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাব। আইন না মানলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেব।
আরও পড়ুন: গুলশন হামলার এক মাস, বাংলাদেশে রুখে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষ
মানব বন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, বর্তমানে দেশ একটি সঙ্কটময় অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই যে ভাবেই হোক এ সঙ্কটজনক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে। তার জন্য সকলকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। জঙ্গিবাদ ইস্যুতে রাজনীতিকদেরও এক হয়ে কাজ করতে হবে। না হলে দেশকে রক্ষা করা যাবে না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র মানব বন্ধনে বলেন, লেখাপড়া শেখার জন্য বাবা-মা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে, আমরা তাঁদের মুখ উজ্জ্বল করব, দেশের মুখ উজ্জ্বল করব। কিন্তু আমাদের মতোই মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গাতে এসেও বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। আজ দেশের হাল ধরার বদলে তারা অকালে জীবন দিচ্ছে। আমরা সেই বিপথগামী ভাইদের ফেরাতে চাই। দেশে আর যেন একটাও হত্যাকাণ্ড না ঘটে।
এ দিকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ফাহিম বলেন, আমরা ছাত্র-শিক্ষক এক যোগে জঙ্গিবাদ বিরোধী আন্দোলনে কাজ করে যাচ্ছি। এই বাংলায় জঙ্গিদের ঠাঁই নেই। জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও একইসময়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববন্ধনে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, জঙ্গিবাদ রুখতে ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। জাতীয় সঙ্কটে এক হয়ে কাজ করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তিনি।
এ দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, সাংস্কৃতিক জাগরণই রুখতে পারে জঙ্গিবাদ। এ জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পুরনো ঢাকাকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বিপথগামী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। এ ছাড়া তিনি বলেন, স্বাধীন দেশে জঙ্গিবাদের কোনও ঠাঁই নেই।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম জঙ্গিবাদ থেকে শিক্ষার্থীদেরকে ফেরাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং সে সম্পর্ককে সুসম্পর্কে রূপ দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।
অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, জঙ্গিবাদ দমন করতে হলে সাংস্কৃতিক আন্দোলন দরকার। সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এ সমাজ সঠিক পথে ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজি আনিস আহমেদ মানববন্ধনে বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী, আমাদের পুলিশ যেমন আমাদের শক্তি, ঠিক তেমনই আমাদের যত পাবলিক ইউনিভার্সিটি, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি রয়েছে এবং অন্যান্য স্কুল কলেজের যতো শিক্ষার্থী রয়েছেন, তারাও আমাদের শক্তি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ সহ যত আন্দোলন হয়েছে সব আন্দোলনে অন্যতম শক্তি ছিল শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজ, আর তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান’।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, সত্যটা কী জানার চেষ্টা কর, ইতিহাস জানার চেষ্টা করো। অনলাইনে যা দেখবে তার সব সত্যি ধরে নেবে না।
অন্য দিকে বনানীর সড়কে কর্মসূচিতে অংশ নেন অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম খান। মানব বন্ধনে তিনি বলেন, দেশের যুব সমাজকে রক্ষা করতে আজকে আমাদের এই মানব বন্ধন। কুচক্রীদের দেখানো পথ থেকে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে।
ফার ইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতেও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মানব বন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় জঙ্গিদের ঠাঁই হতে দেব না। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ করেন।
সৌজন্যে: বাংলা ট্রিবিউন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy