অসহায়: শরণার্থী শিবিরে শিশু কোলে মা। ছবি: রয়টার্স।
চুক্তির উপর ভরসা নেই। তাই মায়ানমারের উপর অবিলম্বে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করে বাংলাদেশ।
গত কাল বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে এই অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ এইচ মামুদ আলি। পাশাপাশি নযাদিল্লিতে অবস্থিত ওআইসি (অর্গানাজাইশেন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ)-র রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে নৈশাভোজেও বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন তিনি। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ভোটের বছরে শাসক দল আওয়ামি লিগ চাইছে রোহিঙ্গা-সমস্যার সমাধান নিয়ে মায়ানমারের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব হাতে কলমে অগ্রগতি হোক। কয়েক মাসের মধ্যে অন্তত কয়েকশো রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরাতে পারলে ঘরোয়া রাজনীতিতে অনেকটাই সুবিধা হবে হাসিনার। সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, সুষমা তাঁকে জানিয়েছেন— নয়াদিল্লি ঢাকাকে এ ব্যাপারে সর্বতো সহযোগিতায় প্রস্তুত।
বাংলাদেশের সঙ্গে মায়ানমারের সাম্প্রতিক চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০০ জন করে প্রতি সপ্তাহে ১৫০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর ফেরত যাওয়ার কথা। দু’দেশের মধ্যে বোঝাপড়া অনুযায়ী চলতি মাসেই এই প্রত্যাবর্তন শুরুর কথা। কিন্তু না-আঁচালে বিশ্বাস নেই— এমনটাই আশঙ্কা করছে ঢাকা। বিশেষত এই চুক্তি রূপায়ণের ব্যাপারে এখনও নির্দিষ্ট কোনও দিন ক্ষণ বাংলাদেশকে জানায়নি মায়ানমার। তা ছাড়া চুক্তিতে রয়েছে এই ‘ফিরে যাওয়া’ হবে স্বেচ্ছামূলক।
রোহিঙ্গা শিবিরের অনেকেই বলছেন— মায়ানমারে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা হলে, জীবিকার ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে তবেই তাঁরা ফেরার কথা ভাববেন। কোনও ক্রমে ধাক্কা দিয়ে যে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না, সে কথা চুক্তিতেও স্পষ্ট বলা রয়েছে। মায়ানমার সরকার ঘরে ফেরা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার দায়িত্বও নিয়েছে। রাখাইনে তাদের জন্য শিবির তৈরির কাজ শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে বলেও তারা ঘোষণা করেছে। কিন্তু চলতি পরিস্থিতিতে কত জন শরণার্থী স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তা ছাড়া চুক্তির সময়ে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর হাতে ফেরার ১৩০০ রোহিঙ্গা জঙ্গির একটি তালিকা তুলে দিয়ে ময়ানমারের বিদেশ মন্ত্রক তাদের ফেরত পাঠাতে বলেছে। এ বিষয়টিকেও কালক্ষেপণের কৌশল বলে মনে করছে ঢাকা।
সব মিলিয়ে যথেষ্ট চাপে রয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। গত কাল নৈশাভোজে ইসলামিক রাষ্ট্রগুলির দূতদের কাছেও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী। তিনি বক্তৃতায় এই দেশগুলির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জে মায়ানমারের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। শরণার্থী পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুল সহায়তাও করেছে। রোহিঙ্গাদের সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া এবং তাদের নিরাপদ বাসস্থান দেওয়ার জন্য ওআইসি-দেশগুলির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিবিরকেও মায়ানমারের উপর চাপ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন মামুদ আলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy