Advertisement
E-Paper

বাংলাদেশে সন্ত্রাস-ষড়যন্ত্র! সমস্যাটা একা বাংলাদেশের নয়

শর্ট সার্কিট হলে আগে মেইন সুইচটা অফ করতে হয়। নইলে আগুন ছড়ায়, গ্রাস করে সব দিক। অতিরিক্ত তৎপরতাতেও বাগে আনা দায়। বাংলাদেশে ৫ জুন সকাল পৌনে সাতটায় নৃশংসতার আগুন জ্বলল চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে।

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ১৯:২৬

শর্ট সার্কিট হলে আগে মেইন সুইচটা অফ করতে হয়। নইলে আগুন ছড়ায়, গ্রাস করে সব দিক। অতিরিক্ত তৎপরতাতেও বাগে আনা দায়। বাংলাদেশে ৫ জুন সকাল পৌনে সাতটায় নৃশংসতার আগুন জ্বলল চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে। বাড়ি থেকে একশো গজ রাস্তা পেরিয়ে ছ’বছরের পুত্রকে স্কুলবাসে তুলতে এসেছিলেন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। তিন আততায়ী আচমকা মোটরসাইকেলে উদয় হয়ে তাঁকে কুপিয়ে খুন করে উধাও। বেলা বাড়তে দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায়। মুদিখানার মালিক সুনীল গোমস দোকান সামলাচ্ছিলেন। ৬৫ বছরের একনিষ্ঠ খ্রিষ্টান। সামনেই গির্জা। আততায়ীর হামলায় তিনিও নিমেষে মৃত্যুতে মিশলেন। ৭ জুন সকাল সাড়ে ন’টায় ঝিনাইদহের নলডাঙা গ্রামের হিন্দু পুরোহিত আনন্দগোপাল গাঙ্গুলি মেঠো পথ ধরে সাইকেলে মন্দিরে যাচ্ছিলেন। শুনশান রাস্তায় নির্বিরোধী মানুষটাকেও রেহাই দেয়নি সন্ত্রাসীরা। একইভাবে মোটরসাইকেলে এসে তাঁর প্রাণ কেড়ে নিয়ে চলে যায়।

জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি বিরোধী অভিযানে সফল পুলিশ সুপার বাবুল। তাঁর জন্যই জেএমবি প্রধান মোহম্মদ জাভেদকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। তিনি যে সন্ত্রাসীদের টার্গেট হবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। সন্ত্রাসীরা জানে, তাঁর স্ত্রীর প্রাণ নেওয়া সহজ। তিনি সুরক্ষিত নন। তাঁর সুরক্ষার ব্যবস্থা হল না কেন? বাবুল কী ভেবেছিলেন, তাঁর অভিযানে চট্টগ্রাম জঙ্গি মুক্ত! আর কেউ কিছু করতে পারবে না? ধারণাটা ভুল। বাবুলের স্ত্রীর মৃত্যুই তার প্রমাণ। জঙ্গিরা প্রত্যাঘাতে জানিয়েছে, তারা শুধু চট্টগ্রামে নয়, আছে সর্বত্র।

নাটোর আর ঝিনাইদহে দু’জন সংখ্যালঘুকে খুন করার অভিপ্রায়টাও পরিষ্কার। সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার। তারা যাতে শঙ্কায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। হত্যার উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা নিখুঁত। ৪৮ ঘন্টায় তিনটি খুন তিন জায়গায়, প্রায় একইভাবে। তিনটেই সফট টার্গেট। বাধা পাওয়ার কোনও কারণ ছিল না। প্রত্যেকটি অপারেশনের সময়টাও একই। তিরিশ থেকে চল্লিশ সেকেন্ড। তিন জায়গায় তিনটি করে মানে ন’টি লোক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায়। তাদের ধরা গেলেই কি সমস্যা মিটবে? উৎসটা জানা না গেলে, মেইন সুইচটা না নেভালে আগুন ছড়ানোর আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যাবে।

এই ভয়টাই পাচ্ছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। বাংলাদেশের কারণেও তিনি উদ্বিগ্ন। তাঁর অভিজ্ঞতা, গত ছ’মাসে ইসলামিক স্টেট বাংলাদেশ, আমেরিকা, বেলজিয়াম, মিশর, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, লেবানন, পাকিস্তান, রাশিয়া, তুরস্কে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। তাতে নিহত পাঁচশোর বেশি। এটা স্পষ্ট, সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট বা আইএসের এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা এসব আক্রমণ পরিচালনা করেছে। আইএস নিয়ে আন্তর্জাতিক ঝুঁকি কমেনি বরং বাড়ছে। আইএস কৌশলগত ভাবে এখনও দুর্বল নয়। আন্তর্জাতিক জোটের অভিযানেও ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের তেমন ক্ষতি হয়নি। আইএসের অর্থ বা অস্ত্র কোনওটাই হ্রাস পায়নি।

অন্য অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশের এই বিপদ ঘরে নয়, বাইরে। নিস্তার পাবে না ভারতও। জঙ্গিদের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছাড়াতে বেশি সময় নেয় না। উদারতার রাস্তায় বাংলাদেশ উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছতে চাইছে। জঙ্গিরা সেটা চায় না। তাদের উদ্দেশ্য শান্তি আর প্রগতির বিনাশ। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর আকাশেও বিপদ হিসেবে দেখা দিচ্ছে মৌলবাদ।

আরও খবর...

বাংলাদেশে ব্যাপক ধরপাকড়, ‘সাঁড়াশি অভিযানে’ আটক হাজারেরও বেশি

Terrorism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy