ওরা রমজানের আজানে সাড়া দেয় না। ইসলামের বাণী শোনে না। ভরসা ভালবাসায় নয়, রাইফেলে। পাথর হয়ে নিথর করে প্রাণ। অন্যদের মারে, নিজেরাও মরে। বাঁচতে নয়, মৃত্যুর দিকে ধায় রুদ্ধশ্বাসে। নির্বোধ তাই দেশাত্মবোধে আস্থা নেই। আবেগ ভরা বাংলাদেশকে ভরে গরলে। তাদের কাছে নির্মল প্রকৃতি, সবুজ প্রান্তর, প্রাণবন্ত নদী, চঞ্চল জনপদ অর্থহীন। আসক্তি কেবল অর্থে আর রক্তে। দারিদ্রে দমে গিয়েই কি শেষে এই পথে? মুক্তির রাস্তা খোঁজা অন্ধকারে? মানা যায় না। উপার্জনের জন্য ধর্মের দোহাই দিয়ে খুন! অবিশ্বাস্য। অভাবে চরিত্রহীনতা গ্রহণযোগ্য নয়। দুর্বলতার সুযোগে যারা তাদের হাতে বন্ধুক তুলে দেয় তাদের স্বার্থ আছে। মৌলবাদীদের ক্ষমতায় বাংলাদেশের মানুষ কী তা বরদাস্ত করবে! না, মৃত্যুর মিছিল দেখে শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলবে!
তা হয় না। সন্ত্রাস মেনে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। সার্বিক জাগরণ। সচেতনতায়-জনমত গঠন। ঐক্যের বন্ধন আরও দৃঢ়। বিশ কোটি মানুষের সমবেত প্রয়াস মিথ্যে হওয়ার নয়। পথ ভোলা বিপথগামীরা যদি ফেরে ভাল, নইলে চিরদিনের মতো বিদায়। রেহাই নেই। তাই তো হল। ১ জুলাই পবিত্র জুম্মাবারে সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হয়ে প্রবেশ করল ঢাকার গুলশনের কাফেতে। মাতল হত্যা তাণ্ডবে। বাজি ধরল নিজেদের জীবন। নির্দ্ধিধায় রক্ত ঝরাল। একের পর এক লাশ লুটিয়ে দিল মাটিতে। অপ্রত্যাশিত আক্রমণে অসহায় বিদেশি অতিথিরা। খুশির মুহুর্তে বিনাশ ভাববে কী করে! এ ভাবে শেষ হতে হবে, কে জানত। সংস্কৃতিপ্রবণ বাঙালিও কী এত নিষ্ঠুর হতে পারে। রক্ত নদীতে পড়ে নিষ্প্রাণ দেহ। জঙ্গিদের মুখে সাফল্যের আলো। মনে স্বান্ত্বনা। মরেছে বিদেশি বেশি, বাংলাদেশি কম। এ বার দেশের মানুষও শিক্ষা নিক, মৌলবাদ না মানলে কী পরিণতি। দুনিয়া জানুক, বাংলাদেশের জঙ্গিরা কতটা সাংঘাতিক। সমীহ করুক নৃশংসতাকে। কোন জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের সহায়ক, খুঁজে বেড়াক, সোনার বাংলাকে ভালবাসার দরকার নেই। ভয় পাক। যত ভয়, তত জয়, ভয়ঙ্করতায় শিউরে উঠুক বিশ্ব, নির্বাসনে শান্তি, অন্ধকারে উন্নয়ন। বিরতি প্রগতির। এগোন বন্ধ। কেবল পিছু হাঁটা।
আরও পড়ুন: একটা করে খুন করেই আইএস দফতরে ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছিল জঙ্গিরা!
জঙ্গিদের হিসেবে ভুল। চিনতে পারেনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তাঁর নির্ভীকতায় নাশকতার বিনাশ শুধু সময়ের অপেক্ষা। মুহূর্তে সেনা তলব, সন্ত্রাসীরা শেষ। সাতের মধ্যে ছ’জনের মৃত্যু, একজন গ্রেফতার। পার পায় নি কেউ। সেনা অপারেশন ষোল আনা সফল। সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান অনেক আগেই শুরু, ৬৪ জেলাতেই চিরুনি তল্লাশি। গ্রেফতার হাজারে হাজারে। চাপ কাটাতেই কী হামলা। নিরাপত্তাহীন সন্ত্রাসীদের মুক্তি কোথায়। র্যাব, বিজেবি’র জালে পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে। উদ্ধার পেতে মরিয়া। সে রাস্তা কই। উদ্ধার পেতে পাল্টা আক্রমণের প্রয়াস।
জঙ্গি দমন অভিযানে হাসিনা একা নন, পাশে সারা দেশ। সঙ্গী বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়াও। সন্ত্রাস শেষ করতে তিনিও বদ্ধপরিকর। দল নয়, দেশ আগে। ক্ষমতার মোহ ভুলে মমতার বন্ধন। হাসিনা-খালেদা বরাবরই একে অপরের বিরুদ্ধে। মতে মিল নেই, কাজে দূরত্ব। দেশের বিপদে তাঁরা কিন্তু এক। ১৯৮৭তে সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিভেদ ছিল না দু’জনের। তাঁদের অভিন্ন আন্দোলনে দুর্বার তখন বাংলাদেশ। গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ১৯৯১এর ৩ মার্চ নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯৬তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাশ গণতন্ত্রের। এ বার মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে। দেশ বাঁচানোর যৌথ অঙ্গীকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy