আগুন দেখে রাজমহল হোটেলের ওপর থেকে চার বছরের ছোট্ট ফতেমাকে বুকে জড়িয়ে হুটোপাটি করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছিলেন কিশোরী মা আনিকা তবসসুম। দুয়ার জুড়ে দাউদাউ আগুন। লকলকে সেই শিখা সিঁড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রাণপণে চিৎকার করছেন মা— ‘বাঁচাও, বাঁচাও!’ আগুনের প্রাচীরের ও ধারে অনেক মানুষ। কিন্তু কেউই এগোতে পারছেন না। আগুন টপকে এগোনোর তোড়জোড় করছিলেন দমকলকর্মী সবুজ খান। কিন্তু নিমেষে আগুন গ্রাস করে নিল মাকে। সন্তান কোলে নিয়ে ঢলে পড়লেন তবসসুম।
বুক চাপড়ে কেঁদেই চলেছেন ওই দমকলকর্মী। কপালে হাত ঠুকে বলছেন, ‘‘আর একটু... আর একটু সময় পেলে কাছে পৌঁছে যেতে পারতাম। এ ভাবে চোখের সামনে জ্বলে মরতে হত না মা আর শিশুকে।’’
গলির পরে তস্য গলি। মোড়ের মাথায় শয়ে শয়ে লোকের ভিড় ঠেলে পৌঁছনো গেল ‘ওয়াহিদ ম্যানসন’-এর সামনে। দমকল বাহিনী তখনও ভেতরে আগুন নেভাচ্ছেন। রাস্তার ওপর পড়ে হাজার হাজার ছোট ছোট পারফিউমের সিলিন্ডার। সে সব মাড়িয়ে কিছু মেয়ে পুরুষ কান্নাকাটি করতে করতে খুঁজে চলেছেন প্রিয়জনেদের। অনেকের হাতে ছবি। দমকলকর্মী আর পুলিশের পায়ে ধরছেন। পুলিশ তাঁদের তুলে পরামর্শ দিচ্ছে, ‘‘হাসপাতালে যাও, সেখানে খুঁজে দ্যাখো!’’ কেউ শুনছেন, কেউ নয়। কেঁদেই বুক ভাসাচ্ছেন তাঁরা।