Advertisement
০৪ মে ২০২৪

চলে গেলেন প্রথম ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’, শোকে মুহ্যমান বাংলাদেশ

‘বাংলাদেশ আমি তোমাকে ভালবাসি।’ প্রায় ৩৮ বছর আগে এক জীবন্ত কিংবদন্তি এই কথাটা বলেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নামে একটা নতুন দেশ যে তৈরি হয়েছে, এই নতুন দেশটা যে অসামান্য সম্ভাবনায় মোড়া, সেই কথাটাই গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তিনি।

হাতির পিঠে চেপে বাংলাদেশে সফর মহম্মদ আলির। ১৯৭৮ সালে।

হাতির পিঠে চেপে বাংলাদেশে সফর মহম্মদ আলির। ১৯৭৮ সালে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ১৭:১৪
Share: Save:

‘বাংলাদেশ আমি তোমাকে ভালবাসি।’

প্রায় ৩৮ বছর আগে এক জীবন্ত কিংবদন্তি এই কথাটা বলেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নামে একটা নতুন দেশ যে তৈরি হয়েছে, এই নতুন দেশটা যে অসামান্য সম্ভাবনায় মোড়া, সেই কথাটাই গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছিলেন, বাংলাদেশের অপূর্ব প্রকৃতিতে বুঁদ হয়ে গিয়েছিলেন, আর বলেছিলেন, ‘‘আমেরিকা যদি আমাকে তাড়িয়েও দেয়, তা হলেও আমার আর একটা দেশ রইল।’’

কিংবদন্তিটা এখনও জীবিত। ভবিষ্যতেও জীবিতই থাকবে। কিন্তু মানুষটা আর রইলেন না। মহম্মদ আলির প্রয়াণে তাই মুহ্যমান বাংলাদেশ।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা। বছর চারেক কাটতে না কাটতেই তুমুল টালমাটাল আর সাংবিধানিক সঙ্কটের মুখে পড়তে হল বাংলাদেশকে। বঙ্গবন্ধু খুন হয়ে গেলেন। সেনা অভ্যুত্থান আর অসাংবিধানিক কার্যকলাপে বাংলাদেশ জেরবার। দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে এবং বাংলাদেশের নামটা গোটা বিশ্বকে চেনাতে মহম্মদ আলির চেয়ে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর আর কে-ই বা হতে পারতেন সেই সত্তরের দশকে? দক্ষিণ এশিয়ায়, আরব দুনিয়ায়, আফ্রিকায়— সর্বত্র তখন প্রবল উন্মাদনা সেই মার্কিন বক্সারের নামে। বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হতে তিনি রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু লিওন স্পিংসের সঙ্গে বক্সি রিং-এ ফয়সলাটা সেরে ফেলার পরই বাংলাদেশ যাবেন বলে স্থির করেছিলেন। স্পিংসের কাছে সে লড়াইয়ে হেরে যান মহম্মদ আলি। বিশ্ব হেভিওয়েট খেতাব হাতছাড়া হয়। ভেঙে পড়ছেলিনে বক্সিং-এর ঈশ্বর। বলেছিলেন বাংলাদেশ যাবেন না। পরাজিত বক্সারকে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করতে চাইবেন না বলে মনে হয়েছিল তাঁর। কিন্তু যাঁরা আলিকে বাংলাদেশে নিয়ে য়েতে চাইছিলেন, তাঁরাও নাছোড়। বার বার তাঁরা আলিকে বুঝিয়েছিলেন, হিমালয় প্রমাণ সাফল্যের মাঝে একটা হার কিছুই নয়। বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বে তাঁর জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র কমেনি।

স্ত্রী ভেরোনিকা আর কিছুটা সংশয় সঙ্গে নিয়েই ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিমানবন্দরে নেমেছিলেন মহম্মদ আলি। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সঙ্গে ছিলেন শুধু ভেরোনিকা। সংশয়টা আর ত্রিসীমানাতেও ছিল না। কারণ মহম্মদ আলিকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় সে দিন ২০ লক্ষ মানুষের সমাবেশ হয়েছিল।

আরও পড়ুন:

চলে গেলেন ‘দ্য গ্রেটেস্ট’

অত লাফিও না, মহম্মদ আলিকে তো দেখনি

সস্ত্রীক আলির আপ্যায়নে ১৯৭৮-এর সেই টালমাটাল বাংলাদেশও কোনও ত্রুটি রাখেনি। গোটা দেশ ঘুরিয়ে দেখানো হয় কিংবদন্তি বক্সারকে। সিলেটের চা বাগান, চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকা, কক্সবাজারের অসামান্য সৈকত, হ্রদের কিনারে নয়নাভিরাম রাঙামাটি, বাঘসঙ্কুল সুন্দরবন— বাংলাদেশ তার সব আকর্ষণ উজাড় করে তুলে ধরেছিল আলির সামনে। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনও হয়েছিল। যেখানে যাচ্ছিলেন, সেখানেই জড়ো হয়ে যাচ্ছিল হাজার হাজার মানুষ। বাংলাদেশের সরকারও নানা ভাবে সম্মানিত করেছিল আলিকে। তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল তখনই। কক্সবাজারে জমি দেওয়া হয়েছিল বাড়ি করার জন্য, তাঁর নামে একটি স্টেডিয়ামের নামকরণও হয়েছিল।

বাংলাদেশ থেকে এক অসামান্য অভিজ্ঞতা নিয়ে আমেরিকা ফিরেছিলেন আলি-ভেরোনিকা। তাঁর বাংলাদেশ সফর নিয়ে যে তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছিল, তা সাড়া ফেলে দিয়েছিল আমেরিকা-ইংল্যান্ডে। তথ্যচিত্র দেখে মার্কিন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বাংলাদেশের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হবে মার্কিন সাহায্যের পরিমাণ।

৩৮ বছর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে যে নিবিড় বাঁধনে জড়িয়েছিলেন কিংবদন্তি বক্সার, জীবনের শেষ দিন পর্যন্তও তা আলগা হয়নি। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, বাংলাদেশকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বার বার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ আমি তোমাকে ভালবাসি’— এ কথাটা শুধু কথার কথা ছিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Muhammad Ali Bangladesh Close Relation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE