Advertisement
E-Paper

রক্তস্নানের এতটুকু চিহ্ন বাঁচিয়ে রাখতে নারাজ গুলশনের সেই বাড়ি

ফার্সি ‘গুল’ বাংলায় গোলাপ। ‘শন’ হচ্ছে বাগান। ঢাকার নতুন এলাকা গুলশন সত্যিই গোলাপ বাগান ছিল ১ জুলাইয়ের আগে। পাশেই মহাখালিতে দোকান বাজার হোটেল রেস্তোরাঁর হই হুল্লোড়। গুলশন শুনশান শান্ত। শুধু থাকার নয়, অফিস দূতাবাসের জায়গাও। একই ধাঁচে গড়ে উঠেছে বনানী উত্তরাও। কোলাহলে বিহ্বল হতে হয় না।

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ১৫:৩৯

ফার্সি ‘গুল’ বাংলায় গোলাপ। ‘শন’ হচ্ছে বাগান। ঢাকার নতুন এলাকা গুলশন সত্যিই গোলাপ বাগান ছিল ১ জুলাইয়ের আগে। পাশেই মহাখালিতে দোকান বাজার হোটেল রেস্তোরাঁর হই হুল্লোড়। গুলশন শুনশান শান্ত। শুধু থাকার নয়, অফিস দূতাবাসের জায়গাও। একই ধাঁচে গড়ে উঠেছে বনানী উত্তরাও। কোলাহলে বিহ্বল হতে হয় না। শান্তিতে একটু হাত-পা ছড়িয়ে থাকা। আঁকা ছবির মতো বাড়ি, আর্কিটেক্টদের কৃতিত্বে, নির্মাণ কর্মীদের নৈপুণ্যে। কে জানত, সেখানেও বারুদের গন্ধ ছড়াবে। রক্ত গড়াবে। শঙ্কার মেঘ উড়বে! অভিজাত গুলশনে, জঙ্গি হামলার পরেও কিন্তু ঘর ছাড়েনি কেউ। বলেনি, আর এখানে নয়, চল অন্য কোথাও। কবরস্থানের নৈঃশব্দ নামেনি। অচলাবস্থা গ্রাস করেনি। স্বাভাবিকতা থমকায়নি। প্রত্যয় নিয়ে প্রত্যেকে প্রহার গুনেছেন অপরাধের শেষ রেখাটুকু মুছে যাওয়ার।

গুলশনের হোলি আর্টিজান বেকারি ছিল দু'দণ্ড অবকাশের আস্তানা। টুকটাক খাওয়ার সঙ্গে একটু গল্পগুজব। সময়, অর্থ খরচে লোকসান নেই, উশুল ষোল আনা। বিদেশিরাও কাজ সেরে সেখানে। সঙ্গীদের সঙ্গে নিরিবিলিতে সময় কাটানো। ১ জুলাইও খুশির মেজাজেই সান্ধ্য উদযাপন বিদেশিদের। আচমকা ছদ্মবেশে জঙ্গি প্রবেশ। সবাইকে বন্দি করে তর্জন গর্জন। সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় পুলিশ। রেস্তোরাঁ ঘিরে সেনা কমান্ডোরা। জঙ্গিদের পালানোর পথ রুদ্ধ। বাঁচার রাস্তা নেই ধরে নিয়ে মেরে মরার সংকল্প। তাদের হাতের একে-২২ রাইফেলটা ছিল কিছুটা স্বংয়ক্রিয়, অনেকটা ম্যানুয়াল। যার প্রধান নির্মাতা রোমানিয়া। জঙ্গিরা গুলি ছুড়েছে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে। তাতেই মৃত্যু ২২ জনের। যার মধ্যে ১৭ বিদেশি, ২ পুলিশ, ৩ বাংলাদেশি। বিদেশি রক্তে রেস্তোরাঁ রঞ্জিত করে বিশ্বের নজর কাড়তে চেয়েছিল জঙ্গিরা। বিশেষ করে জাপানি প্রকৌশলীদের মেরে ঢাকার মেট্রো রেলের কাজ বন্ধ করাটাই ছিল উদ্দেশ্য। সফল হয়নি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, জাপানি ইঞ্জিনিয়াররা ঢাকা মেট্টোর কাজ যেমন করছিলেন তেমনি করবেন। বাংলাদেশকেও প্রতিশ্রুতি মতো সব রকম সাহায্য দিয়ে যাবে জাপান। এটা ঠিক, গুলশনের নাশকতায় বিশ্ব শিউরে উঠেছে। আবার কিছু দিনের মধ্যে নিশ্চিন্তও হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জঙ্গি বিরোধী পদক্ষেপের গভীরতায়। কমান্ডো গুলিতে গুলশনেই ৫ জঙ্গির মৃত্যু। জখম হওয়ার পর আরও একজনের মৃত্যু হাসপাতালে। সেই শুরু। একের পর এক জঙ্গি ডেরায় হানা দিয়ে নিরাপত্তাবাহিনী জঙ্গিদের শিকড়ে কুঠারাঘাত করেছে।

জঙ্গি হানার পর হোলি আর্টিজান বেকারি বন্ধ হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। ১৩ নভেম্বর মালিকের হাতে সেটা ফিরিয়ে দেওয়া হল। আদালতের নির্দেশেই কাজটা করা হয়েছে। এত দিন রেস্তোরাঁয় সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এবার কি সকলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক শাদাত মেহেদি জানিয়েছেন, মর্মান্তিক স্মৃতিতে ক্ষতবিক্ষত রেস্তোরাঁটি আর একই জায়গায় থাকবে না। চলে যাবে গুলশনের নতুন জায়গায়। জমি নেওয়া হয়েছে। রেস্তোরাঁ নির্মাণে সময় লাগবে না। পুরোন রেস্তোরাঁয় গড়ে উঠবে নতুন বাড়ি। বাড়িটার ভবিষ্যত ঠিক হবে পরে। নব নির্মিত ভবনে অতীতের কোনও স্মৃতি আর অবশিষ্ট থাকবে না।

আরও পড়ুন: শান্তিতে পাকিস্তান তো বটেই, ভারতের থেকেও এগিয়ে বাংলাদেশ

Holey Artisan Bakery Bangladesh Gulshan ully reconstructed
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy