Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Bangladesh News

এর মধ্যেই ৪৩ লাখ গরিবের জীবন বদলেছে বাংলাদেশের ‘সমৃদ্ধি’ প্রকল্প

শুধু আগায় জল ঢাললে চলবে কেন, যত্ন নিতে হবে গোড়ায়। ঠিকঠাক সার আর পরিচর্যায় গাছ বাড়বে হু-হু করে। চোখ ধাঁধাবে ফুল-ফলে। বদলাবে অর্থনীতি। দারিদ্র অগ্রাহ্য করে মানুষ মাথা তুলবে আলোর দিকে। শূন্য মাটি সুফলা হয়ে প্রমাণ করবে, মানুষ সব পারে।

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১২:৩৩
Share: Save:

শুধু আগায় জল ঢাললে চলবে কেন, যত্ন নিতে হবে গোড়ায়। ঠিকঠাক সার আর পরিচর্যায় গাছ বাড়বে হু-হু করে। চোখ ধাঁধাবে ফুল-ফলে। বদলাবে অর্থনীতি। দারিদ্র অগ্রাহ্য করে মানুষ মাথা তুলবে আলোর দিকে। শূন্য মাটি সুফলা হয়ে প্রমাণ করবে, মানুষ সব পারে। তাদের হাতের গুণে শূন্য খেত সোনা উগরোয়। অভাবের সংসারে সুখের বান ডাকে। তারা নিজেরা বাঁচে অন্যদেরও বাঁচায়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনীতিটাই এরকম। তিনি শিকড় থেকে শিরে পৌঁছতে চান। তেলা মাথায় বেশি তেল ঢেলে ভাবেন না, এই তেল চুঁইয়ে পড়লে নীচের লোকেরা পাবে। তাঁর ফর্মুলা পরিষ্কার। অগ্রগতি উপর থেকে নীচে নয়, নীচ থেকে উপরে। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের ধারাতেই সমাজতন্ত্রের পথ কাটতে চান দেশের গভীর থেকে গভীরে। নজর তাদের দিকে, যাদের দিকে কেউ তাকায় না। যে সব মানুষগুলোর মরা-বাঁচাটাও হিসেবের বাইরে, তাদের তিনি উন্নয়নের মূল স্রোতে টেনে আনতে মরিয়া। প্রান্তিক মানুষরা যাতে বোঝে, সোনার বাংলাদেশটা তাদেরও। লুকিয়ে থাকা বা পালিয়ে বেড়ানো না, যথার্থ যোগ্যতায় ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা। সেই সুযোগ দিতেই চালু 'সমৃদ্ধি' প্রকল্প। সরকারের স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের কর্মসূচিতে জরাজীর্ণ জীবন সজীব হয়ে উঠছে দ্রুত। মুছে যাচ্ছে আগের গ্লানি। ভাঙা-চোরা রাস্তা ছেড়ে সোজা উন্নয়নের রাজপথে।

আরও পড়ুন, রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে মালয়েশীয় জাহাজ

বিকাশে স্বস্তি। বিবর্ণ জীবন বর্ণময়। নেই রাজ্য থেকে সব পাওয়ার রাজ্যে। না, এটা কোনও ম্যাজিক নয়, বাস্তব। শোষণ মুক্তি পরিশ্রমে সাফল্য হাতের মুঠোয়। টাকার অভাব নেই। দেওয়া হচ্ছে যার যতটুকু দরকার। কে কতটুকু পারবে জেনে নিয়ে হিসেব মতো সাহায্য। যাতে টাকা নষ্ট না হয়। ঋণের অর্থ ফেরতের সামর্থ থাকে।

ক্ষুদ্র ঋণ এনজিও দিয়েছে। সেখানে শর্ত ছিল কঠিন। টাকা নেওয়ার সাত দিন পর থেকে ফেরত দিতে হত। আসল না হলেও অন্তত সুদটা। সুদও কম ছিল না। ২৭ থেকে ৩৫ শতাংশ। ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি দূরের কথা, নিঃস্ব হয়েছে অনেকেই। ঋণ গ্রহীতাদের সুবিধা অসুবিধাটা দেখা হত না। কে কী কাজ করছে, তার রিটার্ন কত চিন্তা করত না। কাবুলিওয়ালার মতো টাকা দিয়েই সুদ চাওয়া। 'সমৃদ্ধি' প্রকল্পে সুদ সামান্য। যারা টাকা নিচ্ছে তাদের কাজের তদারকি ষোল আনা। বাধা এলে কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। উৎপাদনের উন্নতিতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।

আরও পড়ুন, নিম্ন মানের ওষুধ তৈরির দায়ে ৩৪টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল বাংলাদেশে

'সমৃদ্ধির' সাহায্যে পাল্টে যাচ্ছে অগুনন মানুষের জীবন। এ পর্যন্ত সমৃদ্ধ হয়েছে ৪৩ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা। এক বছর আগেও নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বিলকিস বেগমের চোখের জলই ছিল একমাত্র সম্বল। নদী ঘরে ঢুকে সব কেড়েছিল। গিলে নিয়েছিল বাড়িটাই। বেঘর হয়ে ঘুরে ঘুরে শেষমেষ বঙ্গোপসাগরে নতুন করে জেগে ওঠা চর এলাহী ইউনিয়নে আশ্রয়। কাঁচা বাড়িতে বসে পাকা জীবনের স্বপ্ন। সাহায্য করবে কে। বেসরকারি আর্থিক সংস্থা ঝুঁকি নিতে চায় নি। বিলকিসের কাছে পৌঁছেছে সমৃদ্ধি'র হাত। শুরু চাষবাস। ধান পাট নয়, সবজি ফলানো। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমাটো, লাউ ফলিয়ে আজ আর কাউকে পরোয়া নেই। পায়ের নীচের জমি শক্ত। শুধু বিলকিস বেগমের এলাকা কেন। হাতিয়া উপজেলার চানন্দি, হরণী, নিঝুম দ্বীপে সব ধূসরতা উধাও। চোখ ফেললেই সবুজ সমুদ্র। সবজি ভরা সবুজ খেত। ওষধি গাছও আছে। বাড়িতে গরু, ছাগল, ভেড়া মুরগি, হাঁস। পুকুর ভরা মাছ, এখন দরকার একটা হিমঘরের। খেত থেকে সরকারি বাজারে যাবে না, ঠাঁই হবে হিমঘরে। দর চড়লে আস্তে আস্তে ছাড়া হবে। তারাও চাইছে, চাহিদা বুঝে জোগান। ফসল ফেলনা নয়, মাটির দরে বিকোবে কেন।

ছবি: হেলভেতাস সুইস ইন্টারকোঅপারেশনের সৌজন্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh News Samriddhi Project
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE