Advertisement
১১ মে ২০২৪

নিখোঁজ বহু, খুঁজে ফিরছেন স্বজনেরা

সরকারি ভাবে উদ্ধার কাজ শেষের ঘোষণা করা হয়েছে শুক্রবার। তার পরেও বহু মানুষের খোঁজ মিলছে না ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে। প্রাথমিক তদন্তের পরে আগুন লাগার কারণ নিয়েও ধন্দে প্রশাসন।

 ওষুধ কিনতে বেরিয়ে আর ফেরেননি মা। ডিএনএ-র নমুনা দিচ্ছে ছোট্ট শানিন। শুক্রবার ঢাকায়। নিজস্ব চিত্র

ওষুধ কিনতে বেরিয়ে আর ফেরেননি মা। ডিএনএ-র নমুনা দিচ্ছে ছোট্ট শানিন। শুক্রবার ঢাকায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪০
Share: Save:

দগ্ধ ‘ওয়াহিদ ম্যানসন’-এর নীচের তলার একটি ঘরের মেঝেতে পড়ে হাজার হাজার প্রসাধনীর বোতল ও ক্যান। সেগুলি হাত-পা দিয়ে ঠেলে কিছু খুঁজে চলেছেন এক দল লোক। ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছেন তাঁরা। হাতে স্বজনদের ছবি। সেই সব বর্জ্যের স্তূপ এক বার এ-ধার থেকে ও-ধারে জড়ো হচ্ছে। কিছুটা পরেই ফের ফিরে আসছে এ-ধারে। কিন্তু মিলছে না কিছুই।

সরকারি ভাবে উদ্ধার কাজ শেষের ঘোষণা করা হয়েছে শুক্রবার। তার পরেও বহু মানুষের খোঁজ মিলছে না ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে। প্রাথমিক তদন্তের পরে আগুন লাগার কারণ নিয়েও ধন্দে প্রশাসন। সরকারি ভাবে আগুনে মৃতের সংখ্যা ৬৭ বলা হচ্ছে। কিন্তু নানা বেসরকারি সূত্র শতাধিক মৃত্যুর দাবি জানাচ্ছে। উদ্ধার হওয়া দেহগুলি পুড়ে আংরা হয়ে যায়, প্রায় কাউকেই চেনা যাচ্ছে না। তার মধ্যেও চুড়ি, আংটি বা হাতঘড়ির মতো সামগ্রী দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করে ৪৬টি দেহ তাঁদের স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শেষকৃত্যের জন্য। ১৫টি দেহ একেবারেই চেনার অযোগ্য হয়ে থাকায় সেগুলির নমুনা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সরিয়ে রাখা হয়েছে। তার পরেও বহু মানুষ এসে তাঁদের স্বজনদের নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়ে যাচ্ছেন প্রশাসনের কাছে। তাঁদের রক্ত ও মুখগহ্বরের টিস্যুর নমুনা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্যও তিন থেকে চার সপ্তাহ লাগবে।

ঘরে চার বছরের মেয়েকে রেখে মা বিবি হালিমা শীলা বেরিয়েছিলেন ওষুধ কিনতে। ফেরেননি। শীলার শিশুকন্যা শানিনের মুখ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে রেখেছে প্রশাসন। দু’দিন পেরোলেও ফেরেননি চকবাজারের ব্যবসায়ী হাজী মহম্মদ ইসমাইল। দোকান বন্ধ করে চুড়িহাট্টার পথ দিয়েই ফিরতেন তিনি। তাঁর ছেলে সোহরাব সব ক’টি হাসপাতাল ও মর্গ ঘুরেও বাবার খোঁজ পাননি। মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে আসা আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে আর্জি জানান, ‘‘আমার বাবাকে খুঁজে দিন!’’ ডিএনএ নমুনা দিয়ে রেখেছেন তিনিও।

প্রাথমিক তদন্তে আগুন লাগার কারণ নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। আগুনে বহু গাড়ি ও মোটরবাইক পুড়ে গিয়েছে। যে পিকআপ ভ্যানের সিলিন্ডার ফেটে আগুনের শুরু বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে সেটির সিএনজি সিলিন্ডার অক্ষত। তবে গাড়িটি প্রায় পুড়েই গিয়েছে। বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে, দু’টি ল্যাম্পপোস্ট ও কেব্‌ল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেলেও ‘ওয়াহিদ ম্যানসন’-এর সামনের ট্রান্সফর্মারটি আদৌ ফাটেনি। তা থেকে আগুনের ফুলকি বেরিয়েছিল মাত্র। তবে ওই বাড়িটি ও তার পাশের পোড়া বাড়িগুলির একতলা ও বেসমেন্টে একাধিক রাসায়নিকের গুদাম, প্রসাধনী ও লাইটারে ভরার গ্যাসের জার মোতায়েন থাকার প্রমাণ মিলেছে। সেগুলি থেকেই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। হাজার হাজার পারফিউমের ক্যান ফেটে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Calamities Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE