মহাঅষ্টমীর দিনটা প্রায় ঘরে আটকেই থাকতে হয়েছে। দুপুর থেকে ঢাকার আকাশের মেঘ সরেনি। সে কারণেই হয়ে ওঠেনি মায়ের মুখ দেখা। নবমীর দিনেও মেঘলা আকাশ— টুপুরটাপুর জল ঝরছে। কিন্ত আজ আর তোয়াক্কা করার উপায় নেই— কাল বিজয়া দশমী। মা তো ফিরে যাবেন। আর সে কারণেই আজ ঢাকার পুজো মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ঢল। আজ সবাই পথে। তবে পথে নামলেও মিলছে না পথের দেখা— মানুষ আর মানুষেই ভরপুর চার দিক।
পুরনো ঢাকার তাঁতিবাজার আর শাঁখারিবাজারের পুজোটা বেশ আলাদা— দশ-পনেরো ফুটের রাস্তা। সেই রাস্তার উপরেই বাঁশ-কাঠের অস্থায়ী মণ্ডপ। বেশ উঁচুতে— মণ্ডপের নীচে দর্শণার্থীদের হাঁটার পথ। বাজছে শব্দযন্ত্র— বিরাম নাই ঢাকঢোলের বাজনারও। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকেই যেন মানুষের ঢল নেমেছে— ধর্ম বা বর্ণের ভেদ নেই দর্শণার্থীদের। ভিড় সামলাতে হিমশিম হচ্ছেন পুলিশ-সহ আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনির সদস্যরা— তবু সকলের হাসিমুখ। তবে চোখের নজর কড়া— একটু সন্দেহ হলেই চেক ব্যাকপ্যাক বা ব্যাগের দিকে কড়া দৃষ্টি।
আরও পড়ুন
নজর কাড়ছে ধামরাই বণিক বাড়ির অষ্ট ধাতুর দুর্গা প্রতিমা

সন্ধ্যা ৭টার পর থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে দর্শণার্থীদের। —নিজস্ব চিত্র।
ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তেই পুজোর আয়োজন রয়েছে। রয়েছে হরেক থিমের আয়োজন। তার পরও পুরনো ঢাকার পুজো মানে কোথায় যেন একটু আলাদা। বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে থেকে ঢুকে যেতে হবে দশ ফুট চওড়া গলিতে। যতই এগনো ততই নতুন নতুন প্রতিমা। হাঁটছেন প্যান্ডেলের নীচের পথে। মাথার উপরের অস্থায়ী মণ্ডপের সামনে এসে একটু রয়ে-সয়ে দেখার সুযোগও কম। পিছন থেকে তাগিদ— ‘ভাই, এগোতে হবে।’
আর একই এলাকায় এতগুলো পুজোর আয়োজনও গোটা বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। ৪০ বা ৫০ গজের দূরত্বে একটার পর একটা পুজো দেখার সুযোগটাও ঢাকার তাঁতিবাজার বা লক্ষীবাজারে এত দর্শনার্থীর ঢল নামার প্রধানতম কারণ। পুরনো আমল থেকেই এই পুজোর বিবরণ চোখে পড়ে— তবে বেশ কিছুকাল থেকেও এখানে পুজোর আয়োজন বাড়ছে। এখানে মোট পুজো হয় ১৯ মণ্ডপে। এর বাইরেও রয়েছে অনেকগুলো স্থায়ী মন্দির। ঘরোয়া পুজোর উপাচারে এখানকার পুজোগুলি হয়।এমনকী এই আয়োজন ঘিরে এখন এসে গিয়েছে মেলার আমেজও। ময়রার জিলিপি বা গজা কচুরির প্রায় হারিয়ে যাওয়া স্বাদের খোঁজও মিলছে এখানেই।
এ সুযোগ কে আর ছাড়ে?
দেখুন ভিডিও