Advertisement
E-Paper

আপোস করোনি কখনই তুমি, বিদায় সৈয়দ শামসুল হক

আমারে দিয়াছো ব্যাধি নিরাময় অসম্ভব যার— সৈয়দ শামসুল হকেরই কবিতার পঙ‌্ক্তি। সেই ‘নিরাময় অসম্ভব ব্যাধিই’ তাঁকে নিয়ে গেল। এই যাওয়াটা শরীরের, তাঁর সৃষ্টির নয়। বাংলাদেশের ইতিহাস যিনি ধারণ করেছেন, যাঁর কলমে উঠে এসেছে বাঙালির দ্রোহ আর সাহস, তিনি থাকবেন। থাকবেন মিছিলের মুখ হয়ে তেরশো নদীর স্রোতধারায়। থাকবেন, কারন তিনি নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলতে পেরেছেন—

অঞ্জন রায়

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:৩০
ছবি: সাহিত্যিক আনিসুল হক।

ছবি: সাহিত্যিক আনিসুল হক।

আমারে দিয়াছো ব্যাধি নিরাময় অসম্ভব যার— সৈয়দ শামসুল হকেরই কবিতার পঙ‌্ক্তি। সেই ‘নিরাময় অসম্ভব ব্যাধিই’ তাঁকে নিয়ে গেল। এই যাওয়াটা শরীরের, তাঁর সৃষ্টির নয়। বাংলাদেশের ইতিহাস যিনি ধারণ করেছেন, যাঁর কলমে উঠে এসেছে বাঙালির দ্রোহ আর সাহস, তিনি থাকবেন। থাকবেন মিছিলের মুখ হয়ে তেরশো নদীর স্রোতধারায়। থাকবেন, কারন তিনি নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলতে পেরেছেন—

আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হ’লো ইতিহাস।

এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান ?

যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;

তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-

চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।

সৈয়দ শামসুল হক তাঁর সারাটা জীবন ছুঁয়ে থেকেছেন মানুষকেই। যে কারণে মানুষ আর মানুষের মিলিত উত্থান তাঁর কাছে প্রাণ পেয়েছে। বাংলাদেশের উত্তর জনপদের গণনায়ক নূরলদীনের কন্ঠকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন তাবত অন্ধকার, সামরিক শাসন আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে। তিনি সে কারণেই নূরলদীনের সারাজীবনে লেখেন— ‘জাগো বাহে, কোনঠে সবাই…..’। সেই আহ্বান ব্রহ্মপুত্র থেকে তিস্তায় সাড়া তোলে। সেই আহ্বানে কেঁপে ওঠে অন্ধকার অপশক্তির বুক। অন্য দিকে মানুষ যুথবদ্ধ হয় সেই আহ্বানে। হয় স্বপ্নের সমান। লন্ডনের ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর শরীরের চুড়ান্ত অবনতির কথা। তিনি ফিরে এসেছিলেন তাঁর দেশের মাটিতে- বাংলাদেশে। শেষ সময় পর্যন্ত দৃঢ় ছিলেন নিজের লেখা অক্ষরগুলোর মতোই। অসুখের কাছে আপোষ নয়, তাঁর লড়াইটাই জারি ছিল মৃত্যুর সময় পর্যন্ত।

সব্যসাচী লেখকের মৃত্যুতে শোকে ভাসছে বাংলাদেশ। সমাজের প্রতিটি অংশেই তাঁর জন্য শুধুই হাহাকার। বিকেল ৫ টা ২৬ মিনিটে তাঁর মৃত্যুর কথা জানার পর থেকেই সর্বত্র স্বজন হারানোর বেদনা। তাঁর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য লড়াই করে, সেই দেশের একজন লেখকের জন্য এমন সম্মানই উপযুক্ত। বুধবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত শহিদ মিনারে তাঁর মরদেহ থাকবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য। সেই শহিদ মিনার যেখানে হাজার হাজার বার উচ্চারিত হয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের অক্ষরগুলো, যেখানে তিনি বার বার উচ্চারণ করেছেন সাহসের মন্ত্র, সেখানে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু বাংলা ভাষা যত দিন থাকবে তত দিন তাঁর লেখা অমরত্ব নিয়ে থাকবে শহিদ মিনারের মিনারগুলো ছুঁয়ে। শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। তাঁর শেষকৃত্য হবে কুড়িগ্রামে। সেখানেই জন্মেছিলেন তিনি। আবারও সেই শিকড়েই ফিরে যাবেন বাংলা ভাষার অন্যতম শক্তিমান এই লেখক। যার হাতের কলমে সমৃদ্ধ হয়েছে আমাদের মাতৃভাষা। যাঁর লেখা আমাদের দিয়েছে অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস। যে সাহস থাকবে আরও শত শত বছর বাংলাদেশের হাত ধরে।

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাঁকে সব্যসাচী লেখক সম্বোধন করা হয়। মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান তিনি। সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কারটি পান।

সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও হালিমা খাতুনের প্রথম সন্তান সৈয়দ শামসুল হক। লেখকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। সেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এর পর তিনি ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। এর পর ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৫২ সালে জগন্নাথ কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তীতে স্নাতক পাশ করার আগেই ১৯৫৬ সালে সেখান থেকে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে বেরিয়ে আসেন। এর কিছু দিন পর তাঁর প্রথম উপন্যাস "দেয়ালের দেশ" প্রকাশিত হয়।

syed shamsul haque
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy