Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফতোয়া উড়িয়ে বাংলাদেশ জুড়ে বর্ণময় বর্ষবরণ

আশির দশকে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মানুষের বিবেকের ভূমিকা নিয়েছিল ‘ছায়ানট’-এর এই বর্ষবরণের আয়োজন।

ঢাকায় শোভাযাত্রা। —নিজস্ব চিত্র।

ঢাকায় শোভাযাত্রা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৫৬
Share: Save:

বটমূল থেকে প্রভাতী রাগমালা ডাক পাঠাল ঘরে ঘরে। আলো ফুটতেই ঘরের আগল টেনে মানুষ নামলেন রাস্তায়। আর নতুন বছরের প্রথম ভোরে ঢাকার সব সড়কের ঠিকানা যেন রমনা পার্ক, সুরাবর্দী উদ্যান, চারুকলা অনুষদ। প্রাণের উৎসব শুধু তো ঢাকায় নয়, যশোর, রাজশাহি, চট্টগ্রাম, সিলেটেও। লাল-সাদা নতুন পোশাক, মেয়েদের মাথায় ফুলের মুকুট, কপোলে যত্নে আঁকা বর্ষবরণের সম্ভাষণ— যেন তাচ্ছিল্যে উড়িয়ে দিল রাজনৈতিক প্রভাবশালী মৌলবাদী সংগঠনের ফতোয়া। রবিবার ফের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির উদ্‌যাপনে বাঙালিয়ানাকে যাচাই করে নিল বাংলাদেশ।

আশির দশকে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মানুষের বিবেকের ভূমিকা নিয়েছিল ‘ছায়ানট’-এর এই বর্ষবরণের আয়োজন। বেয়নেটের আস্ফালনে অন্তরের যে কথা খোলামেলা উচ্চারণ করা শাস্তিযোগ্য ছিল, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সুকান্তের সৃষ্টি ধার করে শিল্পীরা বিদ্রোহের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন সাধারণের কাছে। ফুঁসে ওটা প্রতিবাদ হার স্বীকারে বাধ্য করেছিল উর্দিধারী শাসকদের। কী আশ্চর্য, তার তিনটি দশক বাদেও রবিবারের অনুষ্ঠানে সেই প্রতিবাদের বার্তাই দিতে হয়েছে ছায়ানটের সভাপতি সনজিদা খাতুনকে! প্রতিবাদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অনাচারের বিরুদ্ধে। মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষকের যৌন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় সম্প্রতি পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে কিশোরী নুসরাত জাহানকে। বাঙালি ক্ষোভে ফুঁসছে। নিন্দায় গলা মিলিয়েছে। এ দিন সনজিদা বলেন, “চোখ মেললে বা কান পাতলে নিত্যই শিশু, নারী, বল-ভরসাহীন মানুষ, তথা সমগ্র মনবতার বিরুদ্ধে নির্মম আচরণের সংবাদ। নিয়ত মার খাচ্ছে সমাজের ধারণা। কোথায় যাচ্ছি আমরা? নিষ্কলুষ শিশু-সন্তান কোনও সমাজবাসীর অত্যাচারের শিকার হয় কী করে? কিছু মানুষ কি পাষণ্ড হয়ে উঠল!” অশীতিপর শিল্পীর প্রতিজ্ঞা— “আমরা যেন অন্যায়-অত্যাচারের নীরব দর্শকমাত্র না হয়ে থাকি। প্রতিবাদে, প্রতিকার সন্ধানে হতে পারি অবিচল— নববর্ষ এমন বার্তাই সঞ্চার করুক আমাদের অন্তরে।”

রবীন্দ্রনাথের ‘নৈবেদ্য’-র একটি বাক্য ছিল এ বারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য— ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’। ছায়ানট যেখানে শেষ করে, শোভাযাত্রার সূচনা করে ঠিক সেইখান থেকে যেন শুরু করে চারুকলা অনুষদ। ইতিমধ্যেই ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ শিরোপা পেয়েছে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। মেট্রো রেলের কাজ চলায় এ বার পথ বদলাতে হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার, কিন্তু মেজাজ তার বদলায়নি। মুখোশে রাজা-রানি, বৃক্ষচূড়ায় মা পাখি আর ছানারা, ডানা মেলা কমলাবরণ পেঁচা। তার পিছনে জীবনবৃক্ষ, দুই মাথার ঘোড়া, কাঠঠোকরা, ষাঁড়, বক, বাঘেদের আনাগোনা। সঙ্গে ছিল বাংলার ঢাক, আর তার বোলে নাচ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ঢাকার বর্ষবরণ এখন আর বটমূল আর চারুকলায় থমকে নেই। শহর জুড়ে নানা সংগঠনের নানা কর্মসূচি। আবার অসাম্প্রদায়িকতার এই উদ্‌যাপনও কেবল ঢাকায় বন্দি নেই। বস্তুত যশোরেই প্রতিবাদী মঙ্গলযাত্রার সূচনা। তার পরে চট্টগ্রাম ঘুরে ২৮ বছর আগে তা রাজধানীতে পৌঁছয়। চট্টগ্রামে হেফাজতের আমির কাল নববর্ষের ‘গানবাজনা, শোভাযাত্রা’-কে ধর্ম-বিরোধী তকমা দিয়ে তাতে অংশ না নেওয়ার ফতোয়া দেওয়ার পরেই তরুণেরা রাস্তায় নেমে সরব হয়েছিলেন। আজ তাঁরা দ্বিগুণ আগ্রহে ফতোয়া অগ্রাহ্য করে বর্ষবরণে মেতেছেন। একই ছবি অন্য শহরেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali New Year Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE