ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের মঞ্চে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ছবি: রয়টার্স।
দুই দেশ, এক সুর। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। সন্ত্রাস নস্যাতে তীব্র প্রতিবাদী। পাকিস্তানের জঙ্গিবাদ রফতানির প্রবণতাকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস। সার্কের অষ্টম সদস্য আফগানিস্তানের তেজটা আন্দাজ করা যায়নি আগে। তাদের সার্কের সদস্য হওয়ায় আপত্তি ছিল পাকিস্তানের। যুক্তি ছিল, দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার নয়, মধ্যপ্রাচ্যের। তারা দক্ষিণ এশিয়ার সংগঠনে ঢুকবে কী করে। আফগানিস্তানের পূর্ব দিকে চিন, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পাকিস্তান, পশ্চিম দিকে ইরান। উত্তর দিকে তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান। দক্ষিণে উঁচু মালভূমি, মরুভূমি। উত্তরে দীর্ঘ হিন্দুকুশ পর্বতমালা। সত্যিই তো দেশটা ঝুঁকে পশ্চিম এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। আবার এটাও ঠিক, পাকিস্তানকে আঁকড়ে আছে সবল ভাবে। সেখানেই যত গোলমাল। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত সব সময়ই অগ্নিগর্ভ। সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য। এটা পছন্দ পাকিস্তানের। যে ভাবে বাংলাদেশ-ভারতকেও সন্ত্রাসে মুড়ে রাখতে চাইছে, সেই ভাবে জঙ্গি যন্ত্রণায় নয়ছয় করতে ব্যস্ত আফগানিস্তানকে। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভারতের প্রতিবাদে নভেম্বরে পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত। পাকিস্তান সেটাকেই, উল্টো প্রচারে, দুনিয়ার সামনে হাজির করছে। বলছে, তিনটি দেশের অসহযোগিতায় সার্ক থাকবে না। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভারতের ধাক্কায় সার্কের ভাঙন অবশ্যম্ভাবী। নিজের দোষ কবুল করার সাহস নেই পাকিস্তানের। তারা সত্যিটা স্বীকার করলে ভাল করত। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি নষ্ট করছে তারাই। সেটা আর গোপন নেই। জন্ম দিচ্ছে নৈরাজ্যের। মুখে বলছে, শান্তি, উন্নয়ন আর সহযোগিতার কথা। এমন কাঁচা কূটনীতি বিশ্ব মানবে কেন। জন্মলগ্নেই তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশটা যখন উন্নয়নের ডানায় উড়ছে, তাদের অসহ্য ঠেকছে। মাটিতে যাতে আছড়ে পড়ে তার চেষ্টার কসুর করেনি। ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকায় সন্ত্রাসের আগুন জ্বালার ষড়যন্ত্র চালিয়েছে। আফগানিস্তানকে কবরস্থানে পরিণত করতে সন্ত্রাসকে কাজে লাগিয়েছে।
আরও পড়ুন: হাসিনাকে গ্রাম ঘুরিয়ে স্বপ্নের উড়ানে পথের ভ্যানচালক
এত কিছুর পরেও পাকিস্তানকে ছুঁড়ে ফেলা হয়নি। বাংলাদেশে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের দাবি উঠেছে। হাসিনা চুপ থেকেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি চলবে, সম্পর্কও থাকবে। এমন সদর্থক কূটনীতি আর কী হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই পাকিস্তানের শোধন চাইছে, বর্জন নয়। পাকিস্তান তার ভুল ব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সার্ক ভাঙতে রাজি নয় কোনও সদস্যই। সংগঠনটাকে শুধু কার্যকরী করার চেষ্টা। যাতে লক্ষ্য-বিচ্যুত না হয়ে ঠিক রাস্তায় এগোতে পারে।
সার্ক গড়ায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা বাংলাদেশের। সংগঠনটা তারা ভাঙতে দেবে কেন। সে কথাটাই জোর গলায় ইউরোপকে শোনালেন শেখ হাসিনা। স্যুইৎজারল্যান্ডের দাভোস কংগ্রেস সেন্টারে ৪৭তম ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে 'হারনেসিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন সাউথ এশিয়া' শীর্ষক আলোচনায় হাসিনা জানিয়ে দিলেন, সার্কের কার্যকারিতা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আট জাতির আঞ্চলিক সংস্থাটি খুব ভাল ভাবে সক্রিয় আছে। হাসিনার কথায় সভাকক্ষের অন্য সদস্যরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তাঁরা বুঝেছেন, কথাটা যখন হাসিনা বলছেন, অবিশ্বাসের কিছু নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy