১৯৯৬-এর ১ জুন ২১ সদস্যের মন্ত্রিসভা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন এইচডি দেবগৌড়া। ঠিক বাইশ দিন বাদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেবগৌড়া সরকারের আয়ু ছিল মাত্র দশ মাস। ওইটুকু সময়ে কীই বা করবেন। তাও করেছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তি। গোটা ভারত বিপক্ষে ছিল। দেবগৌড়া ভয় পেয়ে পিছিয়ে যান। তাঁর পাশে দাঁড়ান জ্যোতি বসু। এটা রাজনীতি, কূটনীতি নয়। বাঙালির মিলনাত্মক মহিমা। কন্যাসম হাসিনার প্রতি জ্যোতি বসুর পিতৃস্নেহ। বিশেষজ্ঞদের বারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিবাদ, অগ্রাহ্য করে গঙ্গা চুক্তি। সেটাই ছিল বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের মৈত্রীর অহঙ্কার। একই বছরে আফগানিস্তানে তালিবানি অন্ধকার। কাবুল তালিবানি দখলে। রাষ্ট্রপতি মোহম্মদ নাজিবুল্লাহকে ঝোলান হল ফাঁসিতে। ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না থামল ভয়ে। সাধারণ মানুষ প্রাণ ভয়ে পালাতে চাইল। বিশ বছরে বদলেছে দেশটা। সার্কের সদস্য হয়ে বাঁচার নতুন দিশা পেয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের হাত ধরে এগোতে চাইছে। অবস্থা এখনও তেমন ভাল নয়। রাষ্ট্রসংঘের বিচারে আফগানিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ। শিশুমৃত্যু সবচেয়ে বেশি। বেকার ৫০ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতি ৫০০ শতাংশ। ৫০ লাখ ঘরছাড়া। ১৪ লাখ ইরানে, ৯ লাখ পাকিস্তানের শরণার্থী। ৮৬৬ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলে ১০ লাখ ল্যান্ডমাইন পোঁতা।
আরও পড়ুন: সিলেটে জঙ্গি আস্তানায় বিস্ফোরণ, নিহত ৬
আফগানিস্তানে বসন্ত আসেনি। এসেছে বাংলাদেশে, ভারতে। দিল্লিতে বন্দনা শুরু ৭ এপ্রিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মোলাকাত। একের পর এক জমে থাকা চুক্তিতে সই। লাল কালি দিয়ে দাগানো তিস্তা চুক্তি। সে দিকেই সবার নজর। গাছে ঝুলে থাকা পাকা আমের মতো। বাংলাদেশ নাড়াচ্ছে। পড়ছে না। মোদী চাইলে পারতেন। আঁকসি দিয়ে টানলেই টুপ করে হাতে পড়ত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দীর্ঘ অসুস্থতার পর দিল্লির সংসদে হাজির। কাগজের কাজ সেরে রেখেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা চালিয়েছেন। পরিণতি কী। তিস্তা চুক্তি লাল সিগন্যালে আটকাবে, না গড়গড়িয়ে এগিয়ে দ্বিপাক্ষিক স্বাক্ষর আদায় করে নেবে।
বাংলাদেশ অস্থির। আর কত দিন অপেক্ষা করা যায়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-র ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফথরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “১১ বছর ধরে আমরা আশা করে আছি। আওয়ামি লিগের সরকার এসেছে। তাদের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক। তিস্তার পানিটা অন্তত পাব। এক ফোঁটাও পেলাম না। আমাদের সাফ কথা, হয় তিস্তা চুক্তি, নয়ত কিছু না।”
আলমগীরের দাবির মধ্যে দিয়ে গোটা বাংলাদেশের ব্যাকুল চাহিদাটা স্পষ্ট। তিস্তা চুক্তি আটকে থাকার দায় হাসিনার নয়। ভারতের দিক থেকেই এটা আটকে আছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও সব দিক খতিয়ে দেখছে। আর আশা নিয়ে বসে আছে বাংলাদেশ। সরকার, বিরোধী- সব পক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy