Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Bangladesh News

পদ্মাসেতু-কাণ্ডে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, প্রতিবাদ ইউনুস কমিটির

বাংলাদেশের অনেক স্বপ্নের পদ্মাসেতু। গঙ্গোত্রী থেকে নেমে আসা গঙ্গা দ্বিধাবিভক্ত হওয়ার পর যে অংশটা বাংলাদেশে ঢুকেছে, তার নাম পদ্মা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগাযোগ সহজ করতে এই পদ্মার উপরই তৈরি হচ্ছে স্বপ্নের সেতু।

অঞ্জন রায়
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৭:০৮
Share: Save:

বাংলাদেশের অনেক স্বপ্নের পদ্মাসেতু। গঙ্গোত্রী থেকে নেমে আসা গঙ্গা দ্বিধাবিভক্ত হওয়ার পর যে অংশটা বাংলাদেশে ঢুকেছে, তার নাম পদ্মা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগাযোগ সহজ করতে এই পদ্মার উপরই তৈরি হচ্ছে স্বপ্নের সেতু।
কিন্তু কাজ শুরুর পরপরই এই প্রকল্পে বড় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে, বরাত পেতে কানাডার এক নির্মাণ সংস্থা সরকারি উচ্চমহলে প্রচুর ঘুষ দিয়েছে। ২০১০ সালে অভিযোগ ওঠার পর থেকে এ নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক, মামলা-মোকদ্দমা চলেই আসছে। এত বিরাট একটা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সরকারকে বিপাকে পড়তে হয়েছে। এ বার সেই অভিযোগকে কানাডার আদালত কাল্পনিক বলার পরেই মোড় ঘুরে গেছে আলোচনার। এত দিন যে অভিযোগের তিরটা ছিল সরকারের দিকে, তা এ বার উল্টো দিকে ঘুরে গেছে। হাসিনা সরকার-সহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মূল তির বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ী মহম্মদ ইউনুসের দিকে। অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বানচাল করতে তিনিই নাকি কলকাঠি নেড়েছিলেন। উঠছে যড়যন্ত্রের অভিযোগও। ইউনুস ব্যক্তিগত ভাবে এ নিয়ে মুখ না খুললেও, তাঁর সংস্থা ইউনুস সেন্টার বিবৃতি দিয়ে এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ডঃ ইউনুসের বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে কখনও কারও কাছে তিনি কোনও বিবৃতি দেননি বলেও দাবি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন, ভারত ভ্রমণে আমেরিকানদের ছাপিয়ে এক নম্বরে বাংলাদেশিরা

ইউনুস সেন্টার তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “পদ্মাসেতুর অর্থায়ন বন্ধে ড. ইউনূস ষড়যন্ত্র করেছেন বলে বিভিন্ন পর্যায় থেকে যে অভিযোগ উঠেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইউনূস সেন্টার।... প্রফেসর ইউনূস ২০১১ সাল থেকে বহুবার এই মর্মে বলে এসেছেন যে, তিনি বরাবরই বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন সমর্থক এবং এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে তার বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।”
২০১১ সালের গোড়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। বিশ্বব্যাঙ্ক ঋণের টাকা ছাড়ার আগেই দুর্নীতির অভিযোগটি ওঠে। ২০১১ সালে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করে দেয় বিশ্বব্যাঙ্ক। সে সময়ে সরকারের তরফ থেকে সেই আভিযোগ নাকচ করা হলেও বিশ্বব্যাঙ্ক তা আমল দেয়নি। বাংলাদেশ সরকারও এর পর বিশ্বব্যাঙ্ককে না বলে দেয়। নিজস্ব অর্থায়নেই দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ভিত্তিতেই এখন পদ্মার বুকে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিউ লাইফলাইন।

বিএনপি-সহ সরকার বিরোধীরা এর জন্যে সরকারকে দোষারোপ-গালমন্দ কম করেনি। সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোই শুধু নয়, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে সমলোচনার ঝড় উঠেছে বারবার। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয় বিগত মহাজোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। এক রকম নিষ্ক্রিয়ই করে রাখা হয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে। ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের ঘটনা নিয়ে বনানী থানায় সাত জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় সেতু বিভাগের প্রাক্তন সচিব মহঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকেও আসামী করা হয়। জেলেও যেতে হয় তাঁকে।
এর পর প্রায় চার বছর ইস্যুটি কিছুটা অগোচরে থাকলেও ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এল সম্প্রতি। পদ্মা সেতুর টেন্ডার দুর্নীতির যে অভিযোগে বিশ্বব্যাঙ্ক সরে গিয়েছিল, কানাডার আদালতে তা টেকেনি। সেখানকার আদালত ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগবিহীন’, ‘অনুমানভিত্তিক’ মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে। কানাডীয় আদালত রায় দিয়েছে, ‘পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়নি, অভিযোগগুলো রটনা’। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে কানাডার সংবাদমাধ্যম টরোন্টো স্টার জানিয়েছে, মামলার বিচারক নরডেইমার চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই রায় দিলেও গত ১০ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার, পর্যন্ত তা প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
কানাডার আদালতে রায় ঘোষণার পরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এ বার পাল্টা তোপের মুখে পড়েছেন পদ্মা প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগের পক্ষের সমালোচকরা। মিথ্যে অভিযোগের পিছনে নাম উঠে এসেছে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের। কৈফিয়ত তলবের দাবি উঠেছে। মিথ্যে অভিযোগে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ওই সব সমালোচকের বিচারের দাবিও উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে এবং উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, শাসকদলের মন্ত্রীরা বিশ্ব ব্যাঙ্কের পদ্মা সেতু-কাণ্ডের নেপথ্যে ঘুঁটি চালাচালির জন্যে মহম্মদ ইউনুসকে দায়ী করেছেন। অতীতে বরাবর এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী। কিন্তু কানাডার আদালতের রায়ের পর, তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে সমালোচনার ঝড় ওঠার পর, এখনও নীরব রয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন, মৃত্যুর দিকে পা বাড়াচ্ছি, ফেসবুকে ঘোষণা করে আত্মঘাতী উঠতি মডেল

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের অভিযোগ, একা ইউনুস নন বিশ্বব্যাঙ্ককে সরিয়ে দিতে ভূমিকা নিয়েছিলেন তত্কালীন মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টনও।
হিলারি ক্লিন্টন এবং মহম্মদ ইউনুসের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও। তিনি ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, “আমার মায়ের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার সরকারের সুনাম নষ্ট করতেই বিশ্বব্যাঙ্ক পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগ তুলেছিল। সে সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন বাংলাদেশ সরকারকে শায়েস্তা করতে এ সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করতে নির্দেশ দেন বিশ্বব্যাংককে। আমার মায়ের (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মুহাম্মদ ইউনূসের বারংবার তাগাদার অংশ হিসেবেই হিলারি এ কাজ করেছিলেন।” অর্থাত্, ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে হিলারিকে দিয়ে বিশ্বব্যাঙ্কে কলকাঠি নাড়ান ইউনুস, সরকার পক্ষের অভিযোগ এমনই। সজীব ওয়াজেদ জয় আরও লেখেন, “তার কারণে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর প্রকল্প বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। এই সেতুর ফলে লাভবান হবে বাংলাদেশের কয়েক কোটি মানুষ। আর এতে বদলে যাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। ইউনূস বিদেশি শক্তির সহযোগিতা নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চেয়েছিলেন।”
দুর্নীতির অভিযোগে সেই সময় মন্ত্রিত্ব হারানো যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল বলেন, “কানাডার আদালতের এই রায় প্রমাণ করে, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাকে জড়িয়ে বিশ্বব্যাঙ্ক যে অভিযোগ করেছিল তা মিথ্যা। বাংলাদেশে তৎকালীন বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি গোল্ড স্টেইন এবং বাংলাদেশের পত্রিকার অসত্য রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাঙ্ক যে কাল্পনিক অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিল, তা শুধু মিথ্যা নয়, ষড়যন্ত্রমূলক। আমি বিশ্বব্যাঙ্ক এবং বাংলাদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি।”

ট্রান্সপারেনসি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ অধ্যায়ের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, “দুর্নীতির অভিযোগে তারা কেবল পদ্মা সেতুতে অর্থায়নই বন্ধ করেনি, তারা দেশ ও জনগণের ওপর কালিমা লেপন করেছে। আমি মনে করি, এর জন্য সরকার সংক্ষুদ্ধ পার্টি হিসেবে বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে জবাব চাইতে পারে। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ওই অভিযোগের পেছনে অন্য কিছু কাজ করেছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।” এর আগে টিআইবি পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ও লেখক তারেক শামসুর রেহমান মনে করেন, পদ্মাসেতু ষড়যন্ত্রে ডঃ ইউনুসের কোনও যোগাযোগ থেকে থাকলে সরকারের তা প্রকাশ করা উচিত। তিনি সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবিও জানান।

এই সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনুস সেন্টারের অভিযোগ, “গত কয়েক দিন ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তার পুত্র প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, কয়েকজন মন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন সাংসদ সহ দেশের শীর্ষ আইন প্রণেতারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে, সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে, সংবাদ সম্মেলন করে এবং বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী বৈঠকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ সৃষ্টির নেপথ্যে থাকার জন্য নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে কঠোরভাবে অভিযুক্ত করে কটু ভাষায় বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আসছেন। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সম্ভাবনা বিষয়ে প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে কখনো কারো কাছে কোন বিবৃতি দেননি। আমরা প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে এই ভিত্তিহীন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

এ দিকে বাংলাদেশে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কথা তুলে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ করার কাজে জড়িতদের, তদন্তসাপেক্ষে, কেন আইনের আওতায় আনা হবে না- তা জানতে গত বুধবার রুল জারি করেছে বাংলাদেশ হাইকোর্ট।
বিচারপতি কাজি রেজা-উল হক ও বিচারপতি মহম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই রুল জারি করে। এছাড়া ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে ১৯৫৬ সালের এনকোয়ারি অ্যাক্টে কমিটি বা কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তাও সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে এই রুলে। জানতে চাওয়া হয়েছে, প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, যোগযোগ সচিব, দুদক চেয়ারম্যান ও আইজিপি-কে বিবাদী করে দু’সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আদালতের আদেশের আলোকে কমিটি বা কমিশন গঠনে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে- তার অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে ৩০ দিনের সময় দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এই রুল জারি করেছে আদালত। এ বিষয়ে আবার শুনানি হবে ২০ মার্চ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Muhammad Yunus Padma Bridge Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE