Advertisement
১১ মে ২০২৪

সংস্কার আটকে যাওয়ায় বৃদ্ধির পূর্বাভাসে কোপ এডিবি-র

বৃদ্ধির রথকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সংস্কারের দাওয়াই ছাড়া গতি নেই। ক’দিন আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন স্পষ্ট বলেছিলেন এ কথা। মঙ্গলবার সেই বার্তাই এল এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের কাছ থেকে (এডিবি)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৪৯
Share: Save:

বৃদ্ধির রথকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সংস্কারের দাওয়াই ছাড়া গতি নেই। ক’দিন আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন স্পষ্ট বলেছিলেন এ কথা। মঙ্গলবার সেই বার্তাই এল এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের কাছ থেকে (এডিবি)।

সংস্কার আটকে যাওয়ার কারণে চলতি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.৮% থেকে ৭.৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে তারা। এমনকী আগামী অর্থবর্ষের জন্য বৃদ্ধির পূর্বাভাসও ৮% ছোঁবে না বলেই মনে করছে। সে ক্ষেত্রেও গত মার্চে করা ৮.২ শতাংশের পূর্বাভাস কমিয়ে ৭.৮% করে দেওয়া হয়েছে।

এডিবির যুক্তি, সব শিল্পোন্নত দেশেই মন্দা চলছে। ফলে টান পড়েছে দেশের রফতানিতে। তার উপর এ বছর বর্ষাও ঠিকমতো হয়নি। তবে সব থেকে বড় কাঁটা আর্থিক সংস্কারের কাজ থমকে যাওয়া। এডিবি-র প্রধান অর্থনীতিবিদ শাঙ্গ-জিন ওয়েই বলেন, ‘‘দুনিয়া জুড়েই অর্থনীতির গতি আশানুরূপ নয়। পাশাপাশি, অর্থনীতির গতি বাড়াতে যে সংস্কার ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা জরুরি, তার এখনও অনেকটাই বাকি। তার উপর সেখানেও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার বাধা আসতে পারে।’’

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এনে নতুন করে লগ্নির প্রক্রিয়া শুরু করাই মোদী সরকারের সামনে এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। তা হলেই বৃদ্ধির হার বাড়বে। অরুণ জেটলি ও তাঁর অর্থ মন্ত্রক আবার তাকিয়ে আছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে। কারণ, সুদ কমলেই লগ্নি আসবে বলে জেটলির আশা। ২৯ সেপ্টেম্বর শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ নীতির পর্যালোচনায় বসবে। তার আগে রাজন জেটলির সঙ্গে দেখাও করেছেন। কিন্তু দিল্লি আসার আগে মুম্বইয়ে রাজন বলে এসেছেন, ‘‘আজ সুদ কমিয়ে, কাল কর ছাড় দিয়ে ‘জুগাড়’ বা ‘শর্টকাটে’ অর্থনীতি এগোবে না। তার স্বাস্থ্য ফেরাতে হলে সংস্কারের কঠিন কাজ করতে হবে। সেখানেই সমস্যা জেটলির। সংসদের বাধা কাটিয়ে সরকার সংস্কারের পথে এগোতে পারছে না।

আজ এডিবি-র অর্থনীতিবিদও মন্তব্য করেছেন, ‘‘নতুন কর ব্যবস্থা, জমি অধিগ্রহণে বাধা কাটানো, শ্রম আইনে সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সংসদে আটকে থাকায় অর্থনীতির গতি মন্থর হবে।’’ ইতিমধ্যেই চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে বৃদ্ধির হার কমেছে। এডিবি-র মতে, চাহিদা বা কেনাকাটা কমে যাওয়া, কারখানায় উৎপাদন, পরিষেবা ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া এবং রফতানিতে টানই এর জন্য দায়ী। এখান থেকে বৃদ্ধির হার বাড়াতে আটকে থাকা প্রকল্পের কাজ শুরু করা ও সংস্কার ছাড়া উপায় নেই।

তবে এডিবি-র রিপোর্ট অনুযায়ী মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে। অশোধিত তেলের দাম কমায় আমদানির খরচ কমেছে। কর বাবদ আয় ও বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। এগুলি ভাল দিক। কিন্তু শেয়ার বাজারে বিদেশি লগ্নি যতখানি এসেছে, তার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বেশি। তা ছাড়া, তেলের দাম বাড়লে যে মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়ার আশঙ্কা রয়ে গিয়েছে, সে কথাও বলেছে তারা।

রঘুরাম রাজন বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তিনি সুদের হার কমিয়ে দিলেই অর্থনীতির মঙ্গল হবে না। তাতে সাময়িক ভাবে আর্থিক বৃদ্ধির হার হয়তো বাড়বে। কিন্তু ভিত দুর্বল হলে ফের তা নেমে আসবে। যেমনটা ব্রাজিলে হয়েছে। তাই সবার আগে সংস্কারও জরুরি। আজ একই কথা বলেছে এডিবি। তাদের মতে, আর্থিক বছরের দ্বিতীয়ার্ধে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমাতে পারে। তার সঙ্গে আর্থিক সংস্কারের কাজ এগোলেই অর্থনীতিতে সঠিক অর্থে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE