Advertisement
০২ মে ২০২৪

সেনসেক্স ছুঁল ৩০ হাজার

তেজী বাজারে সেনসেক্স-নিফ্‌টি পৌঁছে গেল রেকর্ড অঙ্কে। বুধবার সেনসেক্স এক সময়ে ৩০,০০৭ অঙ্কে পৌঁছে ভেঙে ফেলে সর্বকালীন রেকর্ড। যদিও এই উত্থান শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি সূচক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৪১
Share: Save:

তেজী বাজারে সেনসেক্স-নিফ্‌টি পৌঁছে গেল রেকর্ড অঙ্কে। বুধবার সেনসেক্স এক সময়ে ৩০,০০৭ অঙ্কে পৌঁছে ভেঙে ফেলে সর্বকালীন রেকর্ড। যদিও এই উত্থান শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি সূচক। তা সত্ত্বেও দিনের শেষে সেনসেক্স ২৯,৯৭৪.২৪ অঙ্কে থিতু হয়ে গড়েছে বাজার বন্ধকালীন সর্বকালের নজির। পিছিয়ে নেই নিফ্‌টিও। আগের দিনের থেকে ২৭.৩০ পয়েন্ট বেড়ে এই দিন পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে বাজার বন্ধের সময়ে তা দাঁড়ায় ৯,২৬৫.১৫।

এই দিন বিশেষ করে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং মারুতির শেয়ার দরের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি সূচকের পারাকে উপরের দিকে ঠেলে তুলতে সাহায্য করেছে। রিলায়্যান্সের শেয়ারের দাম ৩.১৯ শতাংশ এবং মারুতির শেয়ার ৪.৪ শতাংশ বেড়ে যায়।

আজ বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার ঋণনীতি পর্যালোচনার ফলাফল জানাবে। নীতি ফিরে দেখতে বুধবার থেকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলের নেতৃত্বে শীর্ষ ব্যাঙ্কের মনিটারি পলিসি কমিটি দু’দিনের বৈঠকে বসেছে। ঋণনীতিতে পটেল সুদ কমানোর পথে হাঁটেন কি না, সে দিকেও তাকিয়ে আছে বাজার

এই দিন টাকার দামও গত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অঙ্কে ঠেকেছে। ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম এই দিন এক লাফে বেড়ে যায় ১৬ পয়সা। প্রতি ডলারের দাম এসে দাঁড়ায় ৬৪.৮৭ টাকা। ব্যাঙ্ক এবং রফতানিকারীদের তরফে ডলার বিক্রির জেরেই বেড়ে যায় তার জোগান। ফলে কমতে থাকে দাম। পাশাপাশি, টাকার উত্থানে ইন্ধন জুগিয়েছে শেয়ার বাজারের উত্থান। বিশেষ করে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি এ দিন শেয়ার কিনতে ভিড় করায় বেড়ে যায় টাকার চাহিদা ও তার দাম। কারণ, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতে ডলার বেচে টাকায় পরিণত করেই শেয়ার কেনে। পাশাপাশি, পাউন্ড ও ইউরোর সাপেক্ষেও বেড়েছে টাকার দাম। দিনের শেষে প্রতি পাউন্ডের দাম দাঁড়ায় ৮০.৯৭ টাকা (আগের দিন ছিল ৮১.৩০), ইউরো ৬৯.২৬ টাকা (আগের দিন ৬৯.২৮)। জাপানি ইয়েনের তুলনায় অবশ্য পড়েছে টাকা।

দীর্ঘ দিন ধরে শেয়ারের দামে প্রায় কোনও সংশোধন ছাড়াই টানা বেড়ে চলেছে সূচক। বাজারে বড় মাপের সংশোধন বা ‘কারেকশন’ অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল বলে ইতিমধ্যেই মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সূচক পড়ার কোনও লক্ষণ এখনই দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা। তাঁদের মতে, ভারতে শেয়ার বাজার এখন বুল-দের দখলে। তাই বাজারের পতন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেছেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই। যেমন, অ্যাক্সিস মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এবং রেনেসাঁ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজারের ডিরেক্টর পঙ্কজ মুরারকা বলেন, ‘‘দেশের আর্থিক উন্নতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে সূচকের উত্থানে।’’ আবার অনেকের মতে, নিফ্‌টি ছ’মাসে ১০ হাজার অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলতে পারে।

শেয়ার বাজারে বড় মাপের পতনের সম্ভাবনা আপাতত নেই বলেই মনে করছেন প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে। ভারতে শেয়ার বাজার চাঙ্গা হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ কাজ করছে বলে মনে করছেন তিনি। যেমন: প্রথমত, এই মুহূর্তে কেন্দ্রে একটি স্থায়ী এবং মজবুত সরকার রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিশেষ করে চারটি রাজ্যে বিধানসভার সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর কেন্দ্রে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিক সংস্কারের পথ এ বার অনেক প্রশস্ত হয়েছে। তৃতীয়ত, বড়় নোট বাতিলের পরে এ বার কেন্দ্র কর আদায় আগের বারের থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। অতিরিক্ত ওই টাকা দেশের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া ক্রমশ বাড়ছে টাকার দাম।

আরও পড়ুন: বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী ব্রিটেনকে চাপ দিল্লির

তবে বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থার ২০১৬-’১৭ সালের আর্থিক ফল না-দেখে বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরি়টিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ। তিনি বলেন, সাধারণ ভাবে গড়ে শেয়ার প্রতি আয় বা পিই রেশিও (কোনও সংস্থার শেয়ার দরকে তার মুনাফা দিয়ে ভাগ করে পাওয়া অনুপাত) ১৬ থেকে ১৭ থাকার কথা। তা এখন ১৯ থেকে ২০-র মধ্যে রয়েছে। গত এক বছরে নিফ্‌টি বেড়েছে ১৫২৪ পয়েন্ট বা ২০ শতাংশের মতো। কমলবাবু বলেন, ‘‘তাই ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে সূচকের শীর্ষে থাকা সংস্থাগুলির গড় মুনাফা ২০ শতাংশের কম হলে শেয়ার বাজারের এই উত্থানের যৌক্তিকতাই বড় মাপের প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sensex Points BSE
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE